নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 05/08/2018
শেষ পর্যন্ত গুজবের শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। এখন কোনো কথাই প্রথমবারে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। মারা না গেলেও প্রচার করা হচ্ছে মৃত্যু সংবাদ কিংবা ধর্ষণের খবর। প্রথমে অনেকে এসব খবর বিশ্বাস করলেও একটু পরেই খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে খবরটি মিথ্যা। পরিকল্পিতভাবে একটি মহল এসব ছড়ানোর চেষ্টা করছেন।
সড়ক নিরাপদের আন্দোলনকে অনেকে সরকার পতনের আন্দোলন বানানোর স্বপ্ন দেখছেন। ইতিমধ্যে এ ধরনের একাধিক ষড়যন্ত্রকারী ধরা পড়েছেন। কিন্তু এখন অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যে এখন যে আন্দোলনটি আর নেই তা বলাই বাহুল্য। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের সস্তা চেষ্টায় রূপ নিয়েছে নিরাপদ সড়ক দাবির এ প্রয়োজনীয় আন্দোলনটি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভালো একটি চিন্তাকে ধংসাত্মক পথে নিতে বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে একটি রাজনৈতিক অপশক্তি। শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে ট্রাফিক পুলিশ ও যোগাযোগ প্রশাসন যে কাজটি করতে পারেনি তা দু-তিন দিনে করে দেখিয়েছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া তরুণরা। আমরা রাস্তাঘাটে দেখেছি লেন মেনে লাইন দিয়ে বাস-ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, রিকশাসহ সব ধরনের যান। এম্বুলেন্স বা জরুরি কাজে নিয়োজিত যানের জন্য তারা ব্যবস্থা করেছে ইমার্জেন্সি লেন। যার দরুন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে এই সমস্ত যানবাহনগুলো। কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গাড়ি ও ড্রাইভারের লাইসেন্স চেক বা পরীক্ষা করছে। এক শিক্ষার্থী নিজের বাবার গাড়ির লাইসেন্স চেক করে বাংলাদেশের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের দৃঢ়তা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে সত্যিই আশান্বিত হতে হয়। তারা খুব দক্ষতার সঙ্গে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা করেছে। কোনো ন্যায় দাবি আদায়ে কীভাবে আন্দোলন করতে হয় তা তারা সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে তাদের অনেক ভিডিও, ছবি ও প্লাকার্ডের স্লোগান ভাইরাল হয়েছে। যেমন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’, ‘মামা লাইসেন্স আছে তো?’ ভাইরাল হচ্ছে, বৃষ্টিতে ভিজে রিকশার লাইন ঠিক করে দেবার ছবি, অসুস্থ রিকশাচালককে নিজেই রিকশা চালিয়ে হাসপাতালে নেবার ভিডিও, রাস্তার কাঁচ পরিষ্কার করা, রোগী ও ডাক্তারকে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া। লাইসেন্স না থাকায় একাধিক মন্ত্রীও রাস্তায় গাড়ি থেকে নেমে যেতে দেখা গেছে।
তারা সকলকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, তাদের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি-বিচ্যুতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি ছিল। তারপরও এই জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে স্বয়ং পুলিশে বাহবা দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে অভিভাবকরাও সহযোগিতাপরায়ণ মনোভাব দেখিয়েছে। যেখানে তাদের নামে এমন অভিযোগ ছিল- ঢাকার মহানগরের অভিভাবকরা ভিতু ও তাদের ছেলে-মেয়েদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সোচ্চার হতে বাধা দেয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে অনেক তারকা তাদের শ্যুটিং ফেলে বৃষ্টিতে কাকভেজা ভিজেছে। পুলিশের কেন্দ্রীয় প্রশাসন তাদের সঙ্গে সদয় আচরণ করতে নির্দেশ দিয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সরকার ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান আন্দোলনরত ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নমনীয়তা দেখাচ্ছে।
কিন্তু একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না এই আন্দোলন শুরুতে এটি শুধু সাদা-কালো রঙে রঙিন থাকলেও আস্তে আস্তে তা নানা রঙে রঙিন হচ্ছে। এই আন্দোলনে লাগছে রাজনীতি, দলীয় স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থের রঙ, যা একটা ইতিহাস সৃষ্টিকারী সৃজনশীল আন্দোলনকে বিতর্কিত করে তুলছে। তারা তাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে গেলেও এটা দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ যখন সচিব-আমলা, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত বাহিনী ছেলে-মেয়েদের কাছে তাদের লাইসেন্স কেন্দ্রিক অনিয়মের জন্য ধরাশায়ী হচ্ছে; তখন তারা অপমানের পাশাপাশি অসহায়ত্ব দেখাচ্ছে। এতে করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাচ্ছে, নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় মনোবল। যা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অশনিসংকেত ছাড়া কী বলা যায়। এই অচলায়তন ভাঙতে সরকারসহ সর্বস্তরের জনগণকে দায়িত্বশীল হবার কোনো বিকল্প নেই।
এখন সময় হয়েছে এই উদ্ভূত পরিস্থিতি আশু সমাধান করে ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা সবচেয়ে অগ্রগণ্য। অবশ্য ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় নিহত শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম রাজীবের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
দাবি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রধানমন্ত্রী নৌপরিবহন মন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন অথবা পরিবহন সংগঠন থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন তাহলে চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনা কিছুটা বন্ধ হতে পারে। কিন্তু কোথায় যেন আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট। তাই সরকারের উচিত তাদের আস্থা ও বিশ্বাস তৈরি করার মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা। তা না হলে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে জটিল থেকে জটিলতর রূপ লাভ করবে। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ্য করেছি, গাড়ি ও পরিবহন শ্রমিকদের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘট চলছে। এই অযাচিত কর্মকাণ্ড যাত্রীসাধারণকে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই সুযোগে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করবে যা কারো জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
আমরা চাই না নিরাপদ রাজপথ সড়কের ভাল আন্দোলনটি কোন অশুভ শক্তির মদদে নষ্ট হয়ে যাক।
লেখক: সাংবাদিক
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭