ইনসাইড পলিটিক্স

অতঃপর বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/08/2018


Thumbnail

জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গত রোববার শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এর পরদিন থেকেই নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক বাস চালকের বিচারসহ নয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করতে শুরু করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। এটি সম্পূর্ণই একটি সামাজিক ইস্যু এবং আন্দোলনটি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা করলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে বিএনপির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

বিএনপি অনেকদিন যাবত নিজেরা কোনো রাজনৈতিক ইস্যু উত্থাপন করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারছে না। অনেক বছর ধরেই নিজস্ব কোনো আন্দোলনেও তাঁরা জনসমর্থন পায়নি। রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কারণে বিএনপির স্বভাব হয়ে গেছে নাগরিক আন্দোলনের ওপর ভর করে নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করার চেষ্টা করা, যা এবার স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে তাঁরা প্রমাণ দিল। এই আন্দোলন নিয়ে বিএনপির কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট অবস্থান নেই, কিন্তু স্বভাববশত আন্দোলনে সমর্থন ঠিকই দিল বিএনপি। এবং এমন একটা সময়ে এই সমর্থনের কথা তাঁরা বলল, যার পরদিন অর্থ্যাৎ আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিএনপি  সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া দুই সিটিতে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে এবং কারচুপির প্রতিবাদে সারাদেশের মহানগরগুলোতে প্রতিবাদ সমাবেশ করবে। তাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থনের ঘোষণা যে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত এ কথা সহজেই অনুমেয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও নিজেদের আন্দোলনকে একসূত্রে গেঁথে ফেলতে চায় তাঁরা যদিও দুই আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শুধু এবারই নয়, এর আগেও বিএনপি অনেকবার অন্যদের আন্দোলনে ভর করে সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার চেষ্টা করেছে। কোটা আন্দোলনের কথা এক্ষেত্রে আমরা বিবেচনা করতে পারি। প্রথম দিকে সেই আন্দোলনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিলেও পরে আন্দোলনটি দেশবিরোধী, সরকারবিরোধী চক্রের হাতে চলে যায়। আন্দোলনটির সম্পূর্ণ রাজনীতিকরণ হয়। জামাত-শিবিরের গোপন ভূমিকার সঙ্গে বিএনপি এই ব্যাপারে প্রকাশ্য ভূমিকা পালন করে। কোটা আন্দোলনেও বিএনপি একাত্মতা ঘোষণা করেছিল। এমনকি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফোন করে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন কোটা আন্দোলনকারীদের সংগঠিত করার জন্য।

তারও আগে বাম দলগুলোর আন্দোলনেও অযাচিতভাবে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি। কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকার রামপাল তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেওয়ায় ২০১৬ সালে দেশের বাম দলগুলো এই প্রকল্পের বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করে। কয়েকদিন পর এই আন্দোলনেও নিজেদের সমর্থন জানায় বিএনপি। বিএনপি সমর্থন জানানোর পর ধীরে ধীরে মূল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে আন্দোলন সরকার বিরোধী রূপ ধারণ করতে শুরু করে। এমনকি এই আন্দোলনকে ভারত বিরোধী একটি রূপ দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়। এসব কারণে এক পর্যায়ে আন্দোলন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয় বাম দলগুলো।

অতীতের দেখা গেছে, বিএনপি যেসব আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে তা থেকে তাঁরা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। এই কারণে আন্দোলনগুলো লক্ষ্য অর্জনের আগেই বিনষ্ট হয়ে গেছে। অন্যের আন্দোলনে ভর দিয়ে বিএনপি নিজেদের কার্য তো উদ্ধার করতে পারেইনি, বরং তারা অন্যদের আন্দোলনগুলোই মাঝপথে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এবারের আন্দোলনে ক্ষেত্রেও সম্ভবত এমনটাই হতে যাচ্ছে।

Read in English- https://bit.ly/2O12bAQ

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ  

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭