ইনসাইড পলিটিক্স

সিআরআই নীরবে-নিভৃতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/07/2018


Thumbnail

দেশের জনগণ কী ভাবছে তার আলোকে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নির্ধারিত হয়। জনগণকে আলোকিত করা, ঐক্যবদ্ধ করা এবং নিজেদের চিন্তা-চেতনার সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করাই হলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ, যার প্রতিফলন ঘটে ভোটের মাধ্যমে। যে রাজনৈতিক দলের নীতি, কর্মসূচি জনগণ পছন্দ করে তাদেরকে ভোট দিয়েই জনগণ ক্ষমতায় বসায়। আর জনগণের সমর্থন বজায় রাখার জন্য ওই রাজনৈতিক দলটির কাজ হলো নিজেদের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করা।

কিন্তু গত দুই দশক ধরে বিশ্ব রাজনীতিতে একটি সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকটটি হলো জনগণ কী ভাবছে তা রাজনৈতিক দলগুলো বুঝতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের গত নির্বাচনের সময় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারী ক্লিনটন যে ক্যাম্পেইন করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ এলাকার জনগণ তা বুঝতে পারেননি, তাঁরা তাই ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই ভোট দিয়েছেন। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টি উভয়ের জন্যই আলাদা রিসার্চ অর্গানাইজেশন আছে। কিন্তু সেখানেও জনগণের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করা হয়নি। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও এই সমস্যাটা খুব তীব্র। জনগণের চিন্তা-ভাবনা বুঝতে না পারার কারণেই কনগ্রেস সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজিত হয়। 

জনগণ কী চিন্তা করছে তা নিয়ে গবেষণা করা হলো উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চর্চা। বাংলাদেশে রাজনীতি বলতে বোঝানো হয় ভোট দেওয়া আর রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি মানেই মিটিং, মিছিল প্রভৃতি। জনগণকে নিয়ে, জনগণ কী ভাবছে তা নিয়ে গবেষণা করার চর্চা এদেশে নেই। কোন বিষয়ে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যায়, কোন বিষয়গুলোতে জনগণ স্পর্শকাতর বা আগ্রহী এসব নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণা করা হয় না। তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তত একটি রাজনৈতিক দল এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) নামে একটি গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণা হচ্ছে, জরিপ হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজনীতির গুণগত বিকাশের জন্য এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভুল-ত্রুটিগুলো বুঝতে পারে, নিজেদের কর্মসূচিতে জনগণকে এবং জনগণের ভাবনাগুলোকে অন্তর্ভূক্ত করতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য থিংক ট্যাঙ্ক দরকার হয়। আর এর খুব অভাব আমাদের দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। সেই অভাবটা পূরণ করার ক্ষেত্রে সিআরআই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

আসন্ন একাদশতম নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জরিপ করা, আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নির্ধারণ করা, দলটি কোন ধরনের ক্যাম্পেইন করবে, সেসব ক্যাম্পেইনের ডিজাইন চূড়ান্ত করা প্রভৃতি কাজগুলো সবই করছে সিআরআই। এসব কাজ করতে গিয়ে সিআরআই কোনো আওয়াজ দিচ্ছে না, প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে না। খুব নীরবে-নিভৃতে তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন করে চলেছে।

সিআরআই প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তাঁরা নিজেদের লক্ষ্য পূরণে নানা ধরনের কৌশল গ্রহণ করে আসছে। নিজস্ব সম্পদের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীকে, বিশেষ করে তরুণ ও ছাত্রসমাজকে টার্গেট করে তাঁরা উন্নত মানের মার্কেট রিসার্চ ও পোলিং কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: তরুণ ভোটারদের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকার বিষয়ে উন্নত মানের গবেষণা সম্পাদন করা, তরুণদের মতামত প্রকাশের জন্য লেট’স টক ও পলিসি ক্যাফের মতো প্রোগ্রাম আয়োজন করা যেখানে তরুণরা সরাসরি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিমিয় করার সুযোগ পায়। এছাড়া প্রিন্ট ও ডিজিটাল ফরম্যাটে উন্নতমানের সম্পাদকীয় ও ডিজাইনসম্বলিত বিভিন্ন প্রকাশনা ও ব্লগ প্রকাশ করাও তাঁদের কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও সিআরআই গ্রাফিক প্রকাশ করে। টেলিভিশন, রেডিও ও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের কার্যক্রমের মার্কেটিং এবং প্রচারণা চালানো, তরুণদের লক্ষ্য করে, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে তাদের জন্য তাদের দ্বারা উন্নতমানের মিডিয়া ও প্রচারণা প্রচেষ্টা করা প্রভৃতিও তাঁদের কার্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত।

ছাত্র-ছাত্রীদেরকে স্টার্টআপের দিকে ধাবিত করার লক্ষ্যে `আইডিয়া` প্রকল্পের সাথে এক বছরের কার্যক্রম চুক্তি, ডু আইসিটি এর তত্ত্বাবধানে `শী পাওয়ার` প্রকল্পের `নারী প্রশিক্ষণার্থী নির্বাচন প্রক্রিয়া`তে ইয়াং বাংলার সহায়তা চুক্তিসহ সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সি আর আই) এর ইয়াং বাংলা সেক্রেটারিয়েট ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আইসিটি বিভাগের সঙ্গে ৪টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। সোনার বাংলা ও সবুজ বাংলা গঠন সিআরআই এর স্বপ্ন।

রাজনীতির গুণগত বিকাশের জন্য সিআরআই এর মতো প্রতিষ্ঠান খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রাজনীতির গুণগত বিকাশের জন্য অনেক কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু একটি প্রসঙ্গে কেউ কথা বলছে না যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গবেষণা দরকার, পড়াশোনার দরকার। সে অভ্যাসের চর্চাটাই সিআরআই করছে।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭