ইনসাইড থট

রোজ গার্ডেন থেকে আধুনিক ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 22/06/2018


Thumbnail

২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে উদ্বোধনের অপেক্ষায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন। শনিবার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ১০ তলা এ ভবন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দৃষ্টিনন্দন ভবনটিতে আছে কনফারেন্স হল, ডিজিটাল লাইব্রেরি, হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির নানান সুযোগ।

নির্বাচনের আগে দলকে আরও গতিশীল করতে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভবনটির নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ২৩ জুন দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে কিংবা তারও আগে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ১০ তলা ভবনটি উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

রোজ গার্ডেনে যাত্রা শুরুর পর পুরান ঢাকা, পুরানা পল্টন ও সার্কিট হাউস রোড এলাকায় কয়েকবার অফিস পাল্টায় উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।

চারতলা পুরনো ভবন থেকে কার্যক্রম চালানো কঠিন হওয়ায় ২০১১ সালে পরিকল্পনা হয় নতুন ভবন নির্মাণের। সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পর ২০১৬ সালে নকশায় অনুমোদন দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। দুই বছরের মধ্যে ভবন নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় কাজ। এখন কাজ প্রায় শেষ।

দৃষ্টিনন্দন ভবনটিতে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশেলে তুলে ধরা হয়েছে দেশ ও দলের ইতিহাস। আছে কনফারেন্স হল, ডিজিটাল লাইব্রেরি, হেলিপ্যাডসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগ। নির্ধারিত সময়ের আগে কার্যালয় প্রস্তুত হওয়ায় সন্তুষ্ট মূল দায়িত্বে থাকা পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

গত প্রায় দুই বছর কাছের অন্য একটি ভবনকে অস্থায়ী কার্যালয় করে কার্যক্রম চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন। নির্বাচনের আগে দলকে গতিশীল করতে দ্রুত নির্মাণ কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা, গবেষণা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে আধুনিক কার্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে নেতা-কর্মীরা আশা করছেন।

বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ভবন উদ্বোধনের জন্য দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

পুরনো ভবন ভাঙার প্রায় দুই বছর পর নতুন ভবনে উঠতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম পুরনো দল আওয়ামী লীগ।

নবনির্মিত ১০ তলা ভবনের ৬-৭ তলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয় থাকবে। থাকবে কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, সাংবাদিক লাউঞ্জ ও ডরমিটরি।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের জন্য বড় পরিসরে আলাদা কক্ষ থাকছে। পুরো কার্যালয়টিতে ওয়াইফাই জোন হবে।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে আট থেকে নয় বার।

পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর যথাক্রমে নেতৃস্থানীয় নেতাদের বাসায় বসে দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হত, কোনো অফিস ছিল না।

১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস স্থাপন করা হয়।

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন। এর কিছু দিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দুটি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল।

১৯৮১ সালের দিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঠিকানা হয়।

২০১৬ সালের ১৭ জুলাই এই কার্যালয়টি ভাঙার পর বেশিরভাগ সহযোগী সংগঠন এখন `উদ্বাস্তু অবস্থায়` রয়েছে।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ কিছু দিন `উদ্বাস্তু` অবস্থায় থাকার পার আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে অফিস ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন ভবন চালু হলে সহযোগী সংগঠনগুলোর উদ্বাস্তু দশা ঘুচবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটা অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এক ছাদের নিচে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা বসে দলের কার্যক্রম চালাতে পারব।’

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু তার `অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত হুমায়ূন সাহেবের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।’

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা সেদিন রোজ গার্ডেনে উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘সকলেই একমত হয়ে নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করলেন; তার নাম দেওয়া হল- `পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’।

‘আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে।’

১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার `মুকুল` প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন শেখ মুজিব।

আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে যাত্রা শুরু করলেও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে `মুসলিম` শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। নতুন নাম হয়-`পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ`। স্বাধীনতার পর `বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ` নাম নেয় দলটি।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ৫০ এর দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক শক্তি।

তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আব্দুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

রাজনৈতিক বিরোধে দল আলাদা হলেও মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্ক ছিল অটুট । ২৪ বছরের পাকিস্তান শাসনামলে আওয়ামী লীগ আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে দু`বছর প্রদেশে ক্ষমতাসীন ছিল এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ১৩ মাস জোট সরকারের অংশীদার ছিল।

এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘসময় এই দলটি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করে জনগণের মধ্যে আস্থার স্থান তৈরি করে। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দেন বঙ্গবন্ধু, যাকে বাঙালির মুক্তির সনদ নামে অভিহিত করা হয়। ছয় দফার ভিত্তিতেই ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।

এরপর পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশের।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং ৩ নভেম্বর কারাগারের অভ্যন্তরে চার জাতীয় নেতাকে হত্যার পর সামরিক শাসনের নির্যাতন আর নিপীড়নের মধ্যে পড়ে ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনটি। নেতাদের মধ্যেও দেখা দেয় বিভেদ।

১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলীয় সভাপতি হিসাবে দেশে ফিরে কয়েক ভাগে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেন, আন্দোলন শুরু করেন সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে।

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে।

পরবর্তীতে দেশে রাজনৈতিক সঙ্কটের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে। আর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়।


লেখক: সাংবাদিক
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭