ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্য বন্ধ করল যুক্তরাষ্ট্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 02/09/2018


Thumbnail

ফিলিস্তিনি শিবিরে শরণার্থীদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অর্থ সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই ত্রাণ সংস্থায় গুরুতর `গলদ` রয়েছে। ইসরায়েলও বহুদিন ধরেই একই কথা বলে আসছে। ইসরায়েলের সেই অবস্থানের সঙ্গে এখন গলা মিলিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। কিন্তু কথিত এই `গলদ` আসলে কোথায়?

১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়ে পড়ে। তখন তাদের দেখাশোনার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয় ’ইউনাইটেড নেশন্স রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্ক এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন ইন দ্য নিয়ার ইস্ট’ (ইউএনআরডাব্লিউএ) নামের এই সংস্থাটি। বর্তমানে গাজা, পশ্চিম তীর, জর্ডান, সিরিয়া এবং লেবাননে প্রায় ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছে। তাদের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আরও নানা ধরণের সামাজিক সেবামূলক কাজে সহায়তা দেয় জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।

বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের এই সংস্থার প্রধান যোগানদাতা। ২০১৬ সালে বারাক ওবামার সময় যুক্তরাষ্ট্র একাই ইউএনআরডাব্লিউকে প্রায় ৩৭ কোটি ডলার সাহায্য দিয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। ট্রাম্প প্রশাসন গত বছর এই সাহায্য প্রায় ৩০ শতাংশ কমিয়ে দেয়। আর এবার যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র এত সাহায্য করে কিন্তু বদলে ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে কোনো `সম্মান` বা `প্রতিদান` পায়না। এ বছরের গোড়ার দিকে তিনি হুঁশিয়ার করেন, ইসরায়েলের সাথে মীমাংসায় রাজি না হলে, তিনি ফিলিস্তিনিদের সাহায্য বন্ধ করে দেবেন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে - সমস্যা আরও গভীরে। জাতিসংঘের এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলে ফেলে আসা বাস্তু ভিটায় ফেরত যাওয়ার অধিকারকে সমর্থন করে, যেটি নিয়ে বরাবরই ক্ষুব্ধ ইসরায়েল ।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহু অনেকবারই এই সংস্থায় অনুদান কমিয়ে দেওয়ার আহ্বান করেছেন। তার মতে- ইউএনআরডাব্লিউএ ফিলিস্তিনি সঙ্কটকে "আরো বাড়িয়ে তুলছে।" তিনি এমন প্রস্তাবও করেছেন ইউএনআরডাব্লিউএ`র ভূমিকা জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাতে তুলে দেওয়া হোক।

চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে জাতিসংঘের মার্কিন দূত নিকি হেলি বলেন, ইউএনআরডাব্লিউএ সবসময় ফিলিস্তিনি শরণার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে বলে। তিনি খোলাখুলি বলেন, এই সংস্থাটির সংস্কার প্রয়োজন। অসংখ্য শরণার্থী ক্রমাগত সাহায্য নিয়ে চলেছে, কিন্তু যেটা লক্ষণীয় তা হলো, এই ফিলিস্তিনিরাই আবার দিন-রাত যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছে।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এটি ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর এক মারাত্মক আঘাত। কট্টরপন্থী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস বলেছে, এটি ফিলিস্তিনি সংকটকে আরও গুরুতর করে তুলবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুটেরেস এবং জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। মিস্টার গুটেরেস এই ত্রাণ সংস্থার তহবিলে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, তা পূরণে অন্য দেশগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেইকো মাস বলেছেন, তারা তাদের অনুদান বাড়িয়ে দেবেন।

ইউএনআরডাব্লিউ ‘কে যুক্তরাষ্ট্র যে সমালোচনা করেছে, তাকে তীব্র ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে সংস্থাটি। সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস গানেস বলেছেন, "ইউএনআরডব্লিউএ`র স্কুল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং জরুরী সাহায্যের কর্মসূচিকে `শোধরানোর অতীত গলদপূর্ণ` বলে যে বর্ণনা করা হয়েছে আমরা তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এসব কর্মসূচি মধ্যপ্রাচ্যে মানব উন্নয়নে অন্যতম সফল কর্মসূচি হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ জন্য এই সংস্থার প্রশংসা করেছে।"

সূত্রঃ বিবিসি

বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭