ইনসাইড বাংলাদেশ

দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঘরে ফিরছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 17/08/2018


Thumbnail

ঈদ ঘনিয়ে আসায় ধীরে ধীরে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে ঘরমুখো মানুষেরা। টার্মিনাল থেকে পথে পথে-সর্বত্র বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই দলে দলে নাড়ির টানে বাড়ির পথে ছুটছেন তারা। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে এই জনস্রোত ততোই বাড়তে থাকবে। এ যাত্রার যেন শেষ নেই। রাজধানী ঢাকার যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি নিয়ে এতটুকু সুখ ও শান্তি খুঁজতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতেই এই কষ্ট। মা, বাবা, ভাই, বোনসহ আপনজনদের সঙ্গে ঈদের সুখ ও আনন্দ উপভোগের যেন বিকল্প নেই। এবার ঈদের লম্বা ছুটির কারণে সবখানেই অতীতের যে কোনো বছরের তুলনায় ভিড়টা একটু বেশিই। রেলের শিডিউল বিপর্যয়, বাসের টিকিট ঘাটতি সেইসঙ্গে  চরম অব্যবস্থার মধ্যেও ঠাঁই নেই লঞ্চে এমন প্রতিকূলতা মাথায় নিয়েই শেকড়রের পথে যাত্রা করেছে অনেকেই।

সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় আজ শুক্রবার সকাল থেকে মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল সদরঘাট, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশনে। মানুষের ভোগান্তি শুরু হয়েছে এখান থেকেই। ঘাটে ও টার্মিনালে পৌঁছতে যাত্রীদের অতিক্রম করতে হয়েছে তীব্র যানজট, কাদা পানি ও খানা-খন্দের রাস্তা। তার ওপর মহাসড়কের বাঁকে বাঁকেও পশুর হাট, গর্ত, যানজট, ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইসহ নানা ভোগান্তিতো উঁৎ পেতে রয়েছেই। ফলে এই ঈদেও নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরার আর হচ্ছে না ঘরমুখো মানুষের। তারপরও সব ভোগান্তি মেনে নিয়ে নাড়ীর টানে ঘরে ফিরছে মানুষ।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের মূল স্রোত শুরু হওয়ার আগেই মহাসড়কে বাসের তীব্র সংকট, যানজট, ফেরিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এর ওপর একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা বাড়িয়েছে আতঙ্ক। হঠাৎ ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ভয় থাকলেও যাত্রীরা সড়ক-মহাসড়কের চেয়ে বেশি নিরাপদ মনে করে রেলপথকে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ে প্রথম যে দিনের আগাম টিকেট বিক্রি করেছিল, সেই ট্রেন যাত্রা শুরু হয়েছে আজ থেকে। গত ৮ আগস্ট যারা ঈদের অগ্রিম টিকেট কিনেছিলেন, সেসব যাত্রীরা এদিন যাত্রা করছেন। ধারাবাহিকভাবে ২১ আগস্ট পর্যন্ত ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারী যাত্রীরা বাড়ি যাত্রা করবেন।

স্টেশন সূত্রে জানা যায়, খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় পৌনে একঘণ্টা দেড়িতে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সোয়া ঘণ্টা দেড়িতে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। এছাড়া চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সোয়া ঘণ্টা দেড়িতে কমলাপুর ছেড়ে যায়।

ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এ বিষয়ে কমলাপুর রেলওয়ের স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, কোনো ট্রেন দেরিতে ছাড়ছে না। তবে সুন্দরবন, তিস্তা ও নীলসাগর এক্সপ্রেস দেরিতে স্টেশনে আসায় যাত্রায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি যাতে কোনো ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় না হয়। 

স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার মোট ৬৬টি ট্রেন ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে ৩১টি আন্তঃনগর বাকি ৩৫টি ট্রেন লোকাল ও মেইল সার্ভিস। ইতোমধ্যে যথা সময়ে (৭টা পর্যন্ত) ছয়টি ট্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে। বাকিগুলোও যথা সময়ে ছেড়ে যাবে।

এদিকে ঈদের সময় সড়ক-মহাসড়কে বাসের চালক ও ফিটনেস তল্লাশিতে ছাড়ের খবরে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। এজন্য বাস যাত্রীদের ভোগান্তিও কিছুটা কম হচ্ছে। যদিও বরাবরের মতো টিকিট সংকট তো আছেই। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনের দুপুরে গাবতলী, কল্যাণপুর ও শ্যামলীতে থেকে রাজশাহী, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বাসগুলো যথা সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। তবে বড় ধরনের সূচি বিপর্যয়ে পড়েছে কুষ্টিয়া, মেহেরপুরগামী বাসগুলো।

ঘাটে জট থাকার কারণে ফেরি পারাপারে সময় বেশি লাগছে। সে কারণেই সূচি বিপর্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাস মালিকপক্ষ। এদিকে নির্ধারিত মূল্যের চেয়েও বেশি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ করেছে অনেকেই।

ঈদে বাড়ি ফেরায় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের প্রধান ভরসা লঞ্চ। আজ ছুটির দিনে রাজধানীর সদরঘাট থেকে অসংখ্য মানুষজন বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। সকাল থেকেই তারা লঞ্চঘাটে ভিড় জমিয়েছেন। সদরঘাটে অনেকেই এসেছেন আজ টিকিট কেটেই যাত্রা করার উদ্দেশে্য। দালাল চক্র বেশি দামে টিকিট বিক্রি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল থেকে যেসব লঞ্চ ছেড়ে গেছে সেগুলোতেও ছিলো যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়।

এদিকে, ঈদে ঘরমুখো লঞ্চযাত্রীদের যাত্রা নিরাপদ ও ভোগান্তি লাঘবে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যাত্রীসেবায় সরকারি-বেসরকারি ৩৬টি অত্যাধুনিক ও বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করছে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে। এরই মধ্যে ঈদুল আজহা উপলক্ষে বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে সরকারি লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস। আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হবে বেসরকারি লঞ্চের স্পেশাল সার্ভিস।

ঈদুল আজহা ঘিরে সাধারণ মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক, নৌ ও রেলওয়ে বিভাগ। এসব পদক্ষেপ দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয়ে সবাই নিরাপদে বাড়ি পৌঁছে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।


বাংলা ইনসাইডার/বিকে 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭