কালার ইনসাইড

তাঁদের স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্বরণীয় ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2018


Thumbnail

হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় বাঙালি কথা সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তার সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন কিছু মানুষ বিভিন্ন সময়ে বলেছেন স্বরণীয় ঘটনা। সে ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো:

অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেছেন ঘটনাটি-

হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে একেক সময়ে একেক রকম সম্পর্ক ছিল। কখনো পিতা-পুত্রের মতো, কখনো বন্ধুর মতো আবার কখনো বা বড় ভাই, ছোট ভাইয়ের মতো। ১৯৯৭-৯৮ সালের কথা। তখন আমরা সবুজছায়া নাটকটির শুটিং করছি গাজীপুরের হোতাপাড়ায়। রাতে সাপের প্রচণ্ড ভয়। হুমায়ূন ভাই বুদ্ধি দিলেন পায়ে লাইফবয় সাবান মেখে ঘুমাতে। পায়ে সাবান কেন? হুমায়ূন ভাই বললেন, ‘সাবানে কার্বলিক অ্যাসিড থাকে। পায়ে সাবান মাখলে সাপ আর ধারেকাছে ঘেঁষবে না। বুদ্ধিটা কাজে দিয়েছিল। আমার রাজ্যে আমি রাজা টাইপের মানুষ ছিলেন তিনি। যা ইচ্ছে তাই করতেন। এক রাতে, রাত ১২টার দিকে হুমায়ূন ভাই জানতে চাইলেন, ‘এখন কী খেতে চাও?’ আমি বললাম, ‘আম।’ তখনই সহকারীকে গাজীপুর পাঠালেন। তখনই আমরা সব আম শেষ করলাম সবাই বসে। তার সঙ্গে কাজ করা ছিল শিক্ষা ভ্রমনের মতো। মজাও যেমন হতো, শিখতামও।

অভিনেতা ড: এজাজুল ইসলাম বলেছেন ঘটনাটি-

স্যারের সঙ্গে ‘বনুর গল্প’ নাটকের শুটিংয়ের জন্য যাচ্ছিলাম। এক বাসে আমরা সবাই। স্যার সামনের দিকে বসা, আমি পেছনে। স্যার আমাকে তার পাশে বসার জন্য ডাকলেন। স্যার বললেন, ‘আমার খুব ইচ্ছা একটা সুন্দর বাগানবাড়ির। তোমাকে দায়িত্ব দিলাম, তুমি সব করবে।’ অনেক খুজে একটা জায়গা পেলাম। স্যারকে জানালাম। স্যার দেখতে এলেন। এত মুগ্ধ হতে স্যারকে আমি কখনো দেখিনি। আমাকে পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,‘তুমি আমার স্বপ্ন পূরণ করেছো’ আমি আনন্দে কেঁদে দিলাম।

নুহাশপল্লী হওয়ার পরে প্রথম ঘর বানানো হলো; বনের মাঝে কাঠের বাংলো। গভীর রাত পর্যন্ত সবাই জ্যোৎস্না দেখলাম। তারপর স্যার ঘুমাতে গেলেন। ঘরে যাওয়ার আগে আমাকে ডেকে বললেন, ‘ডাক্তার, ঘর তো একটা, তোমরা থাকবে কোথায়?’ আমি বললাম, ‘কোনো অসুবিধা হবে না, স্যার। আমরা থাকব এক জায়গায়।’ আমরা সবাই খোলা আকাশের নিচেই শুয়ে পড়লাম। সকালে উঠে স্যার খুব রাগ করেছিলেন আমরা কেন খোলা আকাশের নিচে থাকলাম।

অভিনেতা ফারুক আহমেদ বলেছেন ঘটনাটি-

আমার মন খারাপ। আমার নামে কোন বই উৎসর্গ করেননি তিনি। আমাকে কী পছন্দ করেন না! স্বাধীন খসরু একদিন ফোন দিয়ে বললেন, ‘স্যার তো আপনার নামে চমৎকার একটি বই উৎসর্গ করেছেন। কথাটা শুনেই আমি তুমুল রোমাঞ্চিত। খোঁজ নিয়ে দেখলাম হুমায়ূন ভাই আমাকে তাঁর লিলুয়া বাতাস বইটি উৎসর্গ করেছেন। রোমাঞ্চিত হয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। তখন তিনি দখিন হাওয়াতে থাকেন। মিষ্টি তো নিয়ে যাওয়া যাবে না। ওনার ডায়বেটিস। আমি ফুল নিয়ে গেলাম। দরজা খুললেন উনি। বললেন কখনো তো ফুলের পাপড়ি নিয়েও এসো নি। বই উৎসর্গ করেছি বলে ফুলের তোড়া নিয়ে এসেছ! আমি বিব্রত হয়ে মাথা নিচু করে রইলাম। হঠাৎ জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,‘আমারই ভুল হয়েছে। তোমাকে এতদিন কোন বই দিতে পারিনি। যাক, শেষমেষ একটা ভালো বই দিতে পারলাম।’ উনি এভাবে হুট করে মানুষকে দূরে ঠেলে আবার কাছে নিয়ে যতে পারতেন।

গায়ক এস আই টুটুল বলেছেন ঘটনাটি-

ছোট ভাই কুষ্টিয়া থেকে জানালেন,‘ দুইজন গনক খুঁজে পেয়েছেন। তাঁরা জ্বিন হাজির করে অতীত- ভবিষ্যৎ নিয়ে বলতে পারেন। ‘ বিনিময়ে পাঁচ কেজি গরুর মাংস রেধে খাওয়াতে হবে। আমি খুব উৎসাহ নিয়ে স্যারকে জানালাম। স্যারও দেখা করতে চাইলেন।

নুহাশপল্লীতে তাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করলাম। প্রায় ৫০ জনের মতো অতিথি এসে বসে আছেন স্যারের নিমন্ত্রণে! সবাই গণকদ্বয়ের কেরামতি দেখবেন। স্যারের আম্মা থেকে নায়ক রিয়াজ, নুহাশও এসেছে দেখলাম। আর আমাদের পরিচিতজনেরা তো ছিলেনই। গনকরা প্রথমে গরুর মাংস খেলেন। তারপর বললেন ‘ঘরের বাত্তি নিভান।’ রিয়াজ বললো আমি সবার আগে দেখাব। স্যারের এখানে আমি সবার আগে এসেছি। রিয়াজের হাত পর্যবেক্ষণ শেষে বললেন,‘আপনি তো বিশাল বড় অফিসে কাজ করেন। আপনার আব্বা আজকে সকালে ৭০০ টাকা দিয়ে একটা বিরাট ইলিশ মাছ কিনেছেন। আপনার আম্মা তো বছর দুয়েক আগে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি সবার কাছে দোয়াপ্রার্থী’। অথচ রিয়াজের আম্মা পাশে বসা। কথাগুলোও পুরোপুরি ভুল। স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘হুম!’ আমার এদিকে ঘাম ছুটে যাচ্ছে! আমার মান-ইজ্জত আর রাখল না!

রিয়াজের পরে নুহাশের পালা। ওকে নিয়ে বললো খুব শীঘ্রই বিয়ে করতে যাচ্ছে। আমি তখন পালানোর রাস্তা খুঁজছি। স্যার ততক্ষণে খেপে টং! চিৎকার করে ধমক দিলেন দুই গণককে,‘ভণ্ডামি করার জায়গা পাও না! পাঁচ কেজি মাংস খেতে চাও, খাও। তাই বলে এত বড় বাটপারি!’। পরে ওদের জিজ্ঞেস করলাম, আমার সঙ্গে এমনটা কেন করছো তোমরা। বললো, আমাদের কোন দোষ নেই। স্যারের কাছে আমাদের চেয়েও শক্তিশালি জ্বীন আছে। সে আগেই হাজির করে রেখেছিল। যার ভয়ে আমাদের জ্বিন ঘরেই ঢুকতে পারেনি।


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭