ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পাকিস্তান কেন ব্যর্থ রাষ্ট্র?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 14/08/2018


Thumbnail

একটি দেশ স্বাধীনতা পেলেই কি স্বাধীন হতে পারে। স্বাধীনতার সাত দশক পর পাকিস্তানের কোনো বোঝসম্পন্ন নাগরিক এমন প্রশ্ন তুলতেই পারেন। কারণ আজ স্বাধীনতার ৭১ তম বার্ষিকীতেও বিশ্বে ব্যর্থতম রাষ্ট্রের তকমা লাগানো পাকিস্তানের গায়ে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর সাত দশক পেরিয়ে গেলেও এখনো অস্তিত্বের সংকটে পাকিস্তান। বর্তমানে বিশ্বে ব্যর্থ রাষ্ট্রের প্রতীক এই দেশ। কেউ কেউ আবার একে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের আখ্যাও দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেন এ অবস্থা তাদের? স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও কেন উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই পাকিস্তানের?

পাকিস্তানের মাত্র একদিন পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হয় ভারত, অথচ ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম অর্থনৈতিক পরাশক্তি। সেখানে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশের তালিকায় পাকিস্তানকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। কারণ স্বাধীন হওয়ার পরে ভারত অত্যন্ত দ্রুত গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে। পাকিস্তান সে পথ নেয়নি। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫২ সালেই সাধারণ নির্বাচনে যায় ভারত। নতুন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পাকিস্তান স্বাধীনতার ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের মুখ দেখে। দীর্ঘ দিন গণতন্ত্রের পথে না হাঁটায় স্বাধীনতার পর প্রায় দু’দশক ধরে পাকিস্তানে রাষ্ট্রক্ষমতার হাতবদল হয়েছে কোনও নির্দিষ্ট নীতি না মেনে। রাষ্ট্রচালনায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে অযথা দেরি হওয়ায় সেনাবাহিনী শাসন ক্ষমতায় নাক গলানোর সুযোগ পেয়ে যায়।

বিশ্লেষকরা বলেন, পাকিস্তানের ব্যর্থতার মূল কারণ হলো, এটি কোনো আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। যেকোন দেশ, প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তিরও সাফল্য পেতে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, সেটি হলো নীতি বা আদর্শ। এই বিষয়টিই নেই পাকিস্তানে।

ইসলামের ওপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের অভ্যুদয় ঘটলেও এর বিভিন্ন কর্মকান্ডই ইসলাম পরিপন্থী। বিশ্লেষকরা এমনও বলে থাকেন যে, প্রতারণা-প্রবঞ্চনার মাধ্যমেই জন্ম হয়েছে দেশটির। এটা গণতান্ত্রিক নাকি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র, এ বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। যখন যিনি ক্ষমতায় আসেন, তিনিই তার খেয়াল খুশিমতো পাকিস্তান পরিচালনা করেন।

জাতিগত দমন-পীড়নও পাকিস্তানের ব্যর্থতার বড় কারণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই দেশটির শাসকগণ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালীদের ওপর বৈষম্যমূলক আচরণ করতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান একের পর এক ব্যর্থতার রেকর্ড গড়ে চলেছে।

পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি অঞ্চলের জনগোষ্ঠী এখনও বিভিন্নভাবে বৈষম্যমূলক আচরণের স্বীকার হচ্ছে। দেশটির নারীরাও প্রতিটি ক্ষেত্রে বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে। আর নারী জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে কোন দেশই সফল হতে পারেনি।

সামরিক শাসন পাকিস্তানের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময়ই সেনাবাহিনী দেশটিতে নেতৃত্বে ছিল। বলা হয়ে থাকে, দেশটির কোন সরকারই সেনাবাহিনীর ইচ্ছা ছাড়া ক্ষমতায় আসতে পারেনি। তাছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো নির্বাচিত সরকারই তাঁদের মেয়াদ শেষ করতে পারেনি পাকিস্তানে। মেয়াদ পূর্ন হওয়ার আগেই বিভিন্ন কারণে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে।

পাকিস্তানের আরেকটি বড় সমস্যা হলো জঙ্গিবাদ। দেশটির সেনাবাহিনীই জঙ্গিদের লালন করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশ্বের সভ্য দেশগুলো যখন নিজেদের ভূখণ্ড জঙ্গিমুক্ত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, পাকিস্তান সেখানে জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। শীর্ষ জঙ্গি সংগঠন আল কায়েদার প্রধান ওসামা বিন লাদেনকেও পাওয়া গিয়েছিল দেশটির আবোটাবাদ এলাকায়। যার পাশেই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ঘাঁটি।

চলতি সপ্তাহেই সাবেক ক্রিকেটার ও পাকিস্তান তেহরিক এ ইনসাফের প্রধান ইমরান খান দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। এর আগে নওয়াজ শরীফ ও তাঁর দল যখন শাসন ক্ষমতায় ছিল তাঁদের মতো দেশ চালিয়েছে। আবার দুর্নীতিবাজ বলে বিশ্বব্যাপী পরিচিত ভুট্টো পরিবার যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন একভাবে পাকিস্তান চলেছে। এবার নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান কীভাবে দেশ চালায় সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে এরই মধ্যে ইমরানের বিরুদ্ধেও নানা কথা শোনা যাচ্ছে। পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর হাতে বর্গা দেওয়ার মুচলেকা দিয়েই ইমরান ক্ষমতা পাচ্ছেন বলেও প্রচার আছে। এমন মানুষ পাকিস্তানকে কতোটা মানুষ করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।


বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭