ইনসাইড থট

ঈদযাত্রাকে আনন্দময় করতে দায়িত্ব নিতে হবে সকলকেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 10/06/2018


Thumbnail

রোজা প্রায় শেষের পথে। রমজান শেষের সঙ্গে সঙ্গেই ঈদের আগমনী বার্তা চলে আসে। এখন চলছে সেই অপেক্ষা পর্ব। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে অনেক কষ্ট সহ্য করে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যায়। পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে যাতায়াতের সব কষ্ট তারা ভুলে যান। ঈদের এই সময়টায় গ্রামগুলোতে চলে যেন মিলন মেলা। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবাই মিলে ঈদের আনন্দ বেড়ে যায় অনেকগুণ। শহুরে সুবিধাময় জীবন মানুষকে আটকে রাখতে পারে না। নাড়ির টানে সে ছুটবেই।

কিন্তু প্রায় প্রতিবছরই মহাসড়কের খারাপ অবস্থা, বিভিন্ন রকমের চাঁদাবাজি, টিকেট কালোবাজারি, পরিবহন মালিক-শ্রমিকের অসাধু পন্থা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ইত্যাদি ঈদের যাত্রাকে দুঃসহ করে তোলে। ৬ ঘন্টার যাত্রাপথ অনেক সময় ২০ ঘণ্টাতে ও পাড়ি দেওয়া যায় না।

ট্রেনযাত্রা তুলনামূলক আরামদায়ক হলেও টিকিট পাওয়াই বিরাট ভাগ্যের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ট্রেনের ধারণক্ষমতা একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার। বর্তমানে প্রতিদিন ৭৫ হাজার যাত্রী ট্রেনে চলাচল করত পারে। কিন্তু ঈদের সময় এ চাহিদা বেড়ে দেড় লাখ ছাড়িয়ে যায়। আর এবার সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে ট্রেনে প্রতিদিনের যাত্রীদের চাহিদা প্রতিদিন দুই লাখের বেশি। ফলে স্টান্ডিং যাত্রী ধরে ও রেল কতৃপক্ষ প্রতিদিন চাহিদর অর্ধেক যাত্রীর বেশি পরিবহন করতে পারবে না। ফলে শেষ সম্বল হবে বাস-ট্রাক।

এ বছর সড়ক-মহাসড়কের দুর্দশা এবার অন্যবারের চেয়ে বেশি। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসেব অনুসারে দেশের মহাসড়কের ২৬ শতাংশই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে আছে। সময়মতো এসব রাস্তা মেরামত না হওয়া, বিভিন্ন মহসড়ক প্রশস্তকরনের কাজ আটকে দিচ্ছে সব কিছু। রাস্তার সংস্কার কাজের সময় পাশের ডাইভারশন রোড় চালু রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না কেউ। মন্ত্রণালয়েরও এ বিষয়ে নজরদারি নেই। ফলে জনগণের দুর্ভোগকে আরও হাজারগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। ঈদের কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ দিন আগে থেকেই বাড়ি ফেরা শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় যানজটও । এবারো এ অবস্থা শুরু হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা এড়াতে মহাসড়কের দিকে এখনই নজর রাখা প্রয়োজন।

সড়ক স্বাভাবিক রাখার জন্য প্রয়োজনে বিভিন্ন জায়গায় নির্দিষ্ট কমিটি গঠন করা যেতে পারে। ঈদের সময় যেহেতু চাপ বাড়ে, মহাসড়কের মেরামতের কাজ এত দ্রুত সম্ভব নয়। তাই অপ্রয়োজনীয় যান ও শৃঙ্খলা বজায় রাখলে যাত্রা নির্বিঘ্ন করা সহজ হবে। ঈদে মহাসড়কে যানজট ও ভোগান্তি রোধে পুলিশ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ঈদের আগে এবং পরে অন্তত এক সপ্তাহ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে উন্নয়নকাজ স্থগিত রাখা যেতে পারে। যান চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়ক দখলমুক্ত করতে হবে। সড়কের পাশ ঘেঁষে অস্থায়ী দোকানপাট বা স্থাপনা বসানো যাবে না। ঈদের সময় দেখা যায় পরিবহন শ্রমিকেরা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বা যাত্রী ওঠানো-নামানো করে। দূরপাল্লার গাড়ি যেখানে-সেখানে থামানো যাবে না। গতিসীমা নিয়ন্ত্রিত থাকতে হবে, ওভারটেক নয়। আর লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ি যেন রাস্তায় চলতে না পারে সেজন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঈদের আগে ও পরের কিছুদিন হাইওয়েতে ট্রাক ও লরি বন্ধ রাখা যেতে পারে। বাসের সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। ঈদের যাত্রার বড় একটি ভোগান্তি হচ্ছে টিকেট সংকট। অনেকক্ষেত্রে কালোবাজারির হাতে চলে যায়। এক্ষেত্রে বড় সমাধান হতে পারে অনলাইনে টিকিট কেনার সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া। এর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি যেটি প্রয়োজন এসময় রাস্তায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের রাখা। যাতে রাস্তায় কোনো গাড়ি থেমে থাকতে না পারে। এলোমেলো গাড়ি রাখা যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাড়ায়।

আরও কিছু যন্ত্রণা ঈদের যাত্রাকে বিষময় করে তোলে। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার অমানবিক কষ্টের মধ্যেও মানুষকে পড়তে হচ্ছে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে। ছিনতাইকারীরা ছিনতাই কাজে মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ব্যবহার করছে। তারা ধরা পড়ছে, সাময়িক শাস্তি হচ্ছে, আবার বের হয়ে অপরাধ কর্ম করে যাচ্ছে। এর থেকে নিস্তার পেতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একমাত্র ভরসা। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাত্ক্ষণিক কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

ঈদে নিরাপদে বাড়ি ফেরার অন্যতম ও আরামদায়ক মাধ্যম হলো বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাই ঈদযাত্রা সফল করতে রেলওয়েকে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। ট্রেনসংখ্যা ও বগিসংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে। দুর্ঘটনা এড়াতে ট্রেন ও বাসের ছাদে ভ্রমণ থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই।

আসলে ঈদযাত্রাকে আনন্দময় করে তুলতে হলে শুধু সরকার বা পরিবহন মালিক বা অন্যের ওপর ভরসা করলেই চলবে না; যাত্রীদের ও উদ্যোগী হতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে সকলকেই। নইলে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা বড় দুর্ঘটনার কারন হতে পারে।

লেখক: সাংবাদিক



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭