কালার ইনসাইড

হুমায়ূন আহমেদের জীবনের ৫ টি মজার ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2018


Thumbnail

হুমায়ূন আহমেদ যে কতটা রসিক মানুষ ছিলেন। তা তার আশেপাশের মানুষেরাই ভালো জানেন। বাইরের মানুষেরাও তাঁর লেখা পড়ে ও নানা সাক্ষাৎকার দেখে অনেকটা আঁচ করতে পেরেছেন। রসবোধ বা হিউমার আমাদের নতুন করে শিখিয়েছেন তিনি। পুরোদস্তুর মজার এ মানুষটি নিয়ে নানা হাস্যকর ঘটনা রটিয়ে আছে। কিছু তিনি নিজে বলেছেন, কিছু অন্যের বর্ণনায় জানা গেছে। সেখান থেকে সেরা ৫ টি ঘটনা নির্বাচন করা হলো:

১- ক্লাস টুতে উঠে আমি একটি অপকর্ম করে ফেলি। যে রূপবতী বালিকা আমার হৃদয় হরণ করেছিল, তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলি। প্রকৃতির কোন এক অদ্ভুত নিয়মে রূপবতীরা শুধু যে হৃদয়হীন হয় তাই না, খানিকটা হিংস্র স্বভাবেরও হয়। সে আমার প্রস্তাবে খুশী হবার বদলে বাঘিনীর মত আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খামচি দিয়ে হাতের দুতিন জায়গার চামড়া তুলে ফেলে। সে এতটাই পাষন্ড ছিল। সেই আবার স্যারের কাছে নালিশ করে। শাস্তি হিসেবে দুই হাতে দুটি ইট নিয়ে আমাকে দু’ ঘণ্টা নিলডাউন হয়ে বসে থাকতে হয়। সে শাস্তি দেখে তাকে আমি হাসতেও দেখেছি।

২- আমার প্রথম স্কুলে যাওয়া উপলক্ষে বাবা একটা নতুন খাকি প্যান্ট কিনে দিলেন। সেই প্যান্টের আবার জিপার নেই, সারাক্ষণ হাঁ হয়ে থাকে। অবশ্যি তা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হলাম না। নতুন প্যান্ট পরছি, এই আনন্দেই আমি আত্মহারা। মেজো চাচা আমাকে কিশোরীমোহন পাঠশালায় ভর্তি করিয়ে দিয়ে এলেন এবং হেডমাস্টার সাহেবকে বললেন, চোখে চোখে রাখতে হবে। বড়ই দুষ্ট কিন্তু। আমি সুবোধ বালকের মতো ক্লাস করতে গেলাম। ভাবলাম চাচাকে মিথ্যেবাদী প্রমাণ করবো। মেঝেতে পাটি পাতা। সেই পাটির উপর বসে পড়াশোনা। মেয়েরা বসে প্রথম দিকে, পেছনে ছেলেরা। আমি খানিকক্ষণ বিচার বিবেচনা করে সবচেয়ে রূপবতী মেয়েটার পাশে কোনমতে জায়ঘা করে নিলাম। রূপবতী বালিকা অত্যন্ত হৃদয়হীন ভঙ্গিতে সিলেটি ভাষায় বলল, এই তোর প্যান্টের ভেতরের সবকিছু দেখা যায়। ক্লাসের সবাই একসঙ্গে হেসে উঠল। সবচেয়ে উচ্চস্বরে যে ছেলেটি হেসেছে, তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। হাতের কনুইয়ের প্রবল আঘাতে রক্তারক্তি ঘটে গেল। ছেলেটির সামনের একটা দাঁতই ভেঙ্গে ফেললাম। হেডমাস্টার সাহেব আমাকে কান ধরে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার নির্দেশ দিলেন। ছাত্রছাত্রীদের উপদেশ দিলেন, এ মহাগুণ্ডা, তোমরা সাবধানে থাকবে। খুব সাবধান। পুলিশের ছেলে গুণ্ডা হওয়াই স্বাভাবিক। ক্লাস ওয়ান বারোটার মধ্যে ছুটি হয়ে যায়। এ দুই ঘণ্টা আমি কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আমার সময়টা খুব খারাপ কাটলো না। স্কুলের পাশেই আনসার ট্রেনিং ক্যাম্প। তাদের ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। লেফট রাইট। লেফট রাইট। দেখতে বড়ই ভাল লাগছে। তখনই মনে মনে ঠিক করে নিলাম আনসরা হবো।

৩- হুমায়ূন আহমেদের মা আয়েশা ফয়েজ হার্ট অ্যাটাক করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হলেন। হুমায়ূন আহমেদ পাশে বসা। সঙ্গে ডাক্তার-নার্সরাও রয়েছে। মার দিকে একটু বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন,‘ আম্মা এবার সিগারেটটা ছাড়েন।’

আশেপাশের সবাই হেসে উঠলো। একজন নার্স কৌতুহল নিয়ে ছোট ভাই আহসান হাবীবকে বললেন,`আপনার মা সিগারেট খান?’

আহসান হাবীব হেসে উত্তর দেন, ‘না। সিগারেট খেলে হার্ট অ্যাটাক হয় এমন ধারণা আছে আমাদের। আর ভাইয়া নিজে প্রচুর সিগারেট খান তো। মা তখন বকে আর এই কথা বলে। তাই শোধটা নিয়েছেন।’

৪- হুমায়ূন আহমেদ প্রচন্ড সিগারেট খোর এটা প্রায় সবাই কমবেশি জানেন। একবার প্লেনে করে দেশের বাইরে যাচ্ছেন। হঠাৎ প্লেনের মধ্যে সিগারেট খাওয়ার নেশা চেপে বসলো। হুমায়ূন আহমেদ এয়ার হোস্টেসকে ডেকে বললেন, ‘সিগারেট খাওয়া যাবে?’

এয়ার হোস্টেজ উত্তরে বললেন, ‘না। প্লেনের ভিতর ধুমপান করলে দুইশত ডলার ফাইন।`

হুমায়ূন আহমেদ চারশো ডলার দিয়ে বললেন, ‘আমি এখন দুইটা সিগারেট খাব।`   

এয়ার হোস্টেস ছুটে গেলেন পাইলটের কাছে। পরে পাইলট হুমায়ূন আহমেদকে ডেকে পাঠালেন ককপিটে। তারপর বললেন, ‘ডলার দিতে হবে না। আপনি এখানে বসে সিগারেট খেতে পারেন। আপনাকে আ,মি কিছুটা জানি।’

৫- হুমায়ূন আহমেদ চলচ্চিত্র বানাবেন। আগুনের পরশমণির প্রধান চরিত্র বদিউল আলমকে খুঁজছেন। একদিন শিল্পী ধ্রুব এষকে দেখে তিনি সেই চরিত্রের জন্য পছন্দ করে ফেললেন। কারণ, বদিউল আলমের নির্লিপ্ত ভঙ্গি ধ্রুব এষের মধ্যে পুরোপুরিই আছে। প্রস্তাব শুনে ধ্রুব এষ বললেন, ‘অসম্ভব! আমি জীবনে অভিনয় করিনি’। হুমায়ূন আহমেদ মুচকি হেসে বললেন, ‘তাতে কী? আমিও তো জীবনে সিনেমা বানাই নি!’



বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭