ইনসাইড আর্টিকেল

তিনিই বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/08/2018


Thumbnail

শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের। 

এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে আতিউর রহমানের ‘তিনিই বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম’ বইটি থেকে।

তিনিই বাংলাদেশ

‘শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা করে গড়ে তুলতে চাই। সে বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলব।’

(বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চ, ১৯৭২ -এর বেতার ও টেলিভিশন ভাষণ থেকে)

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ ঐতিহ্য। কিন্তু কখনো তা স্বাধীন দেশ হিসেবে তার আত্মপরিচয় তুলে ধরতে পারেনি। আলেকজান্ডারের সঙ্গে আসা ইতিহাসবিদ, চীনের পর্যটক হিউয়েন সুঙ (Huyen Sung) কিংবা মরক্কোর ইবনে বতুতার বিবরণীতে গঙ্গা-পারের বঙ্গের নাম বারবার উঠে এলেও বৃহৎ ভারতবর্ষের কোন অঙ্গরাজ্য বা প্রদেশ হিসেবেই তার পরিচয় মেলে। উনিশ শতকের শুরুর দিকে পূর্ব-বাংলা মাত্র কয়েক বছরের জন্য আলাদা প্রদেশের পুরোভাগে থাকলেও তা ফের বৃহৎ বাংলার অন্তর্ভূক্ত হয়ে যায়। ১৯০৫-১৯১১ পর্বে পূর্ব-বাংলার অধিবাসীদের আঞ্চলিক শাসনের খানিকটা স্বাদ পাওয়ার পর হঠাৎ করেই তা শেষ হয়ে যাওয়ার পর নানাভাবে ব্রিটিশ শাসকরা এ অঞ্চলের উঠতি এলিটদের সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই প্রচেষ্টার অন্যতম এক উদ্যোগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত  পূর্ব-বাংলার উপেক্ষিত সংখ্যাগুরু মানুষের মন থেকে বঞ্চনার অভিযোগকে স্তিমিত করার জন্যই হয়তো আবার বাংলাকে ভাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তির আশায় ততদিনে পূর্ব বাংলার সংখ্যাগুরু মানুষ পাকিস্তানের পক্ষ নিয়ে ফেলেছেন। স্বার্থান্বেষী সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকরা বাঙালি মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক বঞ্চনাকে কৌশলে দেশভাগের প্রচারণার কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। অখণ্ড বাংলার পক্ষে সীমিত আন্দোলন হলেও শেষ পর্যন্ত তা দানা বাঁধেনি। মূলত অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষায় পাকিস্তানের পক্ষ নিলেও অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের মোহভঙ্গ ঘটে। অমানবিক, অগণতান্ত্রিক, নিপীড়নবাদী রাষ্ট্র পূর্ব বাংলাকে ‘বন্দি বাজার’ করেই ক্ষান্ত হলো না, তার অধিবাসীদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চাইলো। বাংলাকে রাষ্ট্র-ভাষা না করার সিদ্ধান্তে বাঙালির মনে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ প্রকাশের উদ্দেশ্যে তারা দেশব্যাপী প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। আটচল্লিশে শুরু হওয়া ভাষা-আন্দোলন ব্যাপক রূপ নিতে শুরু করল। এক পর্যায়ে হলো গুলি। ঝরে পড়ল তরুণ তাজা প্রাণ। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাঙালির আÍপরিচয়ের বীজ বুনল সংগ্রামী তরুণেরা। তাদের এই আন্দোলনকে সংগঠিত করেছেন অনেকেই। তাঁরা প্রায় সবাই ছিলেন বিকাশমান বাঙালি মধ্যবিত্তের সন্তান। বলা চলে, তাঁরা ছিলেন কৃষি থেকে উদ্বৃত্ত-নির্ভর নব্যশিক্ষিত মধ্যবিত্তের সচেতন প্রতিনিধি। আটচল্লিশের ১১ মার্চ ভাষা দিবসে বন্দি হয়েছিলেন আন্দোলনের অগ্রসৈনিক তরুণ রাজনীতিজ্ঞ শেখ মুজিব। মুক্তি পেয়ে তিনি আরও বেগবান করলেন ছাত্রদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন।

ফের গেলেন জেলে। জেলেও বসে ছিলেন না। যোগাযোগ রেখেছিলেন আন্দোলনের বড়ো বড়ো ছাত্রনেতা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে। ধীরে ধীরে তাই তিনিই হয়ে উঠলেন বাঙালির আশা-ভরসার প্রতীক। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের পর বাঙালিকে আর তাই পিছনে তাকাতে হয়নি। আর প্রতিটি আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন শেখ মুজিব। পঞ্চাশের মাঝামাঝি তিনি প্রথমে প্রাদেশিক পরিষদে পূর্ব বাংলার অবহেলিত জনগণের পক্ষে ব্যাপক আওয়াজ তোলেন। কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলার প্রতি যে অন্যায্য আচরণ করছিল তিনি তা প্রাঞ্জল ভাষায় পরিষদে তুলে ধরেন। তখনই তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে, এভাবে চললে পূর্ব-বাংলা শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের কাঠামোতে থাকতে পারবে না। তাই বৈষম্যমূলক আচরণের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সুযোগ পেলেই তিনি জোরালো বক্তব্য তুলে ধরতেন। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি বাঙালির মুক্তি সনদ ৬ দফা উপস্থাপন করে হয়ে গেলেন তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। সামরিক শাসক আইয়ুব খানকে তিনিই প্রথম কার্যকরীভাবে চ্যালেঞ্জ করে বার বার জেলে গেছেন। এক পর্যায়ে সাহসী এই নেতাকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’র প্রধান আসামি করা হলো। তিনিই বীর যিনি মৃত্যুকে ভয় পান না। শেখ মুজিবকে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করানো গেলে তিনি নিশ্চিত ফাঁসিতে ঝুলতেন। কিন্তু তিনি মুত্যুকে ভয় পাননি বলে সাহসিকতার সঙ্গে লড়েছেন স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে। ততদিনে সারা পূর্ব বাংলায় সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিকে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। কার্যত জেলের তালা ভেঙেই উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের চুড়ান্তপর্বে শেখ মুজিবকে মুক্ত করে এনেছিলেন সংগ্রামী ছাত্র-জনতা। তাদের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি বনে গেলেন ‘বঙ্গবন্ধু’। পতন হল স্বেচ্ছাচারী আইয়ুবের। ইয়াহিয়া খান নয়া সামরিক শাসক হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। দিলেন নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচারণার মাধ্যমে বাঙালিকে ৬-দফার ছায়াতলে সমবেত করলেন বঙ্গবন্ধু। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ী হয়েও তিনি পশ্চিম পাকিস্তানী এলিটদের ষড়যন্ত্রের কারণে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে পারলেন না। উল্টো পূর্ব বাংলার বঞ্চিত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে শুরু করলেন অসহযোগ আন্দোলন। একাত্তরের মার্চ জুড়ে তিনি এ আন্দোলনের পাশাপাশি কার্যত স্বাধীন বাংলাদেশের শাসনভার হাতে নিলেন। ব্যাংক, বীমা, পুলিশসহ সব কর্মকর্তা তারই নির্দেশে সে সময় চলেছেন। কিছুদিন আলোচনার ভান করে ইয়াহিয়া ভুট্টো মিলে ২৫ মার্চ রাতে বাঙালির ওপর সামরিক হামলার পরিকল্পনা করল। এই আক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশ আর শেখ মুজিব শব্দ দুটো সমার্থভাবে উচ্চারিত হতে লাগল। শুরু হল দুঃখী মানুষের গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু বন্দি হলেন। তখনই অন্নদা শংকর রায় লিখলেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ ততদিন রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান’! পশ্চিম পাকিস্তানে এক জেলের অভ্যন্তরের সামরিক আদালতে তাঁর বিচার হল। তাকে ফাঁসির নির্দেশ দেয়া হল। এবারও তিনি মাথা নামালেন না। সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে মোকাবেলা করলেন। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চাপ, মুক্তিযোদ্ধাদের সমর-সাফল্যের কারণে তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফের বীরের মতো মাথা উচু করে ব্রিটেন, ভারত হয়ে স্বদেশে ফিরে এলেন। বাহাত্তরের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়েই রচিত হল ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে’ তাঁর যাত্রার প্রথম পর্বের শেষ অংক।

‘যারা বাংলাদেশকে লুট করেছে তাদের সঙ্গে কোনো আপোস নেই। দেশকে এবং দেশের মাটিকে ভালোবাসি বলেই আমি রাজনীতিতে আছি। আমি অন্যের পয়সা চাই না। কিন্তু বাংলাদেশের পাওনা কড়ায়-গণ্ডায় ফিরিয়ে দিতে হবে। দুঃখী বাংলার মানুষের মুখের হাসি ফুটিয়ে তুলতে প্রয়োজনবোধে জীবনদান করতে আমি প্রস্তুত আছি।’

(বঙ্গবন্ধু, নবগঠিত পটুয়াখালী সদর দপ্তর, ১১ জানুয়ারি, ১৯৭১)

এরপর তিনি দায়িত্ব নিলেন বাংলাদেশকে পুর্নগঠনের। সারা পৃথিবী থেকে তিনি পেলেন শুভেচ্ছা, সমর্থন। কিন্তু বাংলাদেশকে যারা চাননি তার নানা ষড়যন্ত্রের জাল বিছাতে থাকেন তাঁর সকল শ্রম ও চেষ্টা ধ্বংস করার জন্য। কিন্তু তিনি ভয় পাননি। চমৎকার একটি সংবিধান রচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন দেশে রুপান্তরিত করার অঙ্গীকার করলেন। এই মহতী কর্মে নিয়োজিত থাকার সময় তিনি এক মুহুর্তের জন্যও বিশ্রাম নেননি। সর্বক্ষণ কাজে ডুবে ছিলেন। বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুননির্মাণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠান বিনির্মাণ, সকল দেশের সঙ্গে কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, শরণাথীদের পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্বস্ত করে ফের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার মতো কঠিন সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে করতে তিনি তাঁর জীবনের শেষ মুহূর্তটি বিলিয়ে দিলেন। স্বাধীন দেশের প্রত্যাশা মোটানো মোটেও সহজ কাজ ছিল না। সবাই হয়তো আশা করেছিলেন তাদের দীর্ঘদিনের বঞ্চনা এক মুহূর্তেই তিনি তাঁর জাদুস্পর্শে মিটিয়ে দেবেন। এ চাওয়া যে বস্তুতপক্ষে কতটা অবাস্তব ছিল আমরা এখন ঠিকই বুঝি। কিন্তু সেদিন ছিল ভিন্ন সময়। তবুও তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর কর্মিষ্ঠ হাতের ছোঁয়া লাগিয়েছিলেন। অথচ অসহিষ্ণু তরুণ সমাজ, বাংলাদেশ বিরোধী শক্তি, আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, উপর্যুপুরি প্রাকৃতিক দুযোর্গ ও খাদ্য পরিস্থিতি, নিরাপত্তাহীনতা- সব মিলে তাঁর কঠিন পথচলাকে আরও বাধার মুখে ফেলে দেয়। সাহসী মানুষ বঙ্গবন্ধু এ সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে ঠিকই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। অধিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছিলেন যাতে বছর শেষে বাম্পার ফলন হয়। বাস্তবেও তাই হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রাণ পুরুষ বঙ্গবন্ধু জটিল অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনিশ্চয়তা দুর করার লক্ষ্যে জরুরী আইন জারি করলেন গড়লেন একক রাজনৈতিক মোর্চা ‘বাকশাল’। তিনি নিজেই বলেছেন, এ ছিল সাময়িক পিছু হটা। ঘনিষ্ঠজনদের মতে, দ্রুতই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও তাঁর ছিল। কিন্তু মধ্যবিত্তের একাংশ তাকে ভুল বুঝলেন। তবে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা তাকে এ কঠিন পর্যায় পার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতেও প্রস্তুত ছিলেন। তাছাড়া অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সে সময় সমাজে বেশ খানিকটা উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা দানা বেধেছিল। এই আপাত বিভ্রান্তির চোরাগলি দিয়ে ঢুকে পড়ে ষড়যন্ত্রকারীর দল। সামরিক বাহিনীর ক্ষুদ্র একটি অংশকে সঙ্গে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা রাতের অন্ধকারে বাঙালির ভরসাস্থল প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হত্যা করল। তাঁর দুই কন্যা বিদেশে থাকায় বেঁচে গেলেন। এভাবেই শারীকিভাবে নিঃশেষ হয়ে গেলেন বাঙালির প্রিয়তম জাতীয় বীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু বাঙালির মন থেকে তাকে মুছে ফেলার হাজারও চেষ্টা বিফলে গেছে। আজ তিনি আরও বড় হয়ে বিপুলভাবে বাঙালির হৃদয়ে আসন গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘদিন পরে হলেও পাঠ্য-পুস্তকে জাতির পিতা হিসেবে তিনি তাঁর যথাস্থান ফিরে পেয়েছেন। যারা তাঁর রাজনীতিকে সমর্থন করেননি তাঁরাও আজ বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের যথোপযুক্ত স্থানে দেখতে পেয়ে সন্তুষ্ট।

এদেশের নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশ সৃষ্টির আন্দোলনের সব কথা সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি আমরা। এটা আমাদের জাতীয় ব্যর্থতা। কিন্তু তাই বলে তিনি হারিয়ে যাওয়ার নন। কেননা তিনিই বাংলাদেশের প্রতীক। তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশকে যে ভাবাই যায় না। সেই যে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করেছেন, তারপর একদিনের জন্যও বাংলাদেশের স্বার্থ ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে পারেননি তিনি। আরও অনেক রাজনৈতিক নেতাই বাংলাদেশের জন্য সংগ্রাম করেছেন। কিন্তু সংকটকালে তিনি যেমন করে বুক ফুলিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন বাঙালির মুক্তির জন্য তেমনটি আসলেই বিরল। আর সে-কারণেই তিনি হতে পেরেছেন বাংলাদেশের আরেক নাম। গবেষক এস.এ. করিম ভুল লেখেননি যে, বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্ব ছাড়া বাংলাদেশ ঐ সময় স্বাধীন হতে পারত কিনা সে-বিষয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে। তাঁর নিজের কথায়: ‘In the final analysis, history is made by men and it is unlikely that Bangladesh would have won its independence when it did without the leadership of one man, Sheikh Mujibur Rahman, whose single concern during thirty odd years of ceaseless activity, spanning his entire adult life, was the promotion by every means the self-determination of his people.’ (S.A. karim, Sheikh Mujib: Triumph and Tragedy, UPL, 2005, p.3) এমন করে সর্বক্ষণ স্বদেশের স্বাধীনতার জন্য নিমগ্ন ছিলেন বলেই তিনি স্বীকৃতি পেয়েছেন বাঙালি ‘জাতির পিতা’ হিসেবে। স্বাধীনতার প্রধান রূপকার তিনি। সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। বাঙালির মেজাজ, আবেগ, লড়াকু মন, প্রতিবাদ, প্রতিদান, মানবিকতা, নমনীয়তা, সাহস- সকল বৈশিষ্ট্যেরই প্রতীক তিনি। এখনও তিনিই যে আমাদের আশা-ভরসার প্রতীক। অথচ এমন একজন জাতীয় বীরকে হত্যা করলো এদেশেরই কতিপয় বিশ্বাসঘাতক। সে কারণেই জাতি হিসেবে বাঙালির দুঃখ যেন আর শেষ হচ্ছে না। জাতীয় এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের এই বিশ্বাসঘাতকদের শাস্তি দিতেই হবে। পাশাপাশি, পুরো জাতিকে প্রস্তুত করতে হবে তাঁর আদর্শের কল্যাণধর্মী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার জন্য। ইতিহাস ফের আমাদের সেরকম রাষ্ট্র গড়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারাই। আমাদের সুকর্মের মধ্যেই তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন। তাঁর নিকটেই আমাদের অস্তিত্বের ঋণ। আর সে কারণেই নিরন্তর মনে হয়, তিনিই বাংলাদেশ।  

[ড. আতিউর রহমানের লেখা ‘শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম’ বই থেকে নেওয়া]


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭