লিভিং ইনসাইড

খাবার যদি গলায় আটকে যায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/09/2018


Thumbnail

আমাদের মানবদেহের গলার ভিতর শ্বাসনালি ও খাদ্যনালি একেবারে পাশাপাশি থাকে। আর তাই খাওয়ার সময় শ্বাসনালির ওপরের অংশটি নিজে থেকে ঢাকা পড়ে। তাই বিস্কুট, মুড়ি, কেকজাতীয় শুকনো খাবার খেতে, তাড়াহুড়া করে খেতে, খাবার সময় কথাবার্তা বললে বা অন্য কোনো কাজ করলে খাবার খাদ্যনালিতে না গিয়ে শ্বাসনালিতে ঢুকে পড়তে পারে। এর ফলে শ্বাসনালি বন্ধ হয়ে মৃত্যুও হতে পারে।

কী করণীয়

গলায় খাবার আটকে গেলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা বেশ ঘাবড়ে যাই, গলায় আঙুল ঢুকিয়ে খাবার বের করে আনার চেষ্টাও করি। তবে বেসিক লাইফ সাপোর্ট জানা লোক ছাড়া নিজে বা অন্য কাউকে দিয়ে গলার খাবার বের করতে যাবেন না। এতে করে হিতে বিপরীত ঘটবে। এসময় দ্রুত ব্যবস্থা নিন। নয়তো জটিলতা বাড়বে।

হেইমলিচ ম্যানইউভার

শ্বাসনালিতে খাদ্য আটকে গিয়ে দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেতে বিখ্যাত আমেরিকান ইএনটি(নাক, কান, গলা) বিশেষজ্ঞ হেনরি হেইমলিচ ১৯৭৪ সালে একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে এটি বেশ কার্যকর হয়। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ ‘হেইমলিচ ম্যানইউভার’। একটু সতর্ক হয়ে এ পদ্ধতি অবলম্বন করলে ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

আপনার পাশে কেউ আক্রান্ত হলে কি করবেন

সবার আগে একটু ধীরে সুস্থে পরিস্থিতিকে সামলান। আক্রান্ত ব্যক্তিকে ভরসা দিন যাতে সে ভয় না পায়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির পিছনে সোজাভাবে দাঁড়াতে হবে। পিছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বুক আর পেটের মধ্যখানে জোরে চেপে ধরে চাপটি ওপর দিকে সঞ্চালিত করতে হবে। এতে করে আক্রান্ত ব্যক্তির কাশির সৃষ্টি হবে এবং গলায় আটকে থাকা খাবার বস্তু মুখ দিয়ে কাশির সঙ্গে বেরিয়ে আসে।

শিশুদের ক্ষেত্রে কী করবেন

নবজাতক বা দুই-আড়াই বছর বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটলে একটু বেশি সাবধান হতে হবে। এজন্য প্রথমে শিশুটিকে বাঁ হাতে নিতে হবে। এরপর পিঠের দিকটা যাতে ওপরের দিকে আর মুখ মেঝের দিকে থাকে এবার আপনার ডান হাতের তালু দিয়ে পিঠের দিকে কাঁধের ওপর তিন-চারটি চাপড় মারুন। এতে মুখ দিয়ে আটকানো খাবার বেরিয়ে আসবে। আর এতে যদি কাজ না হয় তাহলে শিশুটিকে চিত করে শুইয়ে দিন এবং দুই আঙুল দিয়ে অল্প চাপে বুকের মাঝখানে মালিশের মতো মুখের দিকে চাপ সঞ্চালন করতে হবে। তারপর আবার আগের মতো বাঁ হাতে রেখে তিন-চারটি চাপড় মারুন। এতে করে শিশুর মুখ দিয়ে খাবার বেরিয়ে যাবে।

আপনি আক্রান্ত হলে কি করবেন

এ ধরনের আপনি যখন নিজে আক্রান্ত হবেন তাহলে শান্ত থাকুন। ঘটনার সময়ে আশপাশে কেউ না থাকলে একটি চেয়ার নিয়ে চেয়ারের যেদিকে হেলান দেওয়া হয় সেটা পেট আর বুকের মাঝখানে চেপে রেখে ওপরের দিকে চাপটি সঞ্চালিত করতে হবে। এতে করে কাশির সৃষ্টি হবে। ফলে কাশির সঙ্গে আটকে থাকা খাবার বেরিয়ে আসবে।

কিছু সতর্কতা মেনে চলুন

১. আমরা খাওয়ার সময় অনেকটা সময় লাগাই, গড়িমসি করি, সঙ্গে অন্য কাজও করি। কিন্তু খাওয়ার সময়ে খাওয়ার দিকেই শুধু মন দিন। অযথা কথাবার্তা বা গল্পগুজব করে কখনো খাওয়ার সময় নষ্ট করবেন না। এতে গলায় খাবার বেধে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

২. খাবার ধীরে ধীরে খাবেন। আর অবশ্যই খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে ছোট টুকরো করে খান। খাবার আটকে যেতে পারে বুঝতে পারলে একটু পানি খেয়ে নিতে পারেন।

৩. কারও যদি শ্বাসকষ্টের সামান্য সমস্যাও থাকে তাহলে মুড়ি, চিড়া ও বিস্কুটের মতো শুকনা খাবার একটু এড়িয়ে চলুন।

৪. শিশুদের গলায় কিছু আটকে গেলে মুখে আঙুল ঢুকিয়ে বের করার চেষ্টা না করে কিছুটা ঠাণ্ডা পানি খাইয়ে দিন। তারপর চেষ্টা করুন।

৫. অধৈর্য হয়ে বা তাড়াহুড়া করে শিশুদের মুখে খাবার দেবেন না। এতে বেশি পরিমাণ খাবার তার গলায় আটকে শিশুর ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হতে পারে।

৬. যাদের গলায় চর্বি জমে থাকে বা যারা অতিরিক্ত মোটা লোক, তাদের গলায় খাবার আটকানোর প্রবণতা বেশি থাকে। তাই এ সমস্যা এড়াতে ওজন বা গলার চর্বি কমানোর চেষ্টা করুন।


বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭