নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 17/08/2018
‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা আর কতকাল ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়’
কবি শামসুর রাহমান ছিলেন একাধারে কবি, সাংবাদিক ও সম্পাদক। কবিতাকে তিনি ব্যবহার করেছেন সমকালকে ধারণ করতে, করেছেন প্রতিবাদী চেতনা প্রকাশের দৃঢ় হাতিয়ার। তাঁর অসাধারণ কাব্যভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়েছে পাঠক। তাই পঞ্চাশ দশকের কবিদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কবি হিসেবে শামসুর রাহমান অন্যতম।
কবিতার বরপুত্র, কবি শামসুর রাহমানের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৬ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। শামসুর রাহমান আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন সমাজসচেতন নাগরিক কবি হিসেবে। মহান এই কবিকে স্মরণ করে আজ দিনব্যাপী বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি।
১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকা শহরের মাহুতটুলীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী গ্রামে। পিতা- মুখলেসুর রহমান চৌধুরী, মাতা- আমেনা খাতুন। তাঁর শিক্ষাজীবনের সূচনা হয় ১৯৩৬ সালে ঢাকার পোগোজ স্কুলে। তিনি ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৭ সালে আইএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে তিন বছর পড়াশোনা করলেও পরীক্ষায় অংশ নেননি তিনি।
এরপর ১৯৫৭ সালে ইংরেজি দৈনিক মর্নিং নিউজে সহসম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৭-৫৯ সাল পর্যন্ত রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রে অনুষ্ঠান প্রযোজক ছিলেন। পরে আবার মর্নিং নিউজে যোগদান করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান (পরে দৈনিক বাংলা) প্রকাশনার শুরুতে সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। দীর্ঘ ১৩ বছর এ পদে কর্মরত থেকে ১৯৭৭ সালে তিনি সম্পাদক হন।
‘উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ’-স্বৈরাচারী শাসকের অত্যাচারী চিৎকার শুনে এমনই বাক্য ধ্বনিত হয়েছিল তাঁর প্রতিবাদী লেখায়, তাঁর কণ্ঠে। তাঁর চেতনায় ছিল বিশুদ্ধ নাগরিক চিত্ত আর হৃদয়ে ছিল দেশের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা। তিরিশ পেরিয়ে গেলেও রবীন্দ্র কাব্যধারা অতিক্রমণের প্রবণতা চল্লিশের দশকেও প্রবাহিত ছিল। নতুন বাঁক সৃষ্টির দায়বদ্ধতা তাঁদের মধ্যে ততটা প্রগাঢ় হয়ে ওঠেনি। পঞ্চাশের দশকে আত্মপ্রকাশ করেন কিছুটা স্বাতন্ত্র নিয়ে- আল মাহমুদ, হাসান হাফিজুর রহমান, শহীদ কাদরী প্রমুখ। তাঁদের সঙ্গেই স্বমহিমায় উজ্জ্বল হয়ে নিজের বিশেষত্বকে প্রকাশ করেন শামসুর রাহমান। বিশ্লেষকদের মতে, তিরিশের পরে শামসুর রাহমানই বাংলা কবিতার প্রধান কবি। তাঁর কবিতায় পাওয়া যায় কালের প্রভাবে পীড়িত, বিশ্বাসে চিড় ধরা, প্রতিবাদী ও সংগ্রামী এক কবি-মন। দেশের প্রতিটি পদক্ষেপে রয়েছে তাঁর সরব প্রতিক্রিয়া, প্রতিটি সংগ্রামে তিনি কলম তুলে নিয়েছেন নিজের মতো করে। নাগরিক এই কবির কাব্য প্রকাশও ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত।
সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, নাসির উদ্দন স্বর্ণপদক, জীবনানন্দ পুরস্কার, আবুল মনসুর আহমেদ স্মৃতি পুরস্কার, সাংবাদিকতার জন্য মিতসুবিশি পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক ও আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কবিকে সম্মান সূচক ‘ডি লিট’উপাধি দেয়া হয়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭