নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 23/08/2018
মকবুল সাহেব এবারের ঈদে ৮০ হাজার টাকায় গরু কেনেন। প্রতিবারের মতো এবারেও গরুর চামড়াটি বিক্রি করে গরিব-দুঃখীদের দান করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। এ কারণে ঈদের দিন সকালে গরু জবাইয়ের পর মাদ্রাসা ছাত্ররা চামড়া চাইতে এলেও তিনি ফিরিয়ে দেন তাদের। কিন্তু বেশ কয়েকঘন্টা পেরিয়ে গেলেও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীদের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। দুপুর নাগাদ একজনের দেখা পেলেও, সে দাম বলল মাত্র ৬০০ টাকা। ৮০ হাজার টাকার গরুর চামড়ার এই দাম শুনে হাসবেন নাকি কাঁদবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না মকবুল সাহেব। কিছুক্ষণ পর আরেক চামড়া ব্যবসায়ী এলেন। তিনি ৭০০ টাকা বলেই হাঁটা শুরু করলেন, যদি তাকে আবার চামড়া দিয়ে দেওয়া হয়, ভয়েই যেন দ্রুত পালাল! অথচ গত বছরই ৫০ হাজার টাকার গরুর চামড়া দেড় হাজারে বিক্রি করেছেন মকবুল সাহেব। শেষ পর্যন্ত মাদ্রাসায় দানই করে দিলেন গরুর চামড়া। তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না, এ বছর চামড়ার দাম এত কম কেন। সরবরাহ বেশি থাকার কারণেই কী এমন হচ্ছে, নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো মনুষ্যসৃষ্ট কারণ বা সিন্ডিকেট?
চামড়ার মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বলছেন, চামড়া বিক্রি করে তাঁরা লাভ তো পাচ্ছেনই না, এমনকি খরচের টাকাও তুলতে পারছেন না। ৫০০ টাকায় কেনা গরুর চামড়া ৩০০ টাকায়ও বিক্রি করা যাচ্ছে না বলে জানান কয়েকজন ব্যবসায়ী।
পুরান ঢাকার লালবাগে চামড়ার পাইকারী আড়তগুলোর কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ঈদের দিন দুপুরে চামড়ার দাম মোটামুটি অবস্থায় থাকলেও বিকেল গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা কমতে শুরু করে। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক কমেই চামড়া কিনছেন বলেও স্বীকার করেন তাঁরা। এমনকি গত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে এবছর চামড়ার দাম সবচেয়ে কম বলেও জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশে বার্ষিক আহোরিত চামড়ার প্রায় ৫০ থেকে ৬০ শতাংশই সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। আর এ সময়টাতেই চামড়ার দাম এতটা কমে যাওয়ায় দেশের চামড়া শিল্পে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সবাই।
বিশ্লেষকরা বলছেন, গত বছর এক কোটির মতো পশু কোরবানি হলেও এবার তা বেড়ে সোয়া কোটিতে পৌঁছেছে। ফলে চামড়ার সরবরাহ কিছুটা বেশিই। তবে এটাই দর পতনের এক মাত্র কারণ নয়। লবণের মূল্য বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে ট্যানারি মালিকদের অর্থ সংকটের ফলেও চামড়ার দাম কম এবার। এছাড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট তো রয়েছেই। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ ক্রমাগত পিছিয়ে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭