ইনসাইড বাংলাদেশ

কঙ্কাল নিয়ে ব্যবসা : সক্রিয় সিন্ডিকেট

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 29/03/2017


Thumbnail

মাদক ও মানব পাচারের পর বাংলাদেশে আরো একটি বিশাল অবৈধ ব্যবসা হিসেবে গড়ে উঠেছে মানব কঙ্কালের অবৈধ ব্যবসা। কবর থেকে অজ্ঞাত ও গলিত লাশ উত্তোলনের পর প্রয়োজনীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করে এসব লাশ থেকে মাংস আলাদা করে বের করে নিয়ে আসা হয় ঝকঝকে মানব কঙ্কাল। এসব কঙ্কাল দেশের মেডিকেলকলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি হওয়ার পাশাপাশি দেশের বাইরেও পাচার হচ্ছে। খবর জনকন্ঠ।

প্রতিবছর এসব মানব কঙ্কাল বিভিন্ন মেডিকেলশিক্ষার্থী ও বাইরে পাচার করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একাধিক সিন্ডিকেট। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, অধিক লাভজনক ব্যবসা বলে এই কাজে জড়িয়ে পড়ছে মেডিকেলর শিক্ষক, শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে অপরাধীরা। তারা বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাঝে মধ্যে কেউ ধরা পড়লেও, গডফাদাররা ধোরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে।

মেডিকেলকলেজের অনেক শিক্ষার্থী জানান, মেডিকেল শিক্ষকদের মাধ্যমে তার ঠিকানা নিয়ে পাঠদানের জন্য কঙ্কাল কিনে থাকেন। একেকটি নতুন কঙ্কাল ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকায় কিনতে হয়।  আবার অনেকে আজিমপুর ও জুরাইন কররস্থানে গোরখোদকের সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার চুক্তিতে কঙ্কাল কেনেন।

ক্রেতার চাহিদা অনুসারে বিক্রেতা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কঙ্কাল নেয়ার স্থান ও ক্ষণ নির্ধারণ করে। এসব কঙ্কাল সংগ্রহ করা হয় রাজশাহী, ময়মনসিংহ, সোহরাওয়ার্দীর মতো সরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে। গাজীপুর, ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কবরস্থান থেকেও এসব কঙ্কাল সরবরাহ করা হচ্ছে।

দেশে বর্তমানে ২২টি সরকারী ও ৫৫টি বেসরকারী মেডিকেলকলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতিবছর ৭ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি হন। এদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ আগের ব্যাচে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কঙ্কাল সংগ্রহ করে থাকেন। বাকি ৪০ ভাগ অর্থাৎ তিন হাজার শিক্ষার্থী প্রতিবছর বাজার থেকে নতুন কঙ্কাল কিনে নেন। প্রতিবছর দেশে মেডিকেল পড়ুয়া তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর জন্য কঙ্কালের চাহিদা  রয়েছে। মেডিকেলযন্ত্রাংশ বিক্রির বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাহিদার কথা জানিয়ে অগ্রিম টাকা দিলেই পাওয়া যায় কঙ্কাল। শুধু তাই নয়, অনেক সময় শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন কবরস্থানে গোরখোদকদের শরণাপন্ন হন। আবার নিজ প্রতিষ্ঠানের চিহ্নিত শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কঙ্কাল কিনে নেন।

বাংলাদেশে কঙ্কাল সংগ্রহের কোন নীতিমালা না থাকায় নানা চক্র অবৈধ উপায়ে এ ব্যবসায় নেমেছে। বর্তমানে নিয়ম অনুযায়ী, শুধু বেওয়ারিশ লাশ কিংবা মৃত্যুর আগে কেউ তার দেহ দান করে গেলে ঢাকা মেডিকেলকলেজে ওই লাশ থেকে প্রসেসিংয়ের মাধ্যমে কঙ্কাল তৈরি করা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা মেডিকেলকলেজ ফরেনসিক বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপকসহ কয়েকজন কঙ্কাল ব্যবসায় জড়িত। পাশাপাশি মিটফোর্ড, সোহরাওয়ার্দী ও কয়েকটি বেসরকারী মেডিকেলকলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীও এই গলা লাশ ও কঙ্কাল কেনাবেচার টাকার ভাগ পান।

এদিকে গলিত লাশ ও কঙ্কাল বিক্রি নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজকে ঘিরে রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। মর্গের বাইরে চা-সিগারেটের এক দোকানদার এই কঙ্কাল ব্যবসার ব্যাপারি হিসেবে পরিচিত। চা-সিগারেটের ব্যবসার আড়ালে লাশ ও কঙ্কালের জমজমাট ব্যবসা করছে। তার এ অবৈধ ব্যবসায় সহযোগী রয়েছে কয়েকজন।

যদিও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মেড্যিাকল কলেজ হাসপাতালে আসা বেওয়ারিশ লাশ কলেজের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যবহার করা হয়। লাশগুলো হস্তান্তরের জন্য অন্তত এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। যদি কোন ওয়ারিশ না পাওয়া যায় তাহলে লাশের ছবি তুলে রেখে তা ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করা হয়। সেটি মেডিক্যাল কলেজের বিষয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের লাশকাটা ঘর থেকে ১৫টি মানব কঙ্কালের বিভিন্ন অংশ উদ্ধার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। একই বছর ৫ নভেম্বর রাতে রাজধানীর  কাফরুল থানাধীন পূর্ব কাজীপাড়ার একটি ফ্ল্যাট থেকে ৩২টি কঙ্কাল ও ৮টি গলিত মানবদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

বাংলা ইনসাইডার/এসএফ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭