কালার ইনসাইড

সেই ‘প্রেম’ আছে সিনেমায়?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/07/2018


Thumbnail

সময়ের সঙ্গে মানুষের জীবনযাপন বদলে গেছে। সেই সঙ্গে বদলে গেছে রোমান্টিক সিনেমার প্রেক্ষাপটও। রোমান্টিক সিনেমার প্রসঙ্গ উঠলেই অনেকে একবুক হতাশা নিয়ে বলেন, সেই দিন কি আর আছে!মনে করেন কালজয়ী হিসেবে স্মরণীয় এবং বরণীয় হয়ে থাকা কিছু সিনেমার নাম।
প্রশ্ন হচ্ছে এখনকার সিনেমাতেও তো থাকে প্রেম ও রোমান্স। তবু কেন দর্শক গ্রহণ করছে না!কী নেই? ‘নেই গভীরতা’, বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। কেউ কেউ বলছেন শুধু দুটি ছেলেমেয়ের ওপরই গল্প তৈরি হচ্ছে। সেখানে নেই পারিবারিক সেন্টিমেন্ট, থাকছে না টানাপড়েনও। নেই গ্রামের গন্ধ মেশানো সহজ সরল প্রেম। বরং শহর কেন্দ্রিক যান্ত্রিক প্রেমই এখনকার সিনেমার মূল প্রেক্ষাপট।

সত্তরের দশকে রাজ্জাক-কবরী জুটির ‘রংবাজ’,‘নীল আকাশের নীচে’ কিংবা ‘বেঈমান’ সিনেমার কথা যদি তোলা হয়। সেসব সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য এখনো দর্শকের মনে গেঁথে রয়েছে। ফারুক-ববিতা জুটির ‘সুজন সখী’ কিংবা ‘নয়নমনি’ ছবিগুলোও এখন ইতিহাস। প্রেম- ভালবাসার পাশপাশি পারিবারিক ও বাস্তব জীবনের চিত্রও ফুটে উঠেছে সেসব সিনেমায়।

আশির দশকে রোমান্টিক সিনেমাগুলোর প্রেক্ষাপটে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। তখন রোমান্টিক সিনেমা মানেই ফোক ধাঁচে নির্মাণ। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’,‘ঝিনুক মালা’,‘প্রাণ সজনী’ সিনেমাগুলোতেও ছিল মাটির গন্ধ। সেসব সিনেমাতেও পরিচালকরা বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গে প্রেমকে তুলে ধরতেন। ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ সিনেমাটি তো রেকর্ড সংখ্যক ব্যবসা করেছিল।

নব্বই দশকে রোমান্টিক সিনেমা নির্মাণের হিড়িক শুরু হলো। রোমান্টিক মানেই ব্যবসায়িক সফলতা। এই দশকের নাঈম-শাবনাজ, সালমান শাহ- শাবনুর,মৌসুমী এবং পরে শাকিল খান-পপি জুটিগুলো দর্শকদের ড্রয়িংরুম ছাপিয়ে বেডরুম পর্যন্ত পৌঁছেছিল। এসব রোমান্টিক জুটির প্রেমে অনেকে এতই মুগ্ধ ছিলেন। নিজেদের বেডরুমেও অনেকে তাদের ছবি টানিয়ে রাখতেন। নাঈম-শাবনাজের ‘চাঁদনী’, ওমর সানী-মুক্তির ‘চাঁদের আলো’, সালমান শাহ-মৌসুমীর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা তিনটি দর্শকদের হৃদয়ে প্রেমকে জাগিয়ে তুলেছে নতুনভাবে। এরপর শাকিল খান-পপিকে নিয়ে নির্মিত ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’ সিনেমাটিও দারুণ সাড়া ফেলে। তবে এই দশকে শুরু হয় বলিউড রিমেক।

দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে অনেক সময় মিলত না বলিউড ঘরানার সিনেমা। খানিকটা প্রেম- রোমান্সের নামে অশ্লীলতাও এসে ভীড় করে। সালমান শাহর মৃত্যুর পর রিয়াজের উত্থান এবং শাবনূর-পূর্ণিমার সঙ্গে জুটিতে রোমান্টিক সিনেমা বেশ ভালোই চলছিলো। বেশির ভাগ গল্পই ছিল বাবা-মা এবং পরিবার-পরিজনদের অমতে দুটি ছেলেমেয়ের মন দেয়া-নেয়া।

দু:খের বিষয়, মাঝখানে ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত রোমান্টিক সিনেমা মুক্তি পাওয়া তো দূরে থাক শুটিংও হয়নি। অশ্লীলতায় ভেসে গেছে বাংলা চলচ্চিত্র। যা দু-তিনটি হয়েছে তা সামাজিক অ্যাকশনে কিছুটা রোমান্টিক। ২০০৬-এর শেষের দিকে বাংলা চলচ্চিত্রের আমূল বদলে যাওয়া শুরু হলো। এই সময় শাকিব-অপুর ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমাটি সবার মাঝে সাড়া ফেলে। একসঙ্গে টানা ছবি করে অপু- শাকিব। তবে প্রায় সিনেমা একই ধারার। শাকিব-সাহারা জুটিও চলছিলো। এরপরে আসে বাপ্পি-মাহি জুটি। ‘ভালোবাসার রঙ’ দারুণ ব্যবসা করে। এ সময়ে ‘কি দারুণ দেখতে’, ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’,‘জটিল প্রেম’,‘পোড়ামন’,‘প্রেম-প্রেম পাগলামী’ সিনেমাগুলোও বেশ রোমান্টিকধর্মী। তবে প্রেমের গল্পের ধারা যেন ক্রমেই পাল্টাতে শুরু করছে। লক্ষনীয় ব্যাপার হলো, বেশিরভাগ সিনেমার নামের সঙ্গে গল্পের কোনো মিল পাওয়া যায় না। দেখা যাচ্ছে সিনেমার নামটি খুবই রোমান্টিক অথচ সিনেমাটি অ্যাকশনধর্মী। মারপিট ও চিল্লাচিল্লিতে ভরপুর।

একটা সময়ে দর্শক সিনেমা দেখতে দেখতে নিজেকেই কল্পনায় নায়কের জায়গায় দাঁড় করাতেন। নিজের প্রেমিকাকে নিয়ে কল্পনা করতেন। আর এখন! না ভালো লাগে কাহিনী, না গানে সেই টান।

এ বছর ‘স্বপ্নজাল’ ও ‘পোড়ামন ২’ সিনেমা দুটি সকল মহলে বেশ সমাদৃত হয়েছে। ‘পোড়ামন ২’ সময়ের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা। সাধারণ দর্শক ফ্রেশ জুটি সিয়াম- পূজাকে গ্রহণ করেছে। সিয়াম- পূজার পাশপাশি অন্যান্য চরিত্রও ভালো করেছে। ফলশ্রুতিতে দর্শক আগ্রহ ছিল সিনেমাটি ঘিরে। জগাখিচুড়ী না করে পিওর রোমান্টিক সিনেমার মূল্য এখনো আছে তা ‘পোড়ামন ২’ প্রমান করেছে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭