ইনসাইড পলিটিক্স

মার্কিন প্রস্তাবে ভারতের না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 15/08/2018


Thumbnail

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে গত কয়েকমাস ধরেই মার্কিন দূতাবাসের তৎপরতা লক্ষণীয়। সুশীল সমাজের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। বৈঠক করেছে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের সুশীল সমাজের সঙ্গেও। মার্কিন দূতাবাসের বৈঠক হয়েছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবদের সঙ্গেও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়েছে। আর গত কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নিয়েই বিরূপ মন্তব্য করেছে মার্কিন দূতাবাস। বিশেষ করে গাজিপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে এর নিরপেক্ষতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। এমন তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে। আর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের যে অবস্থান তা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরেরই অবস্থান।

এই অবস্থায় আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে, সব দল বিশেষ করে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হয়েছে মার্কিন দূতাবাস। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তির উত্থান নিয়েও উদ্যোগী যুক্তরাষ্ট্র। আর এই তৃতীয় শক্তির মধ্যে বিএনপির একটি অংশকে আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের সঙ্গে আছে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রায় সব পশ্চিমা দেশ। মার্কিন উদ্যোগকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমর্থন করছে তারা। কিন্তু গত এক দশক ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন বাংলাদেশের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব রাখে ভারত। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের ভূমিকা ছিল প্রকাশ্য ও স্পষ্ট। এবারের নির্বাচন নিয়েও পশ্চিমা বলয়ের বাইরে ভারত আলাদাভাবে ভূমিকা নিচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একাধিক বৈঠক হয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে ৩১ আগস্ট নেপালে বিমসটেক সম্মেলনে দুই নেতার মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেছে। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দলও সম্প্রতি ভারত সফর করেছে। আর এরপরই ভারত নিয়ে বিএনপির নীতি ও অবস্থান পাল্টে যায়।

এই পটভূমিতে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে ভারতের উদ্যোগ এবং পশ্চিমাদের উদ্যোগের মধ্যে একটি সমন্বয়ের প্রচেষ্টা ছিল মার্কিন দূতাবাসের। মার্কিন দূতাবাস চেয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের  ব্যাপারে ভারত ও পশ্চিমাদের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। মার্কিন দূতাবাসের চাওয়া ছিল তিনটি। প্রথমত, নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, সকল দল যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়। তৃতীয়ত, ক্ষমতাসীন দল যেন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে না পারে। এসব বিষয়েই ভারতের সঙ্গে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে যেতে চেয়েছিল মার্কিন দূতাবাস।

এ লক্ষ্যে আজ ভারতের ৭১তম স্বাধীনতা দিবসে সকালেই ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট ফোন করেন ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে। বার্নিকাট ভারতীয় হাইকমিশনারকে মার্কিন দূতাবাসের তিনটি চাওয়া এবং ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন অভিন্নভাবে কাজ করে সেই কথা বলেন। কিন্তু আশাহত হতে হয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। ভারতীয় দূতাবাস থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন দেশটির অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধান ও নির্বাচনের আইন-কানুন, বিধি-বিধান অনুযায়ী হওয়া উচিত। এই নির্বাচনে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ গণতন্ত্রের জন্যে শোভন বা গৌরবময় কোনোটিই নয়।

ভারত মনে করে, বাংলাদেশ কীভাবে নির্বাচন করবে তা ঠিক করবে এদেশের জনগণ ও নির্বাচন কমিশন। ভারত এই ব্যাপারে শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের মনোভাব যাচাই-বাছাই করতে পারে। কিন্তু কাউকে চাপ দেওয়া বা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে শর্ত জারির পক্ষে নয় ভারত। কারণ তা হবে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের রাষ্ট্র হিসেবে ভারত কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার নীতি গ্রহণ করে আসছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের এই অবস্থান আগামী নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বার বার বলা হয়েছে, সংলাপের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করানোর জন্য আলাদাভাবে বিশেষ কোনো সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে না এবং এমন কোনো শর্তও মানা হবে না। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের সঙ্গে ভারতেরও অবস্থানের সামঞ্জস্য পাওয়া গেল ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপে। 

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বর্তমান সরকারের আমলেই একটি নতুন মাত্রা পেয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ভারত সংলগ্ন সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা বন্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর এর ফলেই ভারতের অর্থনীতিতে নতুন করে গতির সঞ্চার হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এসব কারণেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর ভারতের আলাদা একটি সহানুভূতি আছে বলে মনে করা হয়। আর এই নির্বাচনে ভারত যদি মার্কিন নীতি ও শর্তগুলো মেনে না নেয় তাহলে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার একটি সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।   

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭