ইনসাইড আর্টিকেল

কফি আনান: ইতিহাসের একজন সাক্ষী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/08/2018


Thumbnail

কফি আনান। পুরো নাম কফি আত্তা আনান। এই মানুষটি জাতিসংঘের সপ্তম মহাসচিব হিসেবে ১৯৯৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। মানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য পেয়েছেন শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। গতকাল এই বিশ্ব বরেণ্য ৮০ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। জীবনের এ দীর্ঘ সময়ে তিনি বিশ্ব পরিস্থিতির নানা সাক্ষী হয়েছিলেন। বিশেষ করে, জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালীন বিশ্ব রাজনীতির নানা ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে দেখেছেন। আজ তাঁর জীবনাতিহাসেরই কিছু কথা তুলে ধরলাম:

১৯৩৮ সালের ঘানার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর কুমাসিতে জন্মগ্রহণ করেন কফি আনান। তাঁর বাবা ছিলেন দেশটির একজন প্রাদেশিক গভর্নর। ঘানাতেই আনানের শৈশবকাল কাটে। কফি আনানের একজন যমজ বোন ছিলেন, নাম ইফুয়া আত্তা, যিনি ১৯৯১ সালে মারা যান। দুই জনের নামের সঙ্গেই ‘আত্তা’ রয়েছে, এর অর্থ হলো যমজ।

১৯৫৪-৫৭ সাল, কফি আনান ঘানার ‘এম্যানস্টিপিম’ স্কুলে ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে তাঁর শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে তিনি কুমাসি বিজ্ঞান ‍ও প্রযুক্তি কলেজে অর্থনীতি বিষয়ে ভর্তি হন এবং পড়াশুনা চালিয়ে যান। তবে এখানে পড়াশুনা শেষ না হতেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকালেস্টার কলেজে পড়াশুনা করার সুযোগ পান। এখানে পড়াশুনা শেষ হলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের ওপর ডিইএ ডিগ্রী নিতে ১৯৬১ সালে জেনেভার একটি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। এখানে পড়াশুনা শেষ হলে তিনি প্রায় ১০ বছর কাজ করেন এবং অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। এরপর ১৯৭১-৭২ সালে এমআইটি স্লোয়েন স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের ফেলো হন এবং এখান থেকে নিজের মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৬২ সালে কফি আনান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় বাজেট অফিসার হিসেবে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৭৪-৭৬ সালে তিনি ঘানার ট্যুরিজম ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮১ সালে কফি আনান জাতিসংঘের রিফিউজি কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর এই বরেণ্য ব্যক্তি ১৯৮০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের নানা পদে নিজের দক্ষতার পরিচয় দেন। আনান একই সঙ্গে ইংরেজি, ফরাসি, আকান, কিছু ক্রু এবং আফ্রিকান ভাষায় কথা বলতে পারতেন।

১৯৯৭ সালে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে জাতিসংঘের সপ্তম মহাসচিব নিযুক্ত হন কফি আনান। এসময় তিনি ১৫ ভোটের মধ্যে ১৪ ভোট পেয়েছিলেন। ২০০১ সালে পান নোবেল শান্তি পুরস্কার। এরপর ২০০১ সালে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও মহাসচিব নির্বাচিত হন।

জাতিসংঘের মহাসচিব থাকাকালে ইরাক যুদ্ধ ও এইডস মহামারি এই দুটি সংকটে পড়েছিল বিশ্ব। এর মধ্যে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিবাদে জড়ান কফি আনান। বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ইরাক যুদ্ধকে অবৈধ যুদ্ধ বলেছিলেন আনান। এসময় যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন হারান তিনি। অবশেষে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

কেনিয়ার রাইলা ওডিঙ্গা ও মাওয়াই কিবাকির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত থামাতে মধ্যস্থতা করেছিলেন কফি আনান। সিরিয়া যুদ্ধে তাকে বিশেষ দূত নিয়োগ দেয় জাতিসংঘ ও আরব লিগ। এছাড়া মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে গঠিত আন্তর্জাতিক কমিশনের নের্তৃত্ব ছিলেন আনান। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার সুপারিশ করা এ কমিশন পরিচিতি পায় ‘আনান কমিশন’ হিসেবে।

ব্যক্তিগত জীবনে দুই বার বিয়ে করেছেন কফি আনান। ১৯৬৫ সালে তিনি তিতি আলাকিজাকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তানও হয়। তবে ১৯৮৩ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

কফি আনান ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন এই বিশ্ব বরেণ্য। নেলসন ম্যান্ডেলার প্রতিষ্ঠিত ‘দ্যা এল্ডারস’ এরও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন কফি আনান। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগে শনিবার (১৮ আগস্ট) সকালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বাংলা ইনসাইডার/বিপি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭