ইনসাইড ইকোনমি

পশুর হাটে ধসের চার কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 23/08/2018


Thumbnail

মেরাদিয়া হাটের পশু ব্যবসায়ী আশরাফ আলী। বিক্রির জন্য কোরবানির হাটে নিয়ে এসেছিলেন নিজের সেরা তিনটি গরু। হাটের প্রথম দিকে ক্রেতারা গরুগুলোর জন্য ভালো দামই বলছিলেন। কিন্তু ঈদের আগে আগে দাম আরও বাড়বে সেই আশায় গরু বিক্রি করেননি আশরাফ। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ঈদের আগে কোরবানির পশুর দাম একদমই পড়ে যায়। তাতে মাথায় হাত পড়ে আশরাফ আলীর। শুধু আশরাফ আলীই নয়, কোরবানির হাটে শেষ মুহূর্তে পশুর দাম পড়ে যাওয়ায় অনেক বিক্রেতাই লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। হাটে প্রথম দিকে ভালো দামে পশু বিক্রি হলেও শেষ মুহূর্তে দাম কমে যাওয়ার পেছনে পশু ব্যবসায়ীরা প্রধানত চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন।

প্রথমত, গত ঈদে পশুর সংকট দেখা দেওয়ায় এ বছর খামারিরা বেশি পশু পালন করেছিলেন। এছাড়া এই বছর জাতীয় শোক দিবস ও ঈদ কাছাকাছি সময়ে পড়ে। সে কারণে বাজারে পশুর চাহিদা বেশি থাকবে এবং দাম বাড়বে বলে ধারণা করেছিল বিক্রেতারা। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত পশু মজুদ থাকায় বিক্রেতাদের পশুর দাম বাড়ার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ও গত রোববার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায়, এবার ঈদুল আজহায় কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে প্রায় এক কোটি ১৬ লাখ। বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৬ সালে দেশে পশু কোরবানির সংখ্যা এক কোটি তিন লাখ, ২০১৭ সালে এক কোটি পাঁচ লাখ উল্লেখ করে বলা হয় এবার পাঁচ বা ১০ ভাগ কোরবানি বেশি হলেও এক কোটি ১৬ লাখ পশু যথেষ্ট বিবেচিত হবে। পশুর দাম না বাড়ার পেছনে পশুর পর্যাপ্ততাই ছিল অন্যতম কারণ।

এবার কোরবানির হাটের প্রথম কয়েকদিনে ক্রেতাদের মধ্যে পশুর চাহিদা ছিল যথেষ্ট। তখন ক্রেতারা বেশি দামেই পশু কিনেছেন। এই কারণে ক্রেতারা মনে করেছিলেন ঈদের ঠিক আগ মুহূর্তে বাজারে পশু সংকট সৃষ্টি হবে তখন আরও বেশি দামে পশু বিক্রি করা যাবে। সেই আশায় যথাযথ দাম পাওয়ার পরও অনেক বিক্রেতা পশু বিক্রি করেননি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রয়জনের তুলনায় হাটে পশু বেশি ছিল। সেই কারণে ঈদের আগে পশুর দাম পড়ে যায়।

এছাড়া এবারের ঈদুল আজহায় দেশে পর্যাপ্ত পশু মজুদ থাকার পরও দেশের বাইরে থেকে পশু এসেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের অভিযোগ, এই ঈদকে কেন্দ্র করে ভারত ও মিয়ানমার থেকে কমপক্ষে ১৬ থেকে ২০ লাখ পশু এসেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার ২১ আগস্ট সকাল থেকে রাজধানী হাটে বিদেশী গরু প্রবেশ করতে শুরু করার পরই কোরবানির পশুর দাম কমতে থাকে। ভারতীয় গরুর দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা এসব গরু কেনার দিকেই আগ্রহী ছিলেন বেশি বলে দাবি করছেন পশু ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম পশুর দাম কম হওয়ার পেছনে আরেকটি কারণ উল্লেখ করেছেন। রবিউল আলমের মতে, এবারের ঈদে পথে পথে চাঁদাবাজি হয়নি, যা অন্যান্য বারের ঈদে খুব সাধারণ ঘটনা। এসব ক্ষেত্রে পশুর দাম যদি ৫০ হাজার টাকা হয় চাঁদাবাজি হয় আরও ১০ হাজার। সে কারণে তখন দাম বেশি হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু এবারের ঈদুল আজহা চাঁদাবাজি মুক্ত হওয়ায় শেষ মুহূর্তে কোরবানি পশুর হাটে যে দামে পশু বিক্রি হয়েছে সারা বছরও তার চেয়েও কম দামে পশু বিক্রি করা সম্ভব হতো না বলে জানান রবিউল আলম।

সব মিলিয়ে বলা যায়, এবার কোরবানির পশুর হাট থেকে ক্রেতারাই হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন কিন্তু লোকসান হওয়ায় অনেক পশু বিক্রেতার চোখেই জল ছিল।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭