কালার ইনসাইড

চলচ্চিত্রে ফ্রেডি মার্কারির রহস্যময় জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 05/09/2018


Thumbnail

সত্তরের দশকে রক সংগীতকে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় করার পেছনে যেসব ব্যান্ডের অবদান ছিল, তাদের মধ্যে অন্যতম ব্যান্ড ‘কুইন’। ১৯৭০ সালে ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রধান গায়ক ছিলেন ফ্রেডি মার্কারি। শক্তিশালী গায়কী, গান লেখার ক্ষমতা ও স্বতন্ত্র মঞ্চ পরিবেশনার জন্য ব্যান্ড ছাপিয়ে ফ্রেডি হয়ে ওঠেন বিশ্ব রক সংগীতের কিংবদন্তি। তাঁরই লেখা গান ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’ রক সংগীতের এক অনন্য মাস্টারপিস। ১৯৭৫ সালে কুইনের ‘অ্যা নাইট অ্যাট দ্য অপেরা’ অ্যালবামে গানটি প্রকাশিত হয়। সর্বকালের সেরা ১০টি রক গানের মধ্যে গানটির অবস্থান দ্বিতীয়। এই গানের একই শিরোনামে সম্প্রতি ছবি নির্মিত হয়েছে হলিউডে।

‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’ ছবিতে মূলত ফ্রেডি মার্কারির জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। তাঁর সংগীত ও রহস্যে ঘেরা ব্যক্তিগত জীবনের নান দিক পর্দায় তুলে ধরেছেন পরিচালক ব্রায়ান সিঙ্গার। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ছবিটির ট্রেলার। আজ ৫ সেপ্টেম্বর ফ্রেডি মার্কারির জন্মদিনে বিশ্ব গণমাধ্যমের আলোচনায় ফ্রেডি মার্কারি এবং তাঁকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’।

ফ্রেডি মার্কারির প্রকৃত নাম ফারুখ বুলসারা। ১৯৪৬ সালে আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় এক পার্সি পরিবারে তাঁর জন্ম। তবে তাঁর পারিবারিক শেকড় ভারতের গুজরাটে। বাবার চাকরি সূত্রে ৮ বছর বয়স পর্যন্ত তানজানিয়ায় ছিলেন ফ্রেডি। এরপর সপরিবারে ভারতে ফিরে আসেন। ভারতেই মূলত তাঁর সংগীতের হাতেখড়ি। মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্সবার্গ স্কুলে পড়ার সময় লতা মঙ্গেশকরের গান তাঁকে অনুপ্রেরণা যোগায়। সংগীতের বৈচিত্রতা খুঁজতে পরিচিত হন পশ্চিমা ধ্রুপদী সংগীতের সঙ্গে। কিন্তু ভারতেও তাঁদের থাকা হয়নি বেশীদিন। ১৯৬৪ সালে ১৭ বছর বয়সে সপরিবারে পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। এরমধ্যে ফ্রেডি পিয়ানো, গিটার ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ওপর দখল নেন। ইংল্যান্ডে গ্রাফিক্স ডিজাইনে স্নাতক সম্পন্ন করে বান্ধবীর সঙ্গে পুরনো কাপড়ের ব্যবসায় নেমে পড়েন। সঙ্গে বিভিন্ন ব্যান্ডের সঙ্গে ফ্রেডির গান-বাজনাও চলতে থাকে। কয়েকটি ব্যান্ডে কাজ করার পর সত্তরের দশকের গোড়ার দিকে শুরু হয় সেই মহাকাব্যিক ব্যান্ড ‘কুইন’ এর যাত্রা। আর তৈরি হয় বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি, উই উইল রক ইউ, কিলার কুইন, উই আর দ্য চ্যাম্পিয়ন এর মতো বিশ্ব কাঁপানো সব গান।

আশির দশকে বাংলাদেশেও কুইন ও ফ্রেডি মার্কারির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বহু ব্যান্ড গঠিত হয়। বাংলাদেশে কুইনকে জনপ্রিয় করার অন্যতম কান্ডারি নগর বাউল খ্যাত ‘জেমস’। ১৯৮৭ সালে জেমস কুইনের ‘আই ওয়ান্ট টু ব্রেক ফ্রি’ গানের সুরের সঙ্গে মিল রেখে রচনা করেন ‘দুরন্ত মেয়ে’ শিরোনামের একটি গান। ‘ঐ দূর পাহাড়ে’ কথার এই গানটি ব্যান্ড সংগীতের শ্রোতাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ব্যান্ড কুইন আর কিংবদন্তি ফ্রেডি মার্কারি।

বেশ গুপ্ত ও রহস্যময় জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন ফ্রেডি মার্কারি। জীবনের নানান প্রতিকূলতা ও মানসিক সমস্যার মধ্য দিয়ে কেটেছে তাঁর জীবন। একসময় তিনি মাদক ও সমকামিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েন। বান্ধবীদের সঙ্গে দুরুত্ব বাড়িয়ে ঝুঁকে পড়েন সমকামী বন্ধু অস্টিনের প্রতি। একসময় প্রথা ভেঙে অস্টিনকে বিয়েও করেন। এছাড়া সমকামীদের বিভিন্ন ক্লাবে ছিল তাঁর অবাদ যাতায়াত। ১৯৮৭ সালে তাঁর শরীরে এইচআইভি ধরা পড়ে। দীর্ঘদিন বিষয়টি লুকিয়ে রাখার পর ১৯৯১ সালে তিনি এক বিবৃতিতে এইডসে আক্রান্ত হওয়ার কথা প্রকাশ করেন। রহস্যজনকভাবে বিষয়টি প্রকাশ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফ্রেডি।

নিজের জীবনের মতো ফ্রেডির লেখা গানেও প্রকাশ পায় দুর্বোধ্যতা। জীবদ্দশায় ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’ গানের মর্মার্থ কখনোই প্রকাশ করেননি ফ্রেডি। অনেকে মনে করেন এই গানে তাঁর জীবনের প্রভাব রয়েছে। কথা, সুর, সঙ্গিতায়োজনে আজও বিশ্বের রক শ্রোতাদের কাছে ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’ এক মহাকাব্যিক গান।

আট বছর আগে ২০১০ সালে ফ্রেডি মার্কারিকে নিয়ে ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসডি’ শিরোনামে ছবি নির্মাণের ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ফ্রেডির চরিত্রের জন্য যোগ্য অভিনেতা খুঁজে না পাওয়া এবং পরিচালক জটিলতার কারনে ছবির কাজ পিছিয়ে যায়। ছবিতে ফ্রেডি মার্কারির চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘মি. রোবট’ খ্যাত অভিনেতা র‍্যামি মালেক। চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর যুক্তরাজ্য এবং ২ নভেম্বর বিশ্ব জুড়ে ছবিটি মুক্তি দেওয়া হবে। 

সূত্রঃ রোলিং স্টোন, বিলবোর্ড ও উইকি

বাংলা ইনসাইডার/ এইচপি  

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭