ইনসাইড আর্টিকেল

সৃষ্টিই বাঁচিয়ে রাখবে তাঁকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2018


Thumbnail

পাঠক তৈরির কারিগর ছিলেন গল্পের জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। তরুণ প্রজন্ম থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ তার পাঠক। তিনি এখন আর আমাদের মাঝে নেই, তবে তিনি তার ভক্ত ও পাঠকের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ। 

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে উপন্যাসিক, নাট্যকার, নাট্যনির্মাতা, চলচ্চিত্রকার, চিত্রশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার। তাঁর মতো এমন বহুমুখী প্রতিভা বাংলাসাহিত্যে বিরল। তবে হুমায়ূন আহমেদের আরও একটা পরিচয় আছে, যা অনেক হুমায়ূন ভক্তই জানেন না। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) যখন পাকিস্থান টেলিভিশন (পিটিভি) ছিল সেই সময় তিনি জাদুর অনুষ্ঠান করতেন নিয়মিত। তিনি জাদুখেলা দেখতে ও দেখাতে ভীষন ভালবাসতেন। অনেক জাদুখেলা জানতেন তিনি। তিনি শুধুই যে কথার জাদুকর তা নয়। বাস্তব জীবনেও তিনি ছিলেন একজন জাদুশিল্পি। তবে সব কিছু ছাপিয়ে তিনি যে কারণে তার ভক্তকুলের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন তা হলো, চরিত্র সৃষ্টি।

বাংলা সাহিত্যের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে বিখ্যাত প্রায় প্রতিটি লেখক তাঁদের লেখার মাধ্যমে বিখ্যাত সব চরিত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতায় অমিত ও লাবণ্য, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রীকান্ত ও মহেশ চরিত্র, সত্যজিতের পথের পাচালী’র অপু ও দুর্গা। সৈয়দ অয়ালী উল্লার লালসালুর মজিদ। তাঁদের লেখার এই সব চরিত্রগুলোর মাঝেই তাঁরা বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। তেমনি আমাদের হুমায়ূন আহমেদ তার লেখনী ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সৃষ্টি করে গেছেন জনপ্রিয় অনেক অনেক কালজয়ী চরিত্র।

হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক এগিয়ে চরিত্রের একটি হচ্ছে হিমু। প্রচন্ড রোদ নিউ মার্কেট এলাকায় দাড়িয়ে আছে একটি যুবক। হাতে একটি সিগারেট। আজ হরতাল। কখন একটি বাস পুড়বে সেই আগুন দিয়ে সে সিগারেট ধরাবে!’ এই বিস্ময়কর তরুণটির নাম হলো হিমু্। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ‘হিমু’ হতে চেয়ে খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবী পরে পিচ ঢালা পথে এখনোও অনেককে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

ফ্রেমের ভারী চশমা পরিহিত মিসির আলী অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা বিশ্বাস করেন না। মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং সংকট যুক্তির আলোকে ব্যাখা করাই হলো মিসির আলীর কাজ। যত রহস্যময় ঘটনাই ঘটুক যুক্তি দিয়ে তার সমাধান খুজে নেন মিসির আলী। হিমু’র ঠিক বিপরীত। হিমু কোনো যুক্তি মানে না, মিসির আলী আবার যুক্তির বাইরে হাঁটেন না। হুমায়ূন আহমেদের তৈরি করা চরিত্রগুলোর মধ্যে ‘মিসির আলী’ ছিল হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র।

হুমায়ূন আহমেদই আরেক বিস্ময়কর ইতিহাস সৃষ্টি করেন ‘বাকের ভাই’ চরিত্রের মাধ্যেমে। হুমায়ূন আহমেদের ‘কোথাও কেউ নেই’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত এই নাটক। এ নাটকে ‘বাকের ভাই’র চরিত্রে অভিনয় করেন আসাদুজ্জামান নূর। পাড়ার এক মাস্তানকে একটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসি দেওয়া হয়। ‘বাকের ভাই’র ফাঁসি বন্ধের দাবিতে মিছিলও বের করা হয়েছিল অনেক জায়গায়। নাটকের ‘বাকের ভাই’র ফাঁসি হওয়ার পর কেঁদেছিল বাংলাদেশের মানুষ।

হুমায়ূন আহমেদের চরিত্রগুলোর মধ্যে শুভ্র অন্যতম একটি চরিত্র। নিজেকে পৃথিবীর যাবতীয় জটিলতা থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। দৈনন্দিন সমস্যা নিয়ে ভাবতে চান না শুভ্র। সব সময় মোটা ফ্রেমের চশমা পড়ে বইয়ের মাঝে ডুবে থাকেন। হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় দেখা যায় এই শুভ্রকে। এ চরিত্রে অভিনয় করেন নায়ক রিয়াজ।

রুপা: হুমায়ূন আহমেদের আরেকটি সৃষ্টি হল রুপা চরিত্র। হিমুর মতো এক বাউন্ডুলেকে ভালোবাসে এই অসম্ভব রূপবতী মেয়েটি। সবসময় অপেক্ষা করে হিমুর পথের দিকে তাকিয়ে। হিমু ফোন দিয়ে বলে ‘রূপা আমি আসছি।’ হিমুর পছন্দের আকাশি রংয়ের শাড়ি, চোখে কাজল দিয়ে ছাদে কিংবা বারান্দায় দাড়িয়ে থাকে রূপা। কিন্তু হিমু আসে না। রুপাও জানে হিমু আসবে না। কিন্তু তারপরও অসম্ভব মায়া আর ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করে।

হুমায়ূন আহমেদ তার এই বিখ্যাত চরিত্রগুলোর মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল।

বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭