ইনসাইড আর্টিকেল

‘দাম কত?’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/08/2018


Thumbnail

ঈদের দুদিন আগে ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে কুরবানির পশুর হাটে গেলেন সেলিম সাহেব। কাঠ ফাঁটানো রোদ, তো পরমুহূর্তেই বৃষ্টি। এমন বিরূপ প্রকৃতির মধ্যেও সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা বাজারে ঘুরলেন বাবা-ছেলে। অনেক ঘুরে কোনো গরু পছন্দ হয় তো দামে বনে না। এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো। অবশেষে একটা লাল রংয়ের গরু পছন্দ ও দামে বনলো। গরুর ব্যাপারীকে দাম মিটিয়ে, হাসিল দিয়ে গরু নিয়ে রওয়ানা হলেন বাসার দিকে। গরুর ব্যাপারীদের সঙ্গে থাকা দুজন লোক সঙ্গে গরু পৌঁছে দেওয়ার জন্য। ওই দুজন গরু নিয়ে হাঁটছে, পাশে বাবা-ছেলে।

কুরবানির পশুর হাটের পথ দিয়ে বেরুচ্ছেন এমন সময় একজন জিজ্ঞেস করল, গরুর দাম কত? সেলিম সাহেব জানালেন, ৫৫ হাজার। উত্তরে প্রশ্নকারী বললেন, ভালো গরু কিনছেন। জিতছেন। গরুর হাট থেকে বেরিয়ে আসার পথটা পাঁচ মিনিটের। কিন্তু গরু-ছাগল আনা-নেওয়া আর ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে সেটা বেরোতেই আধাঘণ্টা লাগল। এই সময়টুকুতে অন্তত শ-খানেক বার দাম কত-প্রশ্নটি এলো। হাট থেকে বেরিয়েও শান্তি নেই। দুই কদম ফেলতেই কেউ না কেউ জিজ্ঞেস করছে, দাম কত? সেলিম সাহেব প্রথম দিকে উত্তর দিচ্ছিলেন। পরে তাঁর ছেলে দাম জানাতে শুরু করল। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে দুজনই হাঁপিয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত কাছাকাছি একটি স্টেশনারি দোকান থেকে কাগজ আর কলম কিনে সেলিম সাহেব লিখলেন গরুর দাম। স্কচটেপ দিয়ে তাই সেঁটে দিলেন গরুর গায়ে। ওই কাগজে আরও লেখা হলো, ‘দাম জানতে চাহিয়া কষ্ট করবেন না, দেবেনও না। অনুগ্রহ করে পড়ে নিন।’ 

কোরবানির পশু কিনে ‘দাম কত?’ প্রশ্ন বিভ্রাটের সম্মুখীন হয়নি এমন মানুষ বাংলাদেশে একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোরবানির পশু দেখলেই মানুষের মুখ থেকে ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় প্রশ্নটা বেরিয়ে যায়, দাম কত? গত দুই দিনের সম্ভবত এটিই রাজধানীর পথে-ঘাটে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত কথা।

শুধু দাম জেনেই কিন্তু বাঙালি ক্ষান্তি দেয় না। সঙ্গে কিছু অযাচিত মন্তব্য করতেও ছাড়ে না। জিতছেন, ভালো হইছে, অনেক মাংস হবে- এসব কথা যেমন প্রশ্নকারীদের মন্তব্য হয়, তেমনি অনেক সময়, গরু কিনছে না ছাগল, মহা ঠকছে, গরু কিনতে গিয়া বলদ হইছে- এমন মন্তব্যও করেন অনেকে। এসব মন্তব্য কোরবানির পশুটির ক্রেতার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে বাধ্য।

দাম কত? বিভ্রাটে অনেকে আবার উল্লিখিত ঘটনার মতো উদ্যোগও নেন, কোরবানির পশুর গায়ে কাগজ সাটিয়ে লিখে দেন দাম। তাতেও মুক্তি হয় না অবশ্য। দাম কত? বলাটা যেন কুরবানির আগে কয়েকদিন মানুষের মুদ্রাদোষে পরিণত হয়। এ যেন এক অমোঘ নিয়তি, পশুটি কুরবানি না হওয়া পর্যন্ত শুনতেই হবে ‘দাম কত?’

অবশ্য বাঙালিদের কোনো জিনিসের দাম জিজ্ঞেস করা বিষয়টি কিন্তু মজ্জাগত। পুরোনো সাহিত্যেও বাঙালিদের এমন জিজ্ঞাসু মুদ্রাদোষের পরিচয় মেলে। গোপাল ভাঁড়ের গল্প হয়তো অনেকেরই মনে আছে।

এক সময় দেশে প্রচুর ইলিশ পাওয়া যেত। কিন্তু বাজার থেকে ইলিশ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত বহুবার ‘দাম কত?’ প্রশ্নের মুখে পড়তে হতো। গোপাল ভাঁড় একবার বাজি ধরেছিলেন তিনি বাজার থেকে ইলিশ কিনে বাড়ি যাবেন কেউ দাম জিজ্ঞেস করবে না। গোপাল তা করেও দেখিয়েছিলেন। গোপাল ভাঁড় ইলিশ কিনে বাজার থেকে বেরিয়ে ছিলেন পোশাক খুলে, গায়ে রঙ চং মেখে। সবাই বলা শুরু করল হায়রে গোপাল পাগল হয়ে গেছে। মানুষের এমন হায়-হায় এর মধ্যে দিয়েই গোপাল বাড়ি পৌঁছে যান। কেউ ইলিশের দাম জিজ্ঞেস করেনি। খেয়ালই করেনি ইলিশের দিকে। তবে বর্তমান যুগে কেউ গোপাল ভাঁড়ের মতো উদ্যোগ নিবে এমন আশঙ্কা নেই।

দিন অনেক বদলেছে, কিন্তু বাঙালি সেই বাঙালিই রয়ে গেছে। এখনো দাম জানতে চাওয়া বাঙালির মজ্জাগত বিষয়। যেহেতু যুগ যুগ ধরে ‘দাম কত?’ চলছেই। তাই অদূর ভাবিষ্যতেও এ থেকে যে মুক্তি নেই, তা গ্যারান্টি দিয়েই বলা যায়।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭