ইনসাইড গ্রাউন্ড

রাশিয়া বিশ্বকাপে আন্ডারডগ যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/06/2018


Thumbnail

অনেকেই বিশ্বকাপে ছোট এবং অচেনা দলগুলোর সঙ্গে লড়তে চায় না। ড্র’য়ের আগে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে এমন কোনো দল যেন তাঁদের গ্রুপসঙ্গী না হয়। মোদ্দাকথা বিশ্বকাপে আন্ডারডগ মানেই যেন মূর্তিমান আতঙ্ক। প্রায়ই দেখা যায় যে আন্ডারডগ দলগুলো পাল্টে দেয় খেলার ছক। ওলটপালট করে দেয় ফেবারিট দলগুলোর বিশ্বকাপ মিশন।

রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল, বেলজিয়ামসহ বেশকিছু দেশের দিকে সবার নজর থাকবে। কেননা দলগুলো বেশ বড় তারকায় ঠাসা। তবে প্রতিবারই হিসেবের বাইরে থাকা আন্ডারডগ দলগুলো অসাধারণ নৈপুণ্যে চমকে দেয় ফুটবলবিশ্বকে। চলুন দেখা নেয়া যাক এমন কয়েকটি দল: 

মিশর
ফুটবল বিশ্বে বর্তমান সময়ের আলোচিত নাম মোহাম্মেদ সালাহ। লিভারপুলের হয়ে ইউরোপীয় ফুটবলে আলো ছড়াচ্ছেন এই মিশরীয় ফুটবলার। আর সালাহ’র হাত ধরেই বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার আশা বুনছে মিশর। এর অবশ্য অনেক যৌক্তিক কারণ আছে। কেননা ইউরোপীয় ফুটবলে রোনালদো-মেসি- নেইমারদের পাশ কাটিয়ে ছড়ি ঘুড়াচ্ছেন মোহাম্মেদ সালাহ। এই দলে সালাহ ছাড়াও বেশ কয়েকজন ভালো মানের খেলোয়াড় আছে।

২০১৫ সালে মিশরের কোচের দায়িত্ব পান হেক্টর কুপার। কোচিং ক্যারিয়ারে ভ্যালেন্সিয়া, ইন্টার মিলান, রিয়াল বেতিসের মতো ক্লাবে কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া ২০০৮-২০০৯ মৌসুমে জর্জিয়ার ফুটবলকে নতুন মাত্রা দেন হেক্টর। তবে হেক্টর কুপার মিশরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাঁর অধীণে এখন পর্যন্ত ৩০টি ম্যাচ খেলেছে সালাহরা। আর এই ৩০ ম্যাচে মাত্র একবার একটির বেশি গোল হজম করেছে মিশর। এ সব কিছুকে পাশ কাটিয়ে মিশরের শক্তির জায়গা তাদের আক্রমণভাগ এবং দুর্বলতা হলো অভিজ্ঞতা।

প্লেয়ার টু ওয়াচ: মোহাম্মেদ সালাহ (লিভারপুল)।

আইসল্যান্ড
প্রথমবার বিশ্বকাপে খেলছে আইসল্যান্ড। মাত্র ৩ লাখ ৩৪ হাজার জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশ। ইংল্যান্ডকে ২০১৬ ইউরো থেকে ছিটকে দিয়ে নিজেদের সামর্থের প্রমাণ তারা আগেই দিয়েছে। সেবার ইউরোতে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিলো তাঁরা। বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারে আয়ারল্যান্ড খুব ভালো খেলেছে এবং প্রমাণ করেছে যে শুধুমাত্র হাইপ দিয়ে তারা এই পজিশনে আসেনি। তাই এবার পালা বিশ্বকাপে নিজেদের প্রমাণের।

প্লেয়ার টু ওয়াচ: আইসল্যান্ডের সবচেয়ে বড় তারকা নিঃসন্দেহে গিলফি সিগারসন। তবে তাঁর সঙ্গে বিরকির বায়ারসন(এ্যস্টন ভিলা), এ্যারন গুনারসন(কার্ডিফ সিটি) এবং আলফ্রেড ফিনবোগাসন(এফসি আউসবুর্গ)রা আছে যথেষ্ঠ সাহায্যের জন্য। গ্রুপ ডি’তে আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া আর নাইজেরিয়ার সাথে পড়া আইসল্যান্ড কতোদূর যেতে পারবে সেটা সময় বলে দিবে তবে তারা যে জান দিয়ে খেলবে এই ব্যাপার সন্দেহ নাই।

ডেনমার্ক
ডেনমার্ককে নিয়ে আলোচনা কম হয় কিন্তু তাঁরাও অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া একটি দল। ডেনমার্ক সর্বশেষ বিশ্বকাপ খেলেছিলো ২০১০ সালে। তবে বিশ্বকাপে তাদের সেরা সাফল্য আসে ১৯৯৮ বিশ্বকাপে। সেবার কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল ড্যানিশরা। তবে এবারের ডেনমার্কের শক্তি মাঝমাঠ। ইউরোপীয়ান বাছাইপর্বে গ্রুপ ‘ই’-তে পোলান্ডের পেছনে থেকে রানার্স আপ হয় ডেনমার্ক। এরপর আয়ারল্যান্ডকে প্লে-অফে ৫-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে পা রাখে তারা। কোচ এরিকজ হারিদা ৪-৩-৩ ফরমেশনে খেলতে পছন্দ করেন। অর্থাৎ খেলার ধরন আক্রমণাত্মক। তবে দলটির মূল সমস্যা ভালো স্ট্রাইকারের অভাব, অর্থাৎ ফরোয়াড লাইনে সমস্যা আছে। বাছাইপর্বে ডেনমার্ক ২৫টি গোল করে, যার মধ্যে স্ট্রাইকাররা করে ৬টি গোল।

প্লেয়ার টু ওয়াচ: ডেনমার্ক দলে আছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন (টটেনহ্যাম)। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বকাপ খেলছেন এই খেলোয়াড়। সেবার ছিলেন কনিষ্ঠতম সদস্য এবার অভিজ্ঞ। বাছাইপর্বের ১২ ম্যাচে ১১ গোলই তাঁর সামর্থ্যের প্রমাণ দেয়।

নাইজেরিয়া
আফ্রিকার ‘সুপার ঈগল’রা এবার সবাইকে চমকে দিতে পারে। বিশ্বকাপের আসরে নাইজেরিয়ার জার্সিতে নামার অপেক্ষায় থাকা খেলোয়াড়দের গড় বয়স ২৪.৯ বছর। এত কম গড় বয়স নিয়ে আর কোন দল মাঠে নামছেনা এবারের বিশ্বকাপে। এই নিয়ে যষ্ঠবারের মত বিশ্বকাপ খেলবে নাইজেরিয়া। তরুণ এই দলকে নিয়ে বেশ আশাবাদী তাদের কোচ গারনট রোর ও অধিনায়ক জন ওবি মিকেল। তাছাড়া এই দলটিই কয়েক মাস আগে এক প্রীতি ম্যাকচে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়েছে। সেই সঙ্গে নাইজেরিয়া সুশৃঙ্খল ও শান্ত একটি দল। সবাই সবার কাজ জানে এবং সেভাবেই করে যাচ্ছে। গত নভেম্বরে আর্জেন্টিনার সঙ্গে ৪-২ গোলে জেতা ম্যাচটিতে তাঁরা তাঁরা কতটা ভয়ংকর হতে পারে। তাঁদের অ্যাটাক গ্রুপের অন্য তিন দিল- আর্জেন্টিনা, আইসল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়াকে সমস্যায় ফেলতে পারে। আর এই চার দল নিয়ে গড়া গ্রুপ ডি হলো এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে  কঠিন গ্রুপ।

প্লেয়ার টু ওয়াচ: জন ওবি মিকেল (তাইনজিন টেডা), অ্যালেক্স ইয়োবি (আর্সেনাল) এবং কেলেচি ইহিয়ানাচো(লেস্টার সিটি)।

অস্ট্রেলিয়া
২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ থেকে নিয়মিত ফুটবলের এই বড় আসরে খেলছে অস্ট্রেলিয়া। জানলে অনেকেই অবাক হতে পারেন বাছাই পর্ব পেরোতে সকারুজদের প্রায় ২৫০০০০ মাইল ভ্রমন করতে হয়েছে। তবে এবার তারা অনেক কাঠখোড়ন পেরিয়ে বিশ্বকাপে এসেছে। বাছাইপর্বে জাপান এবং সৌদি আরবের পেছনে ছিল তারা। যার কারনে দু’দুটি প্লে-অফ খেলতে হয়েছে তাদের। প্রথমে সিরিয়া এবং এরপর হন্ডুরাস। অস্ট্রেলিয়ায় দলেরও মূল শক্তির জায়গা টিম স্পিরিট। আর দুর্বলতার জায়গা ভালো স্ট্রাইকারের অভাব, অর্থাৎ ফরোয়াড লাইনে সমস্যা আছে। ৩৮ বছর বয়সেও আক্রমণভাগের প্রাধান টিম কাহিল। সেই সঙ্গে সকারুজদের দীর্ঘদিনের কোচ এঙ্গু পোস্তগলু পদত্যাগ করার পর এখনও কোচের দেখা পায়নি তারা। অথচ বিশ্বকাপের আছে মাত্র একমাস।

প্লেয়ার টু ওয়াচ: অ্যারন মোই। ইপিএলের দল হাডার্সফিল্ডে খেলা এই মিডফিল্ডার হতে পারে অজিদের মূল ভরসা।

বাংলা ইনসাইডার/ডিআর



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭