ইনসাইড পলিটিক্স

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে কত দিন লাগে?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/05/2018


Thumbnail

কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকারের জন্য বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণার পরও এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন শুরু করেছে। দ্বিতীয় দফায় দ্বিতীয় দিনে আন্দোলনে আবার রাস্তা, রেলপথ এবং সড়কপথ বন্ধের ঘটনা ঘটেছে। সারাদেশে এই আন্দোলন আবার দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে সবাই। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে দ্বিতীয় দফায় কোটা আন্দোলন শিবির নিয়ন্ত্রিত। শিবিরের নেতৃত্বে এবং নিয়ন্ত্রণে এই আন্দোলন চলছে, এই অভিমত আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও অনেক মন্ত্রী ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আন্দোলনের নাটাই শিবিরের হাতে থাকলেও এর সঙ্গে বিপুল সাধারণ শিক্ষার্থী জড়িত রয়েছে। তাঁদের কাছে এই দাবি যৌক্তিক। কোটা বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির বিলম্বের পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে। শিবির এই অসন্তোষকে আন্দোলনের দিকে নিয়ে যেতে চাইছে।

প্রধানমন্ত্রী গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা গত ৭ মে তে আবার অল্টিমেটাম দেওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে কতদিন লাগে? আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী একজন নেতা বলেছেন, ‘আমারা ডেকে ডেকে সমস্যা ঘাড়ে তুলে নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরপরই যদি প্রজ্ঞাপন জারি করা হতো, তাহলে নতুন করে আন্দোলন গড়ে ওঠার সুযোগ থাকতো না।’ ঐ নেতা বলেন, ‘কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি হলে, নিশ্চিত ভাবেই তা আদালতে চ্যালেঞ্জ হতো। তখন সরকারের দায়দায়িত্ব থাকতো না। সরকারের একাধিক মন্ত্রী মনে করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতায় বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের আগে সরকারের সামনে একটি সংগঠিত শক্তিকে দাঁড় করানো হয়েছে।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১২ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রথম দফায় শেষ হয়। এরপর জামাত-শিবির সারাদেশে এই আন্দোলনকে সংগঠিত করেছে। এই আন্দোলনের সার্বিক তত্ত্বাবধান করছে লন্ডন থেকে তারেক জিয়া। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশে দেড়শরও বেশি কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটিগুলো ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগের দিন ঢাকায় শাহবাগসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। জামাত-শিবিরের পরিকল্পনা স্পষ্ট, খুলনার নির্বাচনে বিএনপি হেরে যাওয়ার পর সারাদেশে একটা আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া।

একই সঙ্গে তারেক এই আন্দোলনে বিএনপি-জামাতপন্থী শিক্ষকদের যুক্ত হবার নির্দেশ দিয়েছেন। যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই স্পর্শকাতর স্থান, তাই এখানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভেবেচিন্তে ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে।

এরমধ্যেই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন করে আন্দোলন শুরুর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের গোপন কার্যক্রম রয়েছে, সেখানে গতকাল রোববার এবং আজ সোমবার বৈঠক হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলন অব্যাহত থাকলে, আবারও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামবে।

প্রথম যখন কোটা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখনও সরকার প্রথম এই আন্দোলনকে উপেক্ষা করেছিল। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো, আন্দোলনের গভীরতা বুঝতে পারেনি। উপাচার্যের বাড়ি ভাঙচুরের পর, সরকারের টনক নড়ে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার এক মাস পরও প্রজ্ঞাপন জারি না করাও একটা অমার্জনীয় ব্যর্থতা বলেই বিশিষ্টজনরা মনে করছে। প্রজ্ঞাপন জারিতে যত বিলম্ব হবে, তত সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সরকারের মধ্যে কেউ কেউ এরকম পরামর্শ দিচ্ছে, যেহেতু তাঁরা আন্দোলন করছে, তাই এখনই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে আন্দোলনকারীদের কাছে নতি স্বীকার করা। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং সরকারের অনেকেই বলছে, এখন জেদাজেদির সময় না। এই আন্দোলনের নেপথ্যের কারিগরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রথমে আন্দোলন বন্ধ করা প্রয়োজন। আর সেটা করতে হলে, প্রথমে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আলোকে প্রজ্ঞাপন জারি করা দরকার।



Read In English: https://bit.ly/2wBmbWV


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭