ইনসাইড আর্টিকেল

বিশ্বে পবিত্র যত গাছ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/07/2018


Thumbnail

ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রথা-পবিত্রতা অনেকটাই পার্থিব। এই ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক প্রথার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিশ্বে অনেক উদ্ভিদের ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এগুলো শক্তিদায়ক, রোগমুক্তি দেয় আবার কখনোবা ঐশ্বরিক জগতের মাধ্যম হিসেবেও দেখা হয়।

সম্প্রতি সঙ্গীতশিল্পী জাহ্নবী হ্যারিসন মোট সাতটি পবিত্র গাছের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন বিবিসির সামথিং আন্ডারস্টুড অনুষ্ঠানে। কেন এই উদ্ভিদ এত পবিত্র, এগুলোর বিশেষত্ব কি, আবশ্যিকতাই বা কি, সেগুলোর বিস্তারিত ইতিহাস উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে। সেই কথাই জানালাম আজ:  

পদ্মফুল

পদ্মফুলের একেক স্তরের পাপড়ি প্রাচ্যের ধর্মীয় শিক্ষা বা সংস্কারে বিভিন্ন অর্থ বহন করে। হিন্দুদের কাছে ফুলটি জীবন, উর্বরতা আর পবিত্রতার প্রতীক। বৌদ্ধরাও ফুলটিকে পবিত্র মনে করে ।

কাদাময়লায় জন্মানো এই ফুলটি অনেকটাই নির্লিপ্ততারও প্রতীক। পুরাণ গল্পগাথাঁয় প্রচলিত রয়েছে, ভগবান বিষ্ণুর নাভির ভেতর থেকে পদ্মের জন্ম আর ব্রক্ষ্মা এর কেন্দ্রে বসে থাকেন। অনেকের বিশ্বাস, ঈশ্বরের হাত আর পা পদ্ম ফুলের মতো এবং তার চোখ ফুলের পাপড়ির মতো। ফুলের কুঁড়ি যেমন কোমল, ঈশ্বরের স্পর্শ আর দর্শনও তেমন। হিন্দু ধর্মমতে, প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই পদ্মের পবিত্র আত্মা রয়েছে।

মিসলটো

মিসলটো ক্রিসমাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কিন্তু প্রাচীন কেল্টিক ধর্মীয় নেতাদের ক্রিয়াকর্মে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল মিসলটো। তাদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যদেবতা টারানিসের সংস্পর্শ রয়েছে মিসলটোর মধ্যে। তাই যে গাছে মিসলটো জন্মাবে বা ছড়াবে সেটিও পবিত্র বিবেচিত হবে।

শীতের সময় যখন সূর্য অনেক দূরে থাকলে প্রধান ধর্মযাজক সাদা কাপড় পড়ে সোনার কাস্তে দিয়ে ওক গাছ থেকে পবিত্র মিসলটো কেটে সংগ্রহ করতেন। এই গাছ এবং ফল ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হত। ভাবা হত এর জাদুকরী ক্ষমতা রয়েছে। এটি রোগ এবং বিষ সারাতে পারে, মানবদেহের বৃদ্ধি করতে পারে, কালোজাদু থেকে রক্ষা করতে পারে। এটা একদমই ভুল। পেটে গেলে মিসলটো বিষাক্ত হয়ে ওঠে।

পেয়টে

পেয়টে ছোট, কাণ্ডহীন একপ্রকার ক্যাকটাস। এটি টেক্সাস এবং মেক্সিকোর মরুভূমিতে জন্মে থাকে। বহুকাল ধরে প্রাচীন গোত্র বা আদিবাসীরা এই গাছটি ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। মেক্সিকোর হুইকোল ইন্ডিয়ানসহ অনেক আদিবাসী আমেরিকান গোত্রের বিশ্বাস ছিল পবিত্র পেয়টে ঈশ্বরের সঙ্গে যোগাযোগে সাহায্য করবে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এর ব্যবহার মোহ বা আবেশ তৈরি করে বলে অনেকেই কল্পনা বা অলৌকিক জগতে বিচরণ করছেন বলে মনে করেন। এর বাইরেও পেয়টের মাদকতার কারণে ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বাইরে শিল্পী-লেখকদের কাছেও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

তুলসী

হিন্দু ধর্মমতে, কৃষ্ণ ও তাঁর ভক্তদের সেবার জন্য বৃন্দাবনের এক অভিভাবক হিসেবে দেবী বিরিন্দাই তুলসী পাতা হয়ে জন্ম নেন। প্রাচীন গ্রন্থে এটাও উল্লেখ আছে যে, কৃষ্ণ নিজেই তাকে তুলসী আকারে গ্রহণ করেছেন। ফলে যেখানেই এর জন্ম হোক, তাকেই পবিত্র বৃন্দাবনের মাটি বলে মানা হয়। পুরো পৃথিবী জুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতিদিনের ধর্মীয় কর্মকাণ্ডে, মন্দিরে বা বাসায়, তুলসী গাছের পাতা ব্যবহার করেন।

ইয়ু গাছ

সারাবছর সবুজ থাকে দেবদারু জাতের গাছ ইয়ু। এটি হাজার বছর বেঁচে থাকতে পারে। তাই অনেকেই ইয়ুকে পুনর্জন্ম এবং অনন্ত জীবনের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখেন। এই গাছের ভাঙা বা বিচ্ছিন্ন হওয়া ডালপালা থেকে নতুন গাছের জন্ম হতে পারে। পুরনো গাছের গুড়ির ভেতর থেকেও নতুন গাছের জন্ম হতে পারে, তাই অনেকের কাছে এটি পুনর্জন্মের উদাহরণ।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে ইয়ু একটি প্রতীকী গাছ। মৃত স্বজনদের কফিনে ইয়ু গাছের অঙ্কুর দেয়া হয় এবং অনেক চার্চের পাশে এই গাছটি দেখা যায়।

এর আগে থেকেও খ্রিষ্টান ধর্মের আগে অনেক আদিবাসীগোষ্ঠী এই গাছটিকে পূজা করছে। যেখানে ইয়ুগাছ ছিল, সেখানে প্রার্থনা কেন্দ্র নির্বাচন করতো।

গাজা

শুনতে অবাক লাগলেও রাস্তাফারি ধর্মীয়গোষ্ঠীর কাছে গাজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এর সদস্যরা বিশ্বাস করে বাইবেলে যে জীবনের গাছ রয়েছে সেটি নাকি গাজা গাছ। আর তাই সেটি পবিত্র।

গাজার অনেক নাম থাকলেও তারা একে `পবিত্র ভেষজ` বলে থাকে। বাইবেলের ২২:২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, `জাতিদের মুক্ত করার জন্যই এই ভেষজ`। তাদের ধারণা, গাজা তাদের ঈশ্বরের কাছাকাছি নিয়ে যায়, সঙ্গে আধ্যাত্মিক শক্তি বাড়ায়। এই জ্ঞান উদ্ভিদ অনেক রীতিনীতির সঙ্গে গ্রহণ করা হয়। সিগারেট বা পাইপের ভেতর ঢুকিয়ে এর ধোয়া নেয়ার সময় নানা ধর্মীয় আচার পালন করা হয়।

পুদিনা

আমরা সবাই মোটামুটি পুদিনাপাতার সঙ্গে পরিচিত। আমাদের খাওয়াদাওয়ার স্বাদ বাড়াতেইেএই পাতার কদর বেশি। কিন্তু অর্থোডক্স খ্রিস্টান সম্প্রদায় এবং গ্রীক চার্চে এটি পবিত্র ভেষজ হিসেবে গণ্য ছিল।

অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, যেখানে যিশু খৃষ্টের রক্ত পড়েছিল সেখানেই এই গাছের জন্ম হয়েছিল। এ কারণেই খৃষ্ট ধর্মের অনেক অনুষ্ঠানে পুদিনা পাতা থাকেই। পবিত্র পানি পরিশোধন করতে যাজকরা পুদিনা পাতা ব্যবহার করেন এবং ধর্মসভায় পুদিনা গাছ ভেজানো পানি ছিটানো হয়। চার্চের বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ক্রসের সঙ্গে পুদিনা গাছ থাকে এবং ছোট ডালপালা হাতে হাতে দিয়ে দেওয়া হয়।

অনেকে এসব ডালপালা পানিতে ভিজিয়ে রাখেন, যাতে সেটি নতুন শেকড় ছাড়ে, যাতে পরে তারা সেগুলো আশীর্বাদ হিসাবে নিজেদের বাড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭