ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইমরানের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি, শুভঙ্করের ফাঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 26/08/2018


Thumbnail

পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান দেশটির রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষস্থানীয়দের রাষ্ট্রীয় খরচে প্রথম শ্রেণীতে বিমান ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। এমন সিদ্ধান্তে দেশটির সাধারণ মানুষের বাহবাও পাচ্ছেন ইমরান। কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁরা নতুন প্রধানমন্ত্রীর কৃচ্ছ্রসাধন নীতিকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবেই দেখছেন।

হাতে গোনা কয়েকজন মানুষের বিমান ভ্রমণের খরচে পাকিস্তানের মতো ব্যাপক দারিদ্র্যপীড়িত দেশের কতোটুকু উন্নয়ন সম্ভব, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। পাকিস্তানের মূল দূর্নীতির ক্ষেত্র হচ্ছে সামরিক খাত। দেশটি প্রতিবছর সেনাবাহিনীর পেছনে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে থাকে। অস্ত্রখাতেও পাকিস্তানের ব্যয় আকাশছোঁয়া। এছাড়া পাক সেনাসদস্যরাও রাষ্ট্রীয় খরচে বিলাসী জীবন-যাপন করে থাকেন। কৃচ্ছ্রসাধনের জন্য ইমরান বেশকিছু চটকদার ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত সামরিক খাতের ব্যয় সংকোচনের লক্ষ্যে কোনো সিদ্ধান্তই নেননি।

প্রথম শ্রেণীতে বিমান ভ্রমণসংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা জারির পর ইমরানের সরকারের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। পাক সেনা কর্মকর্তাদেরও প্রথম শ্রেণীতে বিমান ভ্রমণের ক্ষেত্রে একই নীতি প্রযোজ্য হবে কিনা এমন প্রশ্ন সুকৌশলে এড়িয়ে যান তিনি। ফাওয়াদ বলেন, সেনা কর্মকর্তারা প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমন করেন না। তাঁর এই বক্তব্যকে কৌতুক ও মিথ্যা বলে উল্লেখ করছেন অনেকেই।

পাকিস্তানের মতো বিদেশি অর্থসাহায্যের ওপর নির্ভরশীল একটি দেশের সামরিক খাতে লক্ষ কোটি ডলার ব্যয় করা নিয়ে প্রশ্ন করে থাকেন অনেকেই। একবিংশ শতাব্দীতে এসেও যেখানে নিরাপদ পানির অভাব প্রকট, সেখানে প্রতিবছর অস্ত্র ক্রয়ে বিপুল পরিমান অর্থের বরাদ্দ দেওয়া হাস্যকরই বটে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানে প্রতি মাসে সামরিক খাতে যে পরিমান অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে দেশটির কয়েক লাখ শিশুর এক বছরের খাদ্য সরবরাহ করা সম্ভব। অথচ ইমরান খান ব্যয় সংকোচনের বুলি আওরালেও সেনাবাহিনীর অপব্যয় প্রসঙ্গে কিছুই বলছেন না। এ কারণেই তাঁর কৃচ্ছ্রসাধন নীতিকে ‘রাজনৈতিক স্টান্টবাজি’ বা ‘আইওয়াশ’ বলে মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, ইমরানের সরকার সামরিক খাতে কৃচ্ছ্রসাধন করবে না এটা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ যে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় তিনি ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের স্বার্থহানী নিশ্চয়ই ইমরান করবেন না। এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে আবার টিপ্পনি কাটছেন, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রী যত খারাপই হোন না কেন, অকৃতজ্ঞ নিশ্চয়ই নন।’

কৃচ্ছ্রসাধনের নামে দেশের মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল অবশ্য নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু একনায়কই অতীতে এই কৌশল অবলম্বন করেছেন। পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রনায়ক জেনারেল আইয়ুব খান ক্ষমতা দখলের পর যানবাহনে এসির ব্যবহার বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দেশটির আরেক সেনানায়ক জিয়াউল হকও কৃচ্ছ্রসাধনের নামে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন। পারভেজ মোশাররফ ক্ষমতায় এসে ব্যক্তিগত পরিবহনের পরিবর্তে গণপরিবহন ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে জনগণকে সাইকেল ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আরেক সেনাশাসক জিয়াউর রহমানও জনগণকে পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

বিশ্লেষকরা বলেন, অবৈধ উপায়ে ক্ষমতাদখলকারীরা ব্যয়সংকোচন এবং দুর্নীতি দমনের নামে বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু একটা সময় পর দেখা যায়, তাঁরাই সবথেকে বড় দুর্নীতিবাজ। নতুন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের কৃচ্ছ্রসাধন নীতিকে তাই ‘নতুন বোতলে পুরনো মদের’ সঙ্গেই তুলনা করা হচ্ছে।


বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭