লিভিং ইনসাইড

মস্তিস্কের শক্তি বাড়ানোর বিভিন্ন কৌশল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/08/2018


Thumbnail

সময় বাড়ার সঙ্গে আমরা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়তে থাকি। শরীর বা মন দুটোই আমাদের সুস্বাস্থ্যকে সমর্থন দেয় না। এজন্য আমাদের শরীর আর মন দুটোকেই একটু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। আমাদের মস্তিস্ক যদি আমাদের ভালোভাবে সমর্থন না করে তবে কমে যেতে পারে স্মৃতিশক্তি, হতে পারে বিভিন্ন রোগ বা আমরা সবার থেকে পিছিয়ে পড়তে পারি। তাই মস্তিস্ককে চাড়া রাখতে আপনাকে এই বিষয়গুলো মনে রাখলেই যথেষ্ট-

ব্যায়ামে মস্তিষ্কের আকার বাড়ে

শরীরচর্চার ফলে শরীরের পেশির সঙ্গে মস্তিষ্কের আকারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। মূলত ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সিন্যাপসের সংখ্যা বাড়ে বলে মগজে নতুন কোষ তৈরি হয়। আর কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়ামের ফলে মগজে অক্সিজেন এবং গ্লুকোজ সরবরাহ হয় বেশি। খোলা জায়গায় ব্যায়াম করলে ভিটামিন ডি শরীরে জমা হয়।

এজন্য ব্যায়ামের পাশাপাশি কোথাও বেড়ান, নতুন ধরনের বা নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করুন। চাইলে বাগান করুন, পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান, মজার কিছু করুন। মোটামুটি সবকিছু উপভোগ করুন।

হাঁটাচলা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়

গবেষণায় প্রমাণিত যে হাঁটলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। কোনো শব্দ বা বাক্য যদি হেঁটে মুখস্থ করলে দেখবেন সেটা বহুদিন আপনার মনে থাকবে। আর তাই কোনো বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে চাইলে সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন। কিংবা একটু বাইরে ঘুরে আসুন পড়ার ফাঁকেই।

মগজের শক্তির জন্য উপযুক্ত খাবার

খাবারের ২০ শতাংশ শর্করা ও শক্তি আমাদের মস্তিষ্কে যায়। আর মস্তিষ্কের কাজ নির্ভর করে তার গ্লুকোজের মাত্রার ওপর। শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা কমবেশি হলে মস্তিস্কও সমস্যার মুখে পড়তে পারে।

আমাদের পছন্দের খাবারগুলো মস্তিষ্কের `রিওয়ার্ড এরিয়ায়` ডোপামিন রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মন ভালো হয়। আবার মস্তিষ্কের শক্তিবৃদ্ধির সঙ্গে পেটের দিকেও নজর রাখা দরকার। কারণ পরিপাকতন্ত্রে একশো ট্রিলিয়নেরও বেশি অণুজীব থাকে যারা মস্তিষ্কের সঙ্গেও সংযোগ রাখে। মস্তিস্কের সুস্থতার জন্য এই অণুজীবগুলোর ভারসাম্য রাখা জরুরি। কারণ, পাকস্থলীকে `দ্বিতীয় মস্তিস্ক`ও বলে। পেটে স্বাস্থ্যকর খাবার গেলে অণুজীবের মাধ্যমে সুফল মস্তিষ্কে পর্যন্ত পৌঁছায়।

আর তাই মস্তিষ্কের কোষ ফ্যাট অর্থাৎ স্নেহ পদার্থ দিয়ে তৈরি বলে খাবার থেকে তেল-চর্বি একেবারে বাদ না দেওয়াই ভালো। বাদাম, তেলের বীজ, মাছ ইত্যাদি মস্তিষ্কের জন্য ভালো। আর খাবার সময় একা না খেয়ে সবার সঙ্গে খেলে মস্তিষ্কের জন্য ভালো।

অবসর খুঁজুন

অতি মাত্রায় নয়, অল্প মানসিক চাপ স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এতে জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতিকে দ্রুত মোকাবেলা করে ওঠা যায়। ‘কর্টিসল’ হরমোনের কারণে দেহ-মন চাঙা হয় এবং মনোযোগের একাগ্রতা বাড়ে।

আবার দীর্ঘদিনের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মস্তিস্কের জন্য খারাপ। তাই কাজের ফাঁকে অবসর গুরুত্বপূর্ণ। এতে মস্তিষ্ককে অবসর দিয়ে নিজেকে সুইচ অফ করে মস্তিস্কের একটি অংশকে ব্যায়াম করার সুযোগ দিলে কাজটা ভালো হয়।

তবে যদি এমন আরাম-অবসরে সমস্যা হলে যোগব্যায়াম কিংবা মাইন্ডফুলনেস চর্চা করবেন। এতে আপনার স্ট্রেস হরমোন কমবে।

নতুন কিছু করুন

নতুন কিছু করার জন্য মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করা মস্তিস্কের শক্তি বৃদ্ধির ভালো পথ। এজন্য আপনি ছবি আঁকতে পারেন, অন্য ভাষা শিখতে পারেন। এজন্য একা বা কারো সঙ্গে হেম খেলতে পারেন। এতে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগও বাড়বে।

গান শুনুন অবশ্যই

সঙ্গীত মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করতে পারে। গান শোনার সময় যদি কারো মস্তিষ্কের ছবি তোলা যায়, তাহলে দেখা যায় পুরো মস্তিষ্ক সুরের প্রভাবে সক্রিয় হয়, এটা প্রমাণিত। মস্তিষ্ক সঙ্গীতের স্মৃতি দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারে। এটা ডিমেনশিয়ার মত মানসিক অবস্থাও ঠেকায়।

এজন্য বেশি করে গান শুনুন বা গানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও যেতে পারেন। আর পারলে অবশ্যই নিজেই গান গাইতে পারেন।

বিছানায় শুয়ে পড়াশুনা

দিনে নতুন কিছু শিখতে গেলে মস্তিষ্কে এক স্নায়ুকোষের সঙ্গে নতুন এক স্নায়ুকোষের সংযোগ হয়। ঘুমিয়ে গেলে সেই সংযোগ আরও বাড়ে এবং শেখা বিষয়গুলো স্মৃতি হিসেবে জমা থাকে। রাতে শোবার আগে কোনো লেখা যদি মুখস্থ করা যায়, তাহলে পরদিন সকালে সেটা খুব সহজেই মনে থাকে। আবার সারাদিন বসেও অনেক সময়ে কোনো পড়া মুখস্ত করা যায় না।

আর কোনো কষ্টের স্মৃতি শোওয়ার সময় চিন্তাভাবনা না করাই ভাল। এতে মস্তিষ্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শোওয়ার আগে ভৌতিক কিছু দেখাও ঠিক না। সারাদিনের ভালো ঘটনাগুলো মনে করতে করতে ঘুমান।

সবচেয়ে ভালো হয় পরীক্ষার পড়ার সময় প্রশ্নের উত্তরগুলো শোওয়ার সময় মনে করলে এতে মাথা পরিস্কার থাকে।

যখন ঘুম ভাঙবে

ঘুমের গুরুত্ব সবাই জানে। দিনে পাঁচ ঘণ্টার কম ঘুম হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। আর ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম হলে মস্তিষ্ক সজাগ হওয়ার সময় পায় না। কিন্তু কীভাবে ঘুম থেকে জেগে উঠছেন তার ওপর সারাদিনটাই নির্ভর করে। ঘুমাতে যাওয়ার সময় ঘর অন্ধকার রাখুন এবং দিনের আলো বাড়লে জেগে উঠুন। সূর্যের আলো বন্ধ চোখের পাতায় ঢুকলে মস্তিস্কে কর্টিসল হরমোন দ্রুত ছড়ায়। এর ফলে আমরা জেগে উঠি। কেমন কর্টিসল হরমোন শরীরে ছড়ায় তার ওপর নির্ভর করে দিনটা কেমন যাবে।


সূত্র: বিবিসি

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭