নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 08/06/2018
‘হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।’
উল্লেখিত, কবিতা ও কবি উভয়ই সকল বাঙ্গালির কাছে সমান সমাদৃত। বাংলা সাহিত্যে ‘মধু কবি’ নামে পরিচিত মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মেছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তাঁর স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকারী উদ্যোগে কবির বাড়িটিকে সংরক্ষণ করে নাম দেয়া হয়েছে মধুপল্লী। যশোর শহর থেকে মধুপল্লীর দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।
মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক বাড়ীটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষিত করা হয়েছে। কবির পৈত্রিক বাড়ী ও তাঁর বাল্যকালের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ এখানে আগত যে কোন পর্যটক দেখতে পারবেন।
১৯৬৫ সালে ২৬ অক্টোবর সরকার বাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। কুটিরের আদলে তৈরি প্রধান দরজা পেরিয়ে মধুপল্লীতে প্রবেশ করলেই দেখা যায় কবির আবক্ষ মূর্তি। মধুসূদন দত্তের পরিবারের ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র, বাসন-কোসন ও নানা ধরনের স্মৃতিচিহৃ নিয়ে এ বাড়ির ভিতরেই তৈরি করা হয়েছে মধুসূদন জাদুঘর। বাড়ির চারপাশে প্রাচীরে ঘেরা, বাড়ির পশ্চিম পাশে আছে দিঘি। এই দিঘির ঘাটেই কবি স্নান করতেন।
১৮৩০ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর চলে যান কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কলকাতায় থাকলেও কবির মন সর্বদাই পড়ে থাকতো তার শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত সাগড়দাঁড়িতে। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে কবি স্ত্রী-পুত্র কন্যাকে নিয়ে বজরায় করে নদী পথে বেড়াতে আসেন সাগরদাঁড়িতে।
জানা যায়, ১৮৬২ সালে কবি সপরিবারে যখন সাগরদাঁড়ীতে এসেছিলেন তখন ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে তাঁকে বাড়িতে উঠতে দেওয়া হয় নাই। কপোতাক্ষ নদের তীরে তিনি একটি কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু টাঙ্গিয়ে ১৪ দিন অপেক্ষা করেছিলেন। অতপর কবি হতাশ মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে হেঁটে হেঁটে বিদায়ঘাট হতে কলকাতার উদ্দেশে বজরায় উঠেছিলেন। এরপর কবি আর কোনদিন দেশে ফেরেননি।
কপোতাক্ষ নদের তীরে কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছের গোড়া সান বাধানো। বয়সের ভারে মৃতপ্রায় এই বাদাম গাছ ও বিদায় ঘাট পর্যটকদের কাছে অনেক আকর্ষণীয় বিষয়। এখানে দাঁড়িয়ে কপোতাক্ষ নদের সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। এখানে আরোও আছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র।
ঢাকা থেকে বাসে, ট্রেনে বা উড়োজাহাজে করেও যশোরে যাওয়া যায়। যশোর থেকে বাসে যেতে হবে কেশবপুর। সেখান থেকে মটর সাইকেল বা ভ্যানে করে সোজা চলে যেতে পারবেন সাগরদাঁড়ি কবির বাড়িতে। নিজস্ব গাড়ী থাকলে আরোও আরাম করে যেতে পারবেন মধুপল্লীতে।
এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং অক্টোবর থেকে মার্চ মাসে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে মধুপল্লী। শুক্রবার সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বিরতি। মধুপল্লীর সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। সরকারী ছুটির দিনে বন্ধ থাকে মধুপল্লী।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭