নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 13/05/2018
‘আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়–
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।’
মাত্র একুশ বছর বেঁচে ছিলেন সুকান্ত ভট্টাচার্য (১৫ আগস্ট ১৯২৬ – ১৩ মে ১৯৪৭)। সে হিসেবে অনেকেই তাঁকে বলেন কিশোর কবি। বয়সে কী আসে যায়। অল্প বয়সের সাহিত্যেই সুকান্ত ফুটিয়ে তুলেছেন গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা, রোষ, স্বপ্ন আর সংগ্রাম। এমনকি বাংলা কাব্য সাহিত্যে রবীন্দ্র, নজরুলের পর যে কজনের নাম সর্বাধিক উচ্চারিত তাঁদেরই একজন সুকান্ত। আধুনিক অনেক কবিই সুকান্ত দ্বারা হয়েছেন প্রভাবিত। আজ কিশোর কবি সুকান্তের প্রয়ান দিবস।
শুরুতেই লেখা কবিতার লাইনগুলো সুকান্তর কালজয়ী কবিতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় `আঠারো বছর বয়স` থেকে নেওয়া। কবিতাটি তিনি লিখেছিলেন মাত্র ১৬ বছর বয়সে! ভাবা যায়!
কবিতার ভাষায় সুকান্ত েবলেছেন আঠারো বছর বয়সের দায়বদ্ধতা। আঠারোর শক্তি। অন্যের জন্য কিছু না কিছু করার তাগিদ এদেরই সব থেকে বেশি। বয়সের দোষ। বয়সটাই এমন যে। আঠারো বছর বয়সের তরুণ-তরুনীরা পারে না এমন কোন কাজ নেই। আঠারো মানে শুধু একটা সংখ্যা নয়। আঠারো একটি প্রতীক। এটা কোন বয়সের সীমারেখা নয়,আঠারো একজনের মনের মাপকাঠি। জীবন থেকে সহস্র বছর কেটে যাক।
সুকান্তর ভাবনার প্রতিচ্ছবি আমরা দেখতে পেয়েছি তাঁর রাজনৈতিক জীবনের। তিনি শুধু একজন কবিই ছিলেন না । ছিলেন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। তিনি কবিতাকে শুধু সাহিত্যের পাতায়ই বন্দী করে রাখেননি। গণমানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। তাঁর কবিতা গণমানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। পাঠ করা যায় রাজপথে। যে কারণে তাঁকে ‘গণমানুষের কবি’ বললেও ভুল হবে না। যদিও সমালোচকরা বলেন , তিনি কবিতাকে স্লোগানে রুপান্তরিত করেছেন। এই সমালোচনা যে সত্যি নয়, তা তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু, প্রসাদগুণ, শব্দচয়ন, উপস্থাপন ও আঙ্গিক বিচারেই পরিস্কার।
১৯৪১ সালের দিকে সুকান্তের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। একবছরের মাথায় একজন সক্রিয় কর্মী হিসাবে ছাত্র রাজনীতিতে আবির্ভূত হন। বয়স তখন আঠারো পার হয়নি! ‘জনরক্ষা’ সমিতিকে কেন্দ্র করেই তিনি পার্টির প্রচার ও সাংগঠনিক কাজে নিয়মিত যুক্ত থাকেন। ১৯৪৩ সালে কমিউনিস্ট পার্টির উদ্যোগে ‘শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সেবা-স্বাধীনতা’র আদর্শে যে ‘কিশোর বাহিনী’ নামক সংগঠন গড়ে ওঠে, সুকান্ত ছিলেন ওই দলের নিবেদিত প্রাণ কর্মী। সেই সময় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ পাওয়া কোনো সহজ ব্যাপার ছিল না। মাত্র ১৭ বছর বয়সে, ১৯৪৪ সালে পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন। যার প্রভাব পরে তার শিক্ষা জীবনেও। ১৯৪৫-এ অনুষ্ঠিত প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তিনি কৃতকার্য হতে পারেন নি। ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় সেখানেই তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে।
মনোনিবেশ করেন সাহিত্য আর রাজনীতিতে। পরীক্ষার খাতায় অকৃতকার্য হলেও সাহিত্যের খাতা ক্রমেই ভরে উঠতে শুরু করে। পার্টির সদস্য পদ লাভের বছর, অর্থাৎ ’৪৪ সালে তাঁর সম্পাদনায় ‘আকাল’ নামক একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দাবদাহ স্তিমিত হয়ে এলেও ভারতবর্ষে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে মন্বন্তর ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। যার অনিবার্য় ফল হিসেবে ইতিহাসে ‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’ খ্যাত ১৯৪৩ সালে দূর্ভিক্ষ, ’৪৭-এর ‘দেশ ভাগ’ খ্যাত সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে ভারত-পাকিস্তান ভাগের ঘটনা ঘটে। এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে সুকান্তের কলম শাণিত হয়ে ওঠে।
অকালপ্রয়ানে নিজের মেধার সবটুকু মেলে যেতে পারেন নি সুকান্ত। পারলে হয়তো নব উদ্যামে আমাদের আরও বেশি শানিত করতেন। বলা যায় প্রতিভা বিকাশিত হওয়ার আগেই আমরা হারিয়েছি কিশোর কবিকে।
বাংলা ইনসাইডার/ এমআরএইচ/ জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭