ইনসাইড থট

তিন সিটিতে অনেক আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/07/2018


Thumbnail

আগামী ৩০ জুলাই তিন সিটি করপোরেশনে নির্বাচন। গাজীপুরের পর রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশালের নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে জাতীয় রাজনীতিতে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন। এটি রুটিন বৈঠক। সব নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন এ ধরনের বৈঠক করে। তবে তিন সিটি নির্বাচন যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শেষ বড় নির্বাচন, তাই মানুষের এ নিয়ে আশাও বেশি।

কমিশনের বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সাংবাদিকদের যা বলেছেন, সেটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকেই। তিনি বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এ নির্বাচন যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করবে কমিশন। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের জন্য যা করণীয়, তা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে।

তার মানে, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয় এমন কিছু তাঁরা করবেন না। বাংলাদেশে কেউ প্রশ্ন করেননি, এমন নির্বাচনের কথা আমাদের জানা নেই। দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্য ও অধিকতর সুষ্ঠু নির্বাচনকেও পরাজিত পক্ষ হৃষ্টচিত্তে নিতে পারেনি। তারা কখনো সূক্ষ্ম, কখনো স্থূল কারচুপির অভিযোগ এনেছে। যেমন বিএনপি মনে করে, ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল তাদের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র, তেমন আওয়ামী লীগও ভাবে ২০০১ সালের নির্বাচনটি ছিল তাদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ গোষ্ঠীর চক্রান্ত। প্রশ্নহীন নির্বাচনের আরেকটি ধরন হলো যাঁরা প্রশ্ন করতে পারেন, তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া।

সামরিক শাসনামলে এ ধরনের নির্বাচনই বেশি হতো; কেউ প্রশ্ন করতে পারতেন না। করলেও ক্ষমতাসীনদের কিছু যায় বা আসত না। সব প্রধান দলের বিরোধিতা ও বর্জনের মুখে ১৯৮৮ সালে সামরিক শাসক এরশাদ যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছিলেন, তাতে আড়াই শতাংশের বেশি লোক ভোট দেয়নি বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছিল। এ নিয়ে সেই সময় এরশাদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, আড়াই শতাংশ লোকও যদি ভোট দিয়ে থাকে তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি। সেই নির্বাচনে এরশাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী সৈয়দ ফারুকুর রহমান, পরবর্তীকালে যার ফাঁসি হয়েছে। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ নামের জোট গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিল, ৪৩ শতাংশ কেন্দ্রে ১৯ ধরনের অনিয়ম হয়েছে। এখনো তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনও কোনো অনিয়ম তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানা যায়নি। এটি করতে হবে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যদি তা না করতে পারে, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা ও আশ্বাস দুটোই হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।

সিলেট ও রাজশাহীতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়িতে পুলিশের তল্লাশির খবর এসেছে। পরিবেশ-পরিস্থিতি যদি সঠিকই থাকবে তাহলে সিলেটে দলীয় কর্মীদের ছাড়াতে একজন মেয়র প্রার্থীকে কেন থানার সামনে অনশন করতে হলো?

সংবিধান মতে,নির্বাচনের সময় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইসির সিদ্ধান্ত ও আদেশ মানতে বাধ্য। যদি কেউ সেটি না মানেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে তারা। আইনে তাই আছে।

আসন্ন সিটি নির্বাচনে অপর দুটিতে সমান সমান লড়াই হলেও সিলেটে বিএনপি কিছুটা বেকায়দায় আছে বলে মনে হচ্ছে। সিলেটে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হকের বিরুদ্ধে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ও জোট শরিক জামায়াতে ইসলামীর একজন প্রার্থীও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্য দুই সিটির একটিতে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি প্রার্থী দিয়েছে। এতে নিজ নিজ দল ও জোটের ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে। এই নির্বাচনে যে দলই জিতুক, নতুন নেতৃত্ব আসছে না। আওয়ামী লীগ থেকে দুজন সাবেক মেয়র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর বিএনপি থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্য বিদায়ী দুই মেয়র। একমাত্র ব্যতিক্রম বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।

এবারের সব সিটি নির্বাচনেই দুই প্রধান দলই জাতীয় ইস্যুকে সামনে এনেছে। তাদের যুক্তি-পাল্টা যুক্তি ভোটারদের কতটা প্রভাবিত করে, তার ওপরই নির্ভর করছে ফলাফলটি কেমন হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গাজীপুর-খুলনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে মোটামুটি একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব নয়। তবে কমিশনের কথা ও কাজে এ বিশ্বাস জন্মাতে হবে যে তারা কারও হুকুমে চলে না। নির্বাচন কমিশনের কথামত চলতে হবে রাজনৈতিক দল, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এর অন্যথা হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে।


লেখক: সাংবাদিক
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭