ইনসাইড পলিটিক্স

খুলনার পথেই গাজীপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/06/2018


Thumbnail

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ওই নির্বাচনের আগেই বিএনপি তাঁদের ভরাডুবি বুঝতে পারে। তাই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবাদী দেখা যায় তাদের। নির্বাচনী প্রচারণার শুরুতে অভিযোগ তোলে নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরের অভিযোগ, নেতাকর্মীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না, কীভাবে তারা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবে। আর নির্বাচনের দিন দেখা যায় কিছু কিছু কেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার মতো লোকও নেই খুলনা বিএনপির, যার মূল কারণ ছিল খুলনা সিটি বিএনপির মধ্যেকার অন্তঃকলহ।

বিএনপির একই অবস্থা যেন গাজীপুর সিটিতেও। নির্বাচন প্রচারণার মাত্র কদিন বাকি থাকতে দলটির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অভিযোগ করেছেন, দলের নেতাকর্মীদের আটক করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আর গাজীপুর বিএনপির অন্তঃকলহ খুলনাকেও যেন ছাড়িয়ে গেছে।

গাজীপুর সিটিতে খুলনারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে দুই সিটিতেই বিএনপির বেশ কিছু মিল দেখা যাচ্ছে। সেই মিলগুলো কী:

১. খুলনা সিটিতে আগের মেয়র ছিলেন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি। কিন্তু তাঁকে মনোনয়ন না দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। কথা ওঠে, লন্ডনে টাকা পাঠিয়ে তিনি মনোনয়ন যোগাড় করেন। তবে যেভাবেই তিনি মনোনয়ন পান না কেন, এর ফলে খুলনা সিটি বিএনপিতে ভাঙন সৃষ্টি হয়। মনিরুজ্জামান মনি গোপনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে গিয়ে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। দলীয় কোন্দলে জর্জরিত বিএনপিকে পরাজিত করতে তেমন বেগ পেতে হয়নি খুলনায় ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে। লাখো ভোটের ব্যবধানে জেতেন তালুকদার আব্দুল খালেক। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে গাজীপুরে। আগের মেয়র ছিলেন বিএনপির অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। তাঁকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন পান (একই অভিযোগ, লন্ডনে অর্থ পাঠিয়ে) হাসান উদ্দিন সরকার। বিষয়টি মান্নান ও তাঁর সমর্থকরা ভালোভাবে নেয়নি। মান্নান ও তাঁর লোকজন এখন যে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করছে তা ওপেন সিক্রেট। বিভক্ত গাজীপুরের বয়োবৃদ্ধ হাসান উদ্দিন সরকার কি ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মতো তরুণ তুর্কির বিপক্ষে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারবেন?  

২. খুলনা সিটিতে বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রচারণায় দেখা যায় জামাতের লোকজনকে। তরুণ প্রজন্ম জামাতকে যেমন ঘৃণা করে তেমনি এর দোসরদেরও। খুলনা সিটিতে বিএনপির জামাত সংশ্লিষ্টতা বড় করেই চোখে পড়েছে। একই অবস্থা গাজীপুরেও। তবে এখানে জামাতের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে হেফাজত। গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকারের পক্ষে প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে হেফাজতের কর্মীদের। তাঁদের উপস্থিতি বিএনপি ভোট বাড়াবে না কমাবে সেই প্রশ্ন উঠতেই পারে। আবার বিএনপির নিজের জোরের চেয়ে অন্যের উপর ভর করে আগানোর চিরাচরিত বিষয়টি দুই সিটিতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

৩. অন্ত:কলহের কারণে খুলনা সিটি নির্বাচনের দিন কিছু কিছু কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্ট দিতে পারেনি। অনেক জায়গায় দেখা গেছে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট জামাত কর্মী। গাজীপুরেও এমন অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাদা চোখে দেখলে দুই সিটি দেশের দেশের দুই প্রান্তে হলেও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দেখলে দেশজুড়ে তাদের দৈন্যদশাই যেন ফুটে ওঠে। খুলনাতে যে পথে হেঁটে বিপুল ব্যবধানের পরাজয় বরণ করতে হয়েছে, সেই একই পথে হাঁটছে গাজীপুর বিএনপি। প্রশ্ন হলো একই কর্মে কি তারা ভিন্ন ফল আশা করছে?

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭