নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 16/05/2018
বর্তমান সময়ে রান্না বান্না কেবল ডেগ-ডেকচি কিংবা রান্নাঘর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নেই। এটি রীতিমতো একটি শিল্প হিসেবে স্বকীয় অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে সারা বিশ্বে। আর তাই, রিমোট চেপে টিভি চ্যানেল ঘোরালেই চোখে পড়ে দেশি বিদেশি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান। রান্নার অনুষ্ঠানও নান্দনিক হতে পারে, পেতে পারে জনপ্রিয়তা। তা প্রমাণ করেছেন অনেকেই। রমজানের সারা মাসজুড়ে টেলিভিশনে সবচেয়ে আলোচিত যে বিষয়, তা হলো এই রান্নার অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশে টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠানের পথিকৃৎ বলা হয়, টেলিভিশন উপস্থাপক এবং পুষ্টিবিদ সিদ্দিকা কবিরকে। রান্না করতে পছন্দ করেন অথচ সিদ্দিকা কবীরের বই নেড়ে চেড়ে দেখেননি এমন মানুষ বোধ হয় খুব একটা পাওয়া যাবে না বাংলাদেশে। ১৯৬৫ সালে তখনকার পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরে বাইরে’ নামে একটি রান্নার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁর টিভি উপস্থাপনার শুরু।
‘‘সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি’’নামে তাঁর টেলিভিশন শোটিও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় দর্শকদের কাছে। ২০১২ সালে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। ‘‘সিদ্দিকা কবীর’স রেসিপি’’ অনুষ্ঠানে তাঁর সাথে উপস্থাপনার কাজ করতেন শারমিন লাকি। এই অনুষ্ঠান গড়ে দিয়েছিল দুজন মানুষের মধ্যে নিবিড় এক সম্পর্ক। একজনের নাম বললে আরেকজনের নাম চলে আসে। লাকিও সময়ের জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা। আর এই জনপ্রিয় শব্দটি যোগ হয়েছে রান্নার অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই। সেই জনপ্রিয়তার একটু আঁচ দিলেন লাকি ,‘বাইরে গেলেই সমস্যায় পড়ি। সবার ধারণা আমি ফুড টেস্টার। অনেকে বলে, আমাকে দেখলে নাকি রান্নার কথা মনে হয় তাদের। কে কেমন রান্না করে সেটাই আলোচনার বিষয় হয়ে যায়। আরও যে কত নামে আমাকে মানুষ ডাকে তার শেষ নেই।’
অনেকে রন্ধনশিল্পী না হয়েও শুধু এসব অনুষ্ঠান উপস্থাপনার খাতিরে বনে গেছেন তারকা। আর তাইতো তাদের দেখে অনেক নাটক- সিনেমার তারকারাও নেমে পড়ছেন এসব অনুষ্ঠান সঞ্চালনায়। যেমন জনপ্রিয় উপস্থাপিকা মারিয়া নূর শুরু করেছেন ‘মারিয়ার রান্নাঘর’ নামে একটি অনুষ্ঠান। নাবিলার উপস্থাপনায় ‘এক ডিশ দুই কুক’ নামে একটি অনুষ্ঠানও বেশ জনপ্রিয়তা পায়। এছাড়া প্রতি বছরই পূর্ণিমা, দীপা খন্দকার, বাঁধন, নোভাসহ আরও অনেক জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা এসব অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে। আর এসব অনুষ্ঠানে থাকে তারকাদের ভীড়।
রান্নায় বিশেষ অবদান রাখায় কেকা ফেরদৌসি তো এখন রীতিমতো ‘টক অব দ্য টাউন’। ছোটবেলা থেকেই রান্না করতে পছন্দ করতেন কেকা। প্রবাসে থাকাকালীন প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের অনেক রান্না শেখার সুযোগ মেলে তার। দেশে ফিরে ঐতিহ্যবাহী রান্নাসহ অন্যান্য দেশের রান্নাকে কোন পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হন তিনি। প্রতিষ্ঠা করেন ‘কেকা ফেরদৌসীর রান্নাঘর’ নামে একটি স্কুলও। ১৯৯৪ সালে বিটিভিতে প্রথম রান্নার শো শুরু করেছিলেন কেকা ফেরদৌসী। প্রথম শোতে মাশরুমের একটা খাবার তৈরি করে দর্শকদের মুগ্ধ করেছিলেন তিনি। তখন মাশরুম এত জনপ্রিয় ছিলনা। তাই সেই শো অনেক সাড়া জাগিয়েছিল। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রমজান মাসে ইফতার নিয়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কাণ্ডারি তিনিই। কেকা ফেরদৌসিই সর্বপ্রথম ঋতুভিত্তিক রান্নার অনুষ্ঠান করেন। দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রান্না টিভি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে কেকা ফেরদৌসি শুরু করেন ‘দেশ বিদেশে রান্না’। ঐতিহ্যবাহী রান্নার খোঁজে তিনি পৌঁছে গেছেন দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে। সেখান থেকেও দর্শকের জন্য তুলে এনেছেন বৈচিত্র্যময় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরির কৌশল। বিশেষ দিনগুলোতে কেকা ফেরদৌসির পক্ষ থেকে থাকে ভিন্ন আয়োজন। বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবস থেকে শুরু করে রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী, সব আয়োজনেই তিনি প্রাসঙ্গিক রান্নাকে পরিচয় করিয়ে দেন দর্শকের সঙ্গে। এক টানা ২৫ বছরেরও বেশি সময় তিনি রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করে আসছেন। নানা রকম রেসিপির জন্য তিনি তেমন আলোচিত, কখনো পড়েন সমলোচনায়ও।
রান্না বিষয়ক অনুষ্ঠান করে পরিচিতি পেয়েছেন আলপনা হাবিব, দেশ ছাড়িয়ে তিনি বিদেশেও করছেন রান্নার অনুষ্ঠান। ভারতেও রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। রাহিমা সুলতানা রিতা, অনেকগুলো পরিচয় থাকলেও তিনি রান্নার অনুষ্ঠান করে পেয়েছেন একটু বেশিই জনপ্রিয়তা। উম্মাহ মোস্তফা, আফরোজা নাজনীন সুমি, এ সময়ের ব্যস্ততম রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপিকা তিনি। দেশের বেশ কিছু চ্যানেলে রয়েছে তার রান্নার অনুষ্ঠান।
কিচেন কুইন অফ বাংলাদেশ ডাকা হয় লবী রহমানকে। এই পদবি লবী রহমান অর্জন করেছেন তার রান্নার পারদর্শিতায়। এপার-ওপার দুই বাংলায় খ্যাত এই রন্ধন বিশেষজ্ঞ। তিনিও টেলিভিশনে রান্নার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা ও পরিচালনা করে পেয়েছেন জনপ্রিয়তা।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭