ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

প্রযুক্তির দানবকে বশে আনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 24/08/2018


Thumbnail

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত লাখ লাখ মানুষের অজস্র ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এই নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে তারা তাদের অনলাইন প্লাটফর্মে একচেটিয়া ব্যবসা করে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অধিকাংশই পশ্চিমা বিশ্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এসব মাধ্যমগুলোতে বেশ কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। গত কয়েক বছর আনলাইন প্লাটফর্ম থেকে তথ্য চুরির ঘটনাগুলো পশ্চিমা বিশ্বের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। একারণে এখনই পশ্চিমাদের অন্য কোনো ডিজিটাল প্লাটফর্ম তৈরি করা উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গত মে মাসে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ গর্ব করেই বলছিলেন, তাঁর কোম্পানি তথ্য ও ছবি আপলোডের পর পর্যালোচনা, যাচাই, এমনকি প্রয়োজনে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পোস্ট বাতিলের জন্য মধ্যস্থতাকারীদের (মডারেটরদের) কোটি কোটি অর্থ প্রদান করে। তিনি বলেন, এই মধ্যস্থতাকারীরা ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজ করে এবং তারাই নির্ধারণ করে কোন বিষয়টি এই প্লাটফর্মে থাকবে এবং কোনটি থাকবে না। এখানে একটি নীতিমালাও রয়েছে।

এই বক্তব্যের মাধ্যমে জুকারবার্গ বিশ্ববাসীকে আশ্বস্ত করেছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, ফেসবুকের সব তথ্যই সঠিক পন্থায় সংরক্ষিত থাকে এবং তা অন্য কারও কাছে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু তাঁর এই আশ্বাসের বিপরীত প্রভাবও রয়েছে। কারণ ফেসবুকের মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এই অনলাইন প্লাটফর্মকে কীভাবে দেখে সেটাই ভাবার বিষয়। মধ্যযুগে ক্যাথলিক চার্চগুলো অবাধ তথ্য প্রবাহের ক্ষমতা ছিল। আর এই তথ্য প্রবাহের ক্ষেত্রে চার্চগুলোর একটি দৃঢ় নৈতিক অবস্থান ছিল। তবে জুকারবার্গ তথা ফেসবুকের সেই অবস্থান নেই।

ফেসবুকে যেকোনো তথ্য বা খবর দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এখানো পর্যন্ত তা বিনামূল্যেই করা হয়ে থাকে। একারণে সারা বিশ্বে এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ফেসবুক সব ধরনের অপ্রত্যাশিত প্রবেশ আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু আদৌ তা সম্ভব হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফেসবুকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এখানে শুধু ব্যক্তির কোনো গল্প, রাজনৈতিক মতবাদ আর বিভিন্ন নিউজ বেশি শেয়ার দেওয়া হয়ে থাকে। দিন দিন এই নিউজ শেয়ারের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিনিয়ত এই মাধ্যমটি যদি কোনো অনলাইন পোর্টালের মতো নিউজ শেয়ার দিতে থাকলে তা ব্যাঙ্গাত্মক কোনো ব্যবসায়িক পত্রিকার রূপ নেবে।

মার্ক জুকারবার্গ দাবি করে বলেন, আমাদের এমন একটি চেকিং ব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে মিথ্যা কোনো তথ্য বা নিউজ ফেসবুক ধরতে পারে। বিশেষ করে অন্যান্য সংবাদ সূত্র থেকে তথ্য নিলে ফেসবুক তা কপি হিসেবে ধরতে পারে। তবে কেউ কেউ ভাবছেন, এই চেকাররা কোন মানদণ্ডের ভিত্তিতে সত্য-মিথ্যা যাচাই করেন।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তথা বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিয়ে পশ্চিমা অনেকেই এখন চিন্তিত। আমাদের নতুন কোনো ইন্টারনেট ব্যবস্থার দিকে এগোতে হবে, যেখানে ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীভূত হয়। তাহলে বর্তমান অবস্থার ভয়াবহতা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কেননা এখনকার ইন্টারনেট ব্যবস্থার অধিকাংশই ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। আর যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলছিলেন, বিশ্বের এখন নতুন ইন্টারনেট ব্যবস্থার প্রয়োজন। বিশেষ করে, ইউরোপের প্রয়োজন নতুন ডিজিটাল ইন্টারনেট কৌশল প্রনয়ণ করা। যেটা অবশ্যই আমেরিকান মডেল থেকে কপি-পেস্ট নয়।

লেখক: বেলজিয়ামের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ইউরোপ গ্রুপের জোট লিবারেল অ্যান্ড ডেমোক্রেটস এর প্রেসিডেন্ট


বাংলা ইনসাইডার/বিপি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭