ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আইনেরও উর্ধ্বে তিনি?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/09/2018


Thumbnail

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইন অগ্রাহ্য করেছেন এমন অভিযোগ বহুবার উঠেছে। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগতভাবে আইন ভঙ্গের আনুষ্ঠানিক অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। তাঁর সাবেক নির্বাচনী প্রচারণা প্রধান পল মানাফোর্ট ইতিমধ্যেই কর ও ব্যাংক জালিয়াতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আরেক মামলায় ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেনও কর ফাঁকি, জালিয়াতি এবং নির্বাচনি প্রচারণা আইন ভঙ্গের দায় স্বীকার করেছেন।

মানাফোর্টের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার বিষয়টি আশ্চর্যজনক কিছু ছিল না। যারা তাঁর অতীত ইতিহাস কিংবা রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে দীর্ঘ কর্মজীবন সম্পর্কে জানেন, তাঁরা এতে মোটেই অবাক হননি। মাইকেল কোহেনের মামলাটির দিকেই সবার নজর ছিল বেশি। কারণ কোহেন শুধু ট্রাম্পের আইনজীবীই নন, একই সঙ্গে তাঁর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীও ছিলেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি নিজে তো দোষ স্বীকার করেছেনই, একইসঙ্গে ট্রাম্পের ওপরেও দায় চাপিয়েছেন। এর ফলে বড় ধরনের নির্বাচনী ও আইনি ঝুঁকির মুখে পড়েছেন ট্রাম্প।  

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালতে কোহেন স্বীকার করেন যে, পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলস ও প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডোগালকে কয়েক লাখ ডলার দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মক্কেলের যৌন কেলেংকারি ফাঁস না করার জন্যই ওই অর্থ দেওয়া হয় বলেও স্বীকার করেন তিনি। ট্রাম্প প্রথমদিকে অর্থ প্রদান করে মুখ বন্ধের বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি জানান, ঘটনাটি তিনি অনেক পরে জানতে পেরেছিলেন। কিন্তু আদালতে কোহেন খুব স্পষ্টভাবে বলেছেন, সাবেক মক্কেলই ঘুষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁকে। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, ট্রাম্পই কোহেনকে আইন ভঙ্গের নির্দেশ দেন এবং অপকর্ম ধামাচাপা দিতে মিথ্যাচারও করেন। 

২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্প শিবিরের সঙ্গে রুশ যোগসাজশের বিষয়টি তদন্ত করছেন বিশেষ কৌশলি রবার্ট মুলার। মানাফোর্টের দোষী সাব্যস্ত হওয়া কিংবা কোহেনের জবানবন্দি, কোনটিরই নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু মুলার সবগুলো বিষয়ের ওপরই নজর রাখছেন। কোহেনের দোষ স্বীকার করার বিষয়টি নিঃসন্দেহে তাঁর তদন্তকে আরও জোরালো করবে। মুলার বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছেন এমন প্রমাণ ছাড়া ট্রাম্প তাকে বরখাস্তও করতে পারবেন না।

মামলায় অভিযুক্তরা প্রায়ই নিজেদেরকে বাঁচাতে কিংবা সত্য প্রকাশ করতে আরও কয়েকজনকে অভিযোগের তালিকায় নিয়ে আসে। এখন প্রশ্ন হলো, মানাফোর্ট এবং কোহেনও কি সেই কাজটিই করছেন? তাঁরা কি তাদের সাবেক প্রভুকে সরাসরি অভিযুক্তের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছেন?

কোহেন বলেছেন, ট্রাম্প তাকে ঘুষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ঘুষ প্রদান দেশের সাধারণ জনগণের জন্য অবৈধ কোন কাজ নয়। কিন্তু সেটি একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর নির্দেশে হলে তা অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য এবং আইনভঙ্গের সামিল। 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণা তহবিল গড়মিলেরও অভিযোগ আছে। এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি ততটা সরব নন। এটা ততটা গুরুতর কোন ঘটনাও নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ, যেখানে কোটি কোটি ডলারের নির্বাচনী তহবিল গঠন করা হয়, গড়মিলের ঘটনা সেখানে ঘটেই থাকে। কিন্তু অপকর্ম ধামাচাপা দিতে ঘুষ প্রদান। এটা অবশ্যই গুরুতর একটি অপরাধ, যা একজন রাজনীতিবিদের ক্যারিয়ার পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে। সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ও ডেমোক্রাট নেতা জন এডওয়ার্ডসের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছিল। নির্বাচনের আগেই ঘুষ প্রদানের ব্যাপারটি প্রকাশ পেলে টাম্প জয়ী হতেন কিনা, এখন আর তা জানার কোন উপায় নেই।

ধীরে ধীরে সবই প্রকাশ পাচ্ছে। অভিযোগের তালিকাও বেড়েই চলেছে। মার্কিনিরা একটি সাধারণ কিন্তু দৃঢ় প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি আইনেরও উর্ধ্বে?


সূত্রঃ দি ইকোনমিস্ট

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭