ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মালয়েশিয়ার রাজনীতি ও মাহাথির

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/09/2018


Thumbnail

মালয়েশিয়ায় একটি রাজনৈতিক দল ৬১ বছর ধরে শাসন করে আসছিল। এই দীর্ঘ শাসনের পর দেশটিতে প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হচ্ছে, যেখানে রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন হয়েছে। গত মে মাসে মালয়েশিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে এই পরিবর্তন আসে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক জোট পাকাতান হারাপান (পিএইচ) মালয়েশিয়ার বহু মানুষকে চমকে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এই জয় পাকাতান হারাপানের জন্যেও ছিল এক আশ্চর্যজনক ঘটনা। দেশটির মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য যেখানে তাঁদের অবস্থান পক্ত করার জন্য এখনো সংগ্রাম করছে, সেখানে মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ছিল একদমই ব্যতিক্রম। তিনি ইতিমধ্যে জাতীয় নেতা হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

মাহাথির পূর্বে ইউনাইটেড মালয়েশিয়া ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (ইউএমএনও) এর নেতা হিসেবে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশ চালাচ্ছিলেন। ১৯৫৭ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে মালয়েশিয়া, এই স্বাধীনতার পর থেকে মালয়েশিয়ার নির্বাচনে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার না হওয়া পর্যন্ত ইউএমএনও শাসন করে আসছিল। তিনি এই নির্বাচন নিয়ে তাঁর ক্ষমতাচ্যুত পূর্বসূরি নাজিব রাজাককেও পরামর্শ দিয়েছিলেন, যিনি এখন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ-আত্মস্মাতের অভিযোগে অভিযুক্ত। পূর্বে যখন পিএইচ নির্বাচনে তাদের সফলতা নিয়ে সংশয়ে ছিল, তখন মাহাথির ক্ষমতায় আসা নিয়ে কিছু বিষয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলেন। কিন্তু অভিজ্ঞতার অভাবে নতুন মন্ত্রীরা বিভিন্ন বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে এই বিষয়গুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল। এখন তারাই তাদের অবস্থান পক্ত করতে সংগ্রাম করছে।

পূর্বের তুলনায় এখন মালয়েশিয়ার নতুন প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু অগ্রগতি সাধন করেছে। এর মধ্যে ১এমডিবি মেগাপ্রজেক্টের আওতায় আগের প্রশাসনের ৪.৫ বিলিয়ন ডলার আত্মস্মাৎ, পণ্য ও সেবা কর (জিএসটি) এবং জ্বালানি ভর্তুকি ইত্যাদি অন্যতম। পিএইচ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এইসব বিষয়ে তারা তদন্ত করবে এবং সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই প্রতিশ্রুতির ফলস্বরূপ পিএইচ তদন্ত শুরু করে এবং চীনা সহায়তা ও সিঙ্গাপুরের হাই-স্পিড রেল প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করেছে।

তবে বলা হচ্ছে, জিএসটি বাতিল করলে দেশটির সরকারের রাজস্ব কমে যাবে। এই জিএসটির মাধ্যমে গত বছরও মালয়েশিয়া সরকারের প্রায় ১০.৫ বিলিয়ন অর্থ আয় হয়েছে। তাছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধিও দেশটির রাজস্ব আয় বাড়াতে সাহায্য করছে। কারণ রাষ্ট্রীয় তেল সংস্থা পেট্রোনাস তাদের রাজস্ব বৃদ্ধি করেছে। এর পরও রাজস্ব আয় নিয়ে মালয়েশিয়া সংকটে রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কুয়ালালামপুরে সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়াম কিম লাংয়ে।

মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কূটনীতিক মহল বলছে, পিএইচ এর মন্ত্রীসভার সদস্যদের কারণেই মাহাথির আসলে সবকিছুর প্রধান হয়ে উঠেছেন। যেভাবে তিনি ১এমডিবি তদন্ত করছেন, তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সৃষ্টি করছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে (২০১৭ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৬ শতাংশ, তবে এবছর তা ৫ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে)।

নতুন প্রশাসনের সামগ্রিক প্রত্যাশা উচ্চ থাক সত্বেও মালয়েশিয়া পরবর্তী নেতা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই ভাবতে শুরু করেছে। মাহাথির দুই বছরের মধ্যে আনোয়ার ইব্রাহিমকে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যিনি সাবেক ইউএমএনও সহকর্মী মাহাথির এবং নাজিব উভয়েই দ্বারা বিভিন্ন অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আনোয়ার কারাগার থেকে মুক্ত পেয়েছিলেন এবং জোটের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দল পার্টি কেয়াদিলান র‌্যাকাতকে নেতৃত্ব দেন। মাহাথির বলেছিলেন, দুই বছর পর আনোয়ারকে গ্রহণ করা হবে। আনোয়ার এই প্রস্তাবিত সময় সঠিক ভাবে পালন করা পরও মাহাথির তাঁর কথা রাখেননি।

বাংলা ইনসাইডার/বিপি



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭