ইনসাইড আর্টিকেল

কেমন দেশ জার্মানি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/06/2018


Thumbnail

চলছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ ফিফা বিশ্বকাপ ২০১৮। নানা তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে ক্রমশ অতিবাহিত হচ্ছে সময়। পছন্দের দলের খেলা দেখে কখনো আমরা উচ্ছ্বাস করছি, কখনও আবার অভিমান। তবে এই সবকিছুকে উতরে গিয়ে রাশিয়ার মাঠে ফুটবল বিশ্বকাপ তাঁর নিজস্ব রঙ ধারণ করেছে।

আজ রাত ১২টায় রয়েছে জার্মানির ম্যাচ। ম্যাচটি দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে ফুটবল বিশ্ব। কিন্তু এ দলটির খেলোয়ার ও তাদের খেলা সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি। পছন্দের দলটির দেশ সম্পর্কেই বা কতজুটু জানা? আজ আমরা পাঠকদের জানাবো ‘জার্মানি’ দেশটি কেমন:

জার্মানি শুনলে প্রথমেই মনে আসতে পারে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ, হিটলারের কথা। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর হিটলারই জার্মানিরা শেষ কথা নয়। আন্তর্জাতিক ফুলবলে জার্মানির নাম বিনম্র চিত্তে স্মরণ করতে হয়। কেননা এরই মধ্যে তাঁরা চারবার বিশ্বকাপ জয়ের খ্যাতি অর্জন করেছে। বিশ্ববাসীকে উপহার দিয়েছে দৃষ্টি নন্দন ফুটবল ম্যাচ। তবে এই জানার বাইরেও রয়েছে জার্মানির ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির দীর্ঘ ইতিহাস।

’জার্মানি’ ইউরোপের অন্যতম প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। এটি সরকারিভাবে সংযুক্ত প্রজাতন্ত্রী জার্মানি হিসেবেই পরিচিত। দেশেটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর বার্লিন। তবে দেশটিতে রয়েছে ১৬টি রাজ্য। উত্তরে ঢেউ খেলানো পাহাড় ও নদী উপত্যকা এবং দক্ষিণে ঘন অরণ্যাবৃত আল্পস পর্বতমালা দেশটির ভূ-প্রকৃতিকে বৈচিত্র্যময় করেছে। দেশটির মধ্য দিয়ে ইউরোপের অনেকগুলি প্রধান প্রধান নদী যেমন রাইন, দানিউব, এলবে প্রবাহিত হয়েছে এবং দেশটিকে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে সাহায্য করেছে।

জার্মানির মোট আয়তন ৩,৫৭,০২১ বর্গকিলোমিটার। আয়তনের বিচারে জার্মানি ইউরোপের মধ্যে সপ্তম এবং বিশ্বের মধ্যে ৬৩তম দেশ। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। এর জনসংখ্যা ৮ কোটি ২২ লক্ষ ৮৯ হাজার ৩৩৮ জন এবং বর্তমানে বিশ্বের ১৭তম জনবহুল দেশ। দেশটিতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ২৩৬ জন অধিবাসী বাস করে। জার্মানি এখানকার সরকারি ভাষা। এছাড়াও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে আরবি, গ্রিক, ইতালীয়, কুর্দি এবং তুর্কি ভাষা প্রচলিত।

জার্মানরা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে বহু অবদান রেখেছে। জার্মানিতে বহু অসাধারণ লেখক, শিল্পী, স্থপতি, সঙ্গীতজ্ঞ এবং দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে সম্ভবত ইয়োহান সেবাস্টিয়ান বাখ ও লুডভিগ ফান বেটোফেন সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এছাড়াও ফ্রিডরিশ নিৎসে, ইয়োহান ভোলফগাং ফন গোটে এবং টমাস মান জার্মান সাহিত্যের দিকপাল।

জার্মান ভাষায় জার্মানিকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে ‘ডাস লাণ্ড ড্যার ডিখটার উন্ড ডেনকার’, যার অর্থ হচ্ছে ‘কবি ও চিন্তাবীদদের দেশ’। একটি জাতির দেশ হিসেবে জার্মানির উত্থানের অনেক আগে থেকেই জার্মান সংস্কৃতির আবির্ভাব, এবং এর বিস্তৃতি ছিল গোটা জার্মান ভাষী এলাকা জুড়ে।

জার্মানির জাতীয় পাখি ঈগল। এই দেশটি প্রাকৃতিক বৈচিত্রের অভায়ারণ্য। তাছাড়া একক দেশের হিসেবে জার্মানিতেই পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি চিড়িয়াখানা ও এনিম্যাল পার্ক আছে, যার সংখ্যা ৪০০। বার্লিনের জুওলজিশার গার্ডেন জার্মানীর সবচেয়ে প্রাচীন চিড়িয়াখানা এবং বিশ্বের একক বৃহত্তম প্রাণী সংগ্রহশালা।

জার্মানি বিশ্বের একটি প্রধান শিল্পোন্নত দেশ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জার্মানি লোহা, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, সরঞ্জাম এবং মোটরগাড়ি রপ্তানি করে। জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি।

জার্মানির ইতিহাস জটিল এবং এর সংস্কৃতি সমৃদ্ধ। তবে ১৮৭১ সালের আগে এটি কোন একক রাষ্ট্র ছিল না। ১৮০৬ সালের আগে এটি অনেকগুলি স্বতন্ত্র ও আলাদা রাজ্যের সমষ্টি ছিল। ১৮১৫ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত এটি ছিল জোট ভিত্তিক দেশ।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, মিত্রশক্তি যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন জার্মানিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত করে। মিত্র দেশগুলি দেশটিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে, যারা মধ্যে ব্রিটিশ, ফরাসি, মার্কিন ও সোভিয়েত সেনারা একেকটি অঞ্চলের দায়িত্বে ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পশ্চিমা শক্তিগুলির মধ্যকার মিত্রতা ভেঙে গেলে সোভিয়েত অঞ্চলটি জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র তথা পূর্ব জার্মানিতে পরিণত হয়। পশ্চিম-নিয়ন্ত্রিত বাকী তিন অঞ্চল একত্রিত হয়ে পশ্চিম জার্মানি গঠন করে।

১৯৮৯ সালে পূর্ব ও পশ্চিম বার্লিনের বাসিন্দারা বার্লিন প্রাচীর ভেঙে ফেলে। এই ঘটনাটিকে পূর্ব ইউরোপে সাম্যবাদের পতন ও জার্মানির পুনঃএকত্রীকরণের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৩রা অক্টোবর দুই জার্মানি একত্রিত হয়ে জার্মান ফেডারেল প্রজাতন্ত্র গঠন করে। তবে দুই জার্মানির ভিন্ন সংস্কৃতি ও রীতিনীতির মিলন একত্রিত জার্মানির সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমস্যার সৃষ্টি করে। উচ্চ বেকারত্ব এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস এদের মধ্যে অন্যতম।

তাবে জার্মানি পরিবেশ সচেতন জাতি হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। বেশির ভাগ জার্মানরাই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ব্যাপারে সচেতন। এই রাষ্ট্রটি কিয়োটো প্রোটোকল চরমভাবে মেনে চলে তাছাড়াও ক্ষতিকর গ্যাসের অল্প নির্গমন নিশ্চিত করে, জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার করে।

ফুটবল খেলার সবচেয়ে বড় আসর ফিফা বিশ্বকাপে জার্মানি চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এছাড়াও ক্লাব ফুটবলে জার্মান দল বায়ার্ন মিউনিখ তাঁদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে।

বাংলা ইনসাইডার/ বিপি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭