ইনসাইড আর্টিকেল

জীবনানন্দের স্মৃতিবিজড়িত অক্সফোর্ড মিশন গির্জা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/08/2018


Thumbnail

‘আকাশে সাতটি তারা’ রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের একটি বিখ্যাত কবিতা। এই কবিতাটি কবি লিখেছিলেন তাঁর প্রথম প্রেমিকা মনিয়াকে নিয়ে। কবির সঙ্গে মনিয়ার দেখা হয়েছিল বরিশালের একটি গির্জায়। জীবনানন্দ দাশের স্মৃতিবিজড়িত সেই গির্জাটির নাম অক্সফোর্ড মিশন গির্জা। কবির প্রেমিকা মনিয়ার মা ছিলেন এই গির্জার একজন সেবিকা। 

অক্সফোর্ড মিশন গির্জাটি কবি জীবনানন্দ দাশের বসতবাড়ির কাছেই অবস্থিত। ছাত্রাবস্থায় কবি অক্সফোর্ড মিশনের ছাত্রাবাসে দীর্ঘ সময় বাস করেছেন। ফলে এখানকার ফাদার ও মাদারদের সঙ্গে ছিল তাঁর ঘনিষ্ঠতা। অক্সফোর্ড মিশন গির্জার পামগাছের পাতায় পাতায় রোদ্দুরের খেলা আর বাতাসে পাতার দোল খাওয়ার দৃশ্য কবির হৃদয়কে আলোড়িত করে তুলেছিল।  

প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত বরিশাল শহর কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত। এই শহরের পুরনো নাম চন্দ্রদ্বীপ। এই শহরেই বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি স্থাপনা অক্সফোর্ড মিশন গির্জা অবস্থিত।

১১৫ বছর পুরনো এ গির্জাটি শুধু সুন্দরই নয়, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ গির্জা এবং দেশের দৃষ্টিনন্দন পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। এটি ‘লাল গির্জা’ নামেও পরিচিত স্থানীয়দের কাছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া গির্জাটির নির্মাণশৈলীতে রয়েছে নানা বৈচিত্র্য।  

গির্জাটি একতলা হলেও উচ্চতা চারতলা ভবনের সমান। এই গির্জার প্রাথমিক নকশা করেন সিস্টার এডিথ। পরে তৎকালীন বিখ্যাত ক্রীড়াবিদ ফাদার স্ট্রং সেই নকশা উন্নত ও চূড়ান্ত করেন। প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফ্রেডরিক ডগলাস। ১৯০৩ সালের ২৬ জানুয়ারি উদ্বোধন করা হয় এই গির্জার। 

মূল গির্জাটির রং লাল হলেও এর চারিদিকে শুধুই সবুজের সমারোহ। গির্জার দক্ষিণ পাশে আছে শানবাঁধানো বড় পুকুর। টলটলে পুকুরের পানিতে গির্জার মোহনীয় প্রতিবিম্ব দেখে মন ভাল না হয়ে উপায় নাই।

গির্জা সূত্রে জানা যায়, গির্জাটির স্থাপনা নির্মিত হয়েছিল দেশী মাটি দিয়ে তৈরি পোড়া লাল শক্ত ইট দিয়ে। এত বছর অতিবাহিত হলেও নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণর কারণে গির্জাটি এখনো ঝকঝকে-তকতকে অবস্থায় দেখা যায়। 

গির্জা ছাড়াও ছোট-বড় তেরটি পুকুর, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আবাসিক ছাত্র হোস্টেল, ফাদার ও সিস্টারদের হোস্টেল, পাঠাগার ও হাসপাতাল আছে এই অক্সফোর্ড মিশন চার্চ প্রাঙ্গণে।

অক্সফোর্ড মিশন গির্জাতে বেড়াতে গেলে দেখা পাওয়া যাবে মানবদরদি ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্টের। এই মহীয়সী নারী ৫৭ বছর ধরে এদেশে মানুষের সেবা করে চলেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবনের মায়া তুচ্ছ করে যুদ্ধাহত ব্যক্তিদের শুশ্রূষা করেছেন তিনি। লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট ওরফে লুসি হল্ট ৫৭ বছর ধরে অক্সফোর্ড মিশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। 

শত বছরের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্যের কারণে এই গির্জার প্রতি পর্যটকরা বেশি আগ্রহী। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের বিনোদনের অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে বরিশালের অক্সফোর্ড মিশনের লাল এই গির্জা।


বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭