ইনসাইড থট

মাদকবিরোধী অভিযান চাই, ক্রসফায়ার নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 08/06/2018


Thumbnail

বাংলাদেশের মানুষের আবেগ-অনুভূতি যেন ইদানীং ভোতা হয়ে গেছে। কোনো ঘটনার ভিডিও না দেখলে, অন্তত অডিও না শুনলে তাদের অনুভূতি যেন জাগ্রত হয় না। গত ১৫ মে থেকে দেশে শুরু হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত ও কাঙ্ক্ষিত মাদক বিরোধী অভিযান। অভিযান শুরুর পর থেকে দেশজুড়ে দারুণ স্বস্তি নেমে এসেছে। আবার অভিযানের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনাও আছে। সমালোচকদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, মাদক বিরোধী অভিযানে লোকজনকে ধরেই মেরে ফেলা হচ্ছে। এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি নয়। অভিযানের প্রথম ২২ দিনে ক্রসফায়ারে ১৩৩ জন মারা গেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি। যদি ধরেই মেরে ফেলার অভিযোগ সত্যি হতো, তাহলে ক্রসফায়ারে মৃত্যুর সংখ্যাও ১০ হাজারের বেশি হতো। সংখ্যা যাই হোক, কোনো ক্রসফায়ারই গ্রহণযোগ্য নয়। টেকনাফের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা একরামের ক্রসফায়ারের পরও সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ছিল আর সব ক্রসফায়ারের মতই। কিন্তু ৫ দিন পর মৃত্যুর আগে টেলিফোনে পরিবারের সদস্যদের সাথে একরামের টেলিসংলাপ ফাঁস হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয় দেশজুড়ে। একরামের মেয়ের কান্না, স্ত্রীর আহাজারি ঘুম কেড়ে নেয় গোটা জাতির। সত্যি কথা বলতে কি সেদিন আমিও ঘুমাতে পারিনি। কিন্তু বাস্তবতাটা হলো, সেই টেলিসংলাপ ফাঁস না হলে, একরামের মৃত্যুও হারিয়ে যেতো, আরো সব ক্রসফায়ারের মতই। সবার আহাজারি শুনে মনে হচ্ছে, ক্রসফায়ার ঠিক আছে, কিন্তু ফোনটা অন করে করা হলো কেন? কেন এই অডিও ফাঁস করে জাতির ঘুম হারাম করা হলো? মনে রাখতে হবে যেটা অন্যায়, সেটা সবসময়ই অন্যায়; অডিও ফাঁস হোক আর না হোক। একটি মহল আবার ক্রসফায়ারকে সামনে এনে মাদকবিরোধী অভিযানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে। আমি শুরু থেকে প্রতিটি ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে। আমি চাই ক্রসফায়ার বন্ধ হোক। কিন্তু বিএনপি নেতাদের যখন ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সোচ্চার দেখি, অবাক লাগে। তারাই ক্রসফায়ার শুরু করলেন, এখন আবার তারাই এর সমালোচনা করছেন, বন্ধের দাবি জানাচ্ছেন। তারা সমালোচনা করতে পারবেন না, তা নয়; তবে তার আগে তাদের ভুল স্বীকার করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে।

যারা নানা অজুহাতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মাদক বিরোধী অভিযানের সমালোচনা করছেন; তাদের কাছে জানতে চাই, সত্যি করে বলুন তো আপনি কি মাদক বিরোধী অভিযান চান না, নাকি সরকারের বিরোধিতা করতে সব গুলিয়ে ফেলছেন? আগেই বলেছি, সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত অভিযান এই মাদকবিরোধী অভিযান। মাদকের ভয়াল থাবা ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের তরুণ প্রজন্ম, আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। এই মাদক ধ্বংস করে  দিচ্ছে কত পরিবার, আমরা টেরও পাই না। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের যে গতি অর্জন করেছে, তা ধরে রাখতে হলে তরুণ প্রজন্মকে কাজে লাগাতে হবে। কাজ না পেলে তারা হতাশ হবে, মাদক নেবে, দেশ ও পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে উন্নয়নের গতির চাকা আটকে ধরে রাখবে। তাই মাদকবিরোধী অভিযান জিরো টলারেন্সে অব্যাহত রাখতে হবে ততদিন, যতদিন মাদক জিরো হয়ে না যাচ্ছে। বর্তমান সরকার সাফল্যের সঙ্গে জঙ্গি দমন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিদের সব আস্তানা তছনছ করে দিয়েছে। এখন তেমন জিরো টলারেন্স নিয়ে মাদকের সব আখড়া গুড়িয়ে দিতে হবে। সীমান্তে নজরদারি বাড়াতে হবে। মাদক দেশে ঢুকে যাওয়ার পর, ছড়িয়ে যাওয়ার পর তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাই মাদক যাতে ঢুকতেই না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন টেকনাফ-কক্সবাজার এলাকায় কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করা গেলে ইয়াবা আসা বন্ধ হয়ে যাবে। ফেনসিডিল আসা বন্ধ করতে ভারতের সাহায্য নিতে হবে। ভারত এবং মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় শুধু বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য ফেনডিসডিল এবং ইয়াবা কারখানা গড়ে উঠেছে; উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে তা বন্ধ করতে হবে। আর দেশের ভেতরে মাদক চক্রের নেটওয়ার্কগুলো গুড়িয়ে দিতে হবে। পেছনে যত শক্তিশালী রাঘব বোয়ালরাই থাকুক, তাদের সবাইকে ধরতে হবে।

তবে মনে রাখতে হবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের অজুহাতে এই মহৎ অভিযান যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, যেন দুর্বল না হয়। অভিযান চালাতে হবে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে। এই অভিযানের ক্ষেত্রেও আইনের মূল চেতনাটা মনে রাখতে হবে, ১০ জন অপরাধী ছাড়া পেয়ে যাক, তবু একজন নিরপরাধ মানুষ যেন সাজা না পায়। মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট দলমত নির্বিশেষে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের দ্রুত বিচারের জন্য প্রয়োজনে আলাদা ট্রাইাব্যুনাল করা হোক। কিন্তু বিনা অপরাধে, বিনা বিচারে যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়।


লেখক: সাংবাদিক

বাংলা ইনসাইডার 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭