ইনসাইড ইকোনমি

কর্মী ছাঁটাই: প্রতিষ্ঠানের জন্য ইতিবাচক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 09/07/2018


Thumbnail

পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া, ক্রমাগত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করে থাকে। আন্তজার্তিক শ্রম সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে ৩৪ মিলিয়ন কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। ১৯৭০ সালের পর থেকেই ছাঁটাইয়ের হার বাড়ছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠানের সার্বিক উন্নয়নে কতটা কার্যকর?

ফিনল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বখ্যাত সেলফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নোকিয়ার কথাই ধরা যাক। ২০০৮ সালের শুরুতে আগের বছরের তুলনায় তাঁদের ৬৭ শতাংশ লভ্যাংশ বেড়েছিল। যদিও এশিয়ান কোম্পানিগুলোর কমদামি পণ্যের কারণে পরের কয়েক বছরে তাদের বিক্রি ৩৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল। ঠিক সেসময়ই জার্মানিতে নোকিয়ার একটি কারখানায় কর্মীদের পারিশ্রমিক ২০ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। কোম্পানিটি তখন ওই কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে ২ হাজার ৩০০ কর্মী কাজ করত। ১৫ হাজার মানুষ জার্মানিতে ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে।

জার্মান সরকার এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সরকারের পক্ষ থেকে নোকিয়াকে ওই কারখানার জন্য পাওয়া ভর্তুকি ফেরত দিতে বলা হয়। কারখানাটি বন্ধ করা বাবদ নোকিয়ার খরচ হয় ২০০ মিলিয়ন ইউরো, যা মাথাপিছু কর্মী হিসেবে দাঁড়ায় ৮০হাজার ইউরো। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিলো নোকিয়াপণ্য বর্জন এবং সংবাদমাধ্যমের তীব্র প্রতিক্রিয়া।

২০১১ সালে নোকিয়া আরও বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তারা বিশ্বের ১৩টি দেশে ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। আগেরবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে, নোকিয়া এবার ভিন্নভাবে পদক্ষেপ নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু এবারো সেই একই ফলাফল। ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে লভ্যাংশ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বারবার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরও কোম্পানিটি বাজারে টিকতে পারেনি।

হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করার পর যারা কর্মরত থাকেন তাদের মধ্যে ৪১ শতাংশের কর্মসন্তুষ্টি কমে যায়, ৩৬ শতাংশের প্রতিষ্ঠানের প্রতি আনুগত্য কমে যায় এবং ২০ শতাংশের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়।

হাভার্ড স্কুল অব বিজনেস এর তেরেসা আমাবাইল তার এক গবেষণায় দেখেছেন, ১৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানের পণ্য উদ্ভাবনের গতি ২৪ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, নতুন কোনো আইডিয়া শুধুমাত্র শীর্ষপর্যায় থেকে আসে এমন নয়, বরং তা প্রতিষ্ঠানের মধ্য বা নিম্ন পর্যায় থেকেও আসতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনা এবং ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের আরেক গবেষনায় দেখা গেছে কর্মী ছাঁটাই মাথাপিছু উৎপাদন কমিয়ে দেয়। এই প্রক্রিয়া কাজের প্রতি কর্মীদের নীতিগত আকর্ষণ কমিয়ে দেয়। তারা মনে করতে শুরু করে সর্বোচ্চ ফলাফল দেবার পরেও তাদের চাকরি নিশ্চিত নয়, যেকোনো সময় তারাও ছাঁটাইয়ের শিকার হতে পারে।

এটিএন্ডটি কমিউনিকেশন গবেষনা করে পেল তাদের আড়াই লাখ কর্মীর এক লাখ কর্মীই এমন ধরনের কাজ করছেন যার কোনো প্রয়োজন নেই, অথবা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তা কম খরচে করা সম্ভব। কিন্তু কোম্পানিটি ওই কর্মীদের ছাঁটাই না করে তাদের রেখে দেওয়ার সিগ্ধান্ত নেয়। কারণ এত সময় ও অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ দিয়ে এদের তৈরি করার পর যদি কোনো কাজে লাগানো না যায় তবে তা কোম্পানিরই ক্ষতি।

২০১৫ সালে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ এর একটি আর্টিকেলে এটিএন্ডটির সিএসও (বর্তমান সিইও) জন ডনম্যান বলেন, ওই পদক্ষেপ গ্রহণের ১৮ মাস পর দেখা গেছে পণ্য উন্নয়নের জন্য ৪০ শতাংশ সময় কম লেগেছে, আর আয় বেড়েছে ২৬ শতাংশ। ২০১৮ সালে তাদের লভ্যাংশ বেড়েছে ২৩ শতাংশ এবং প্রথমবারের মত তারা ফরচুন ম্যাগাজিনের ‘চাকরি করার জন্য শীর্ষ ১০০ টি কোম্পানি’র তালিকায় স্থান পেয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাঁটাই করলেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে, এমন ধারণাকে ভুল  প্রমাণ করে দিয়েছে এসব তথ্য। তাই কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই এর ফলাফল সম্পর্কে ভেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।


সূত্র: হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭