ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রবার্ট মুগাবে: ৩৭ বছর পর স্ত্রীর কারণে ক্ষমতাচ্যুত

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 07/09/2018


Thumbnail

গ্রেস মুগাবে, জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের স্ত্রী। নানা কাণ্ডে তিনি থাকতেন আলোচনায়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে এক মডেল অভিনেত্রীর মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছিলেন গ্রেস। এতে দেশটির পুলিশ সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করে, যাতে তিনি বের হতে না পারেন। এর জবাবে তাঁর স্বামী দক্ষিণ আফ্রিকার যাত্রীবাহী বিমান জিম্বাবুয়েতে অবতরণ আটকে দেন। একই সঙ্গে জিম্বাবুয়ে থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাগামী বিমানের উড্ডয়নও স্থগিত করেন। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকে ছেড়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। 

স্ত্রীর এমন উদ্ভট সব কর্মকাণ্ডের কারণে দীর্ঘ ৩৭ বছর জিম্বাবুয়ে শাসনের পর জনরোষ আর সামরিক চাপের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন রবার্ট মুগাবে।

বলা হয়ে থাকে, নিজের অজনপ্রিয়তা নয়, বরং স্ত্রীর কারণেই পদত্যাগ করতে হয়েছিলো তাকে। দেশটির কয়েকটি বিশেষ মহলের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মুগাবের দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রেস মুগাবে। ৯৪ বছর বয়সী মুগাবে নিজের রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী হিসেবে দেশের ক্ষমতায় স্ত্রীকেই দেখতে চেয়েছিলেন।

বয়সে ৪১ বছরের ছোট গ্রেসের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট মুগাবে যখন প্রেম শুরু করেন তখন তিনি ছিলেন স্টেট হাউজের একজন টাইপিস্ট। মুগাবের প্রথম স্ত্রী স্যালি তখন অসুস্থ ছিলেন। পরে ১৯৯২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৯৬ সালে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রেসকে বিয়ে করেন মুগাবে। এই দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে।

রবার্ট মুগাবে ২০১৪ সালে তাঁর দল জানু পি-এফ পার্টির মহিলা শাখার প্রধান করেন গ্রেসকে। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য বরাবরই সমালোচিত ছিলেন মুগাবে দম্পতি। স্ত্রীর বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডেও সবসময়ই প্রেসিডেন্টের সমর্থন থাকত।

গ্রেসের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ আছে, মুগাবের প্রভাবে ইউনিভার্সিটি অফ জিম্বাবুয়ে থেকে   ডিগ্রিটি অর্জন করেন তিনি। এই দম্পতির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আদালত সমলিঙ্গের বিয়ের বৈধতা দেওয়ায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে কৌতুক করেছিলেন মুগাবে। সমকামিতার কট্টর বিরোধী মুগাবে বলেছিলেন, যেহেতু ওবামা সমলিঙ্গের বিয়ের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন, আমি হোয়াইট হাউসে গিয়ে হাটু গেড়ে বসে তাঁর পাণি প্রার্থনা করব।’

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারকে তাচ্ছিল্য করে মুগাবে বলেছিলেন, ‘ব্লেয়ার কে? সে হলো একজন প্রধানমন্ত্রী। আর আমি হলাম প্রেসিডেন্ট!’

দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশার জন্য মুগাবে সব সময়ই পশ্চিমা দেশগুলোর ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেছেন। তিনি বারবার অভিযোগ করেছেন, পশ্চিমারা তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র হিসেবে অর্থনৈতিক দুর্দশার মিথ্যা চিত্র তুলে ধরে।

মুগাবে প্রায়ই বলতেন, একটি দেশ কখনো দেউলিয়া হয় না। ২০০৮ সালের জুলাই মাসে তার দেশে মূল্যস্ফীতি হার ছিল ২ কোটি ৩১ লাখ শতাংশ। তখনো তিনি তার নিজস্ব তত্ত্বের ওপর অনড় থেকে মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করেন কিন্তু ব্যর্থ হন।

২০০০ সালে প্রথমবার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাপে পড়েন মুগাবে। গণভোটে পরাজিত হন তিনি। সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম হার। সেই পরিস্থিতি সামাল দিতে তিনি নিজস্ব মিলিশিয়া বাহিনী মাঠে নামিয়ে নির্বাচনী সহিসংতা ও হত্যাকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতা নিশ্চিত করেন। সেসময় অর্থনীতির মূল শক্তি শ্বেতাঙ্গদের খামারগুলোও অধিগ্রহণ করেন মুগাবে। কিন্তু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে খামারগুলো অলাভজনক খাতে পরিণত হয়।

২০০৮ সালে নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট মুগাবে বলেছিলেন, ‘যদি আপনি নির্বাচনে হারেন এবং জনগণের কাছে প্রত্যাখ্যাত হন, তাহলে অবশ্যই রাজনীতি ছেড়ে দিতে হবে।’ কিন্তু প্রথম দফার নির্বাচনে হেরে দ্বিতীয় দফায়ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মরগান টিএসভাঙ্গারাইয়ের বিজয়ের সম্ভাবনা দেখা দিলে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মুগাবে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তিনি সহিংসতার পথ বেছে নেন। সেসময়ে এক বক্তব্যে তিনি বলেন, একমাত্র ঈশ্বরই আমাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে।‘

মুগাবের শাসনামলে জিম্বাবুয়ের সব সরকারি প্রতিষ্ঠানই ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল জানু-পিএফ পার্টির দখলে। গণমাধ্যম থেকে সংস্কৃতি সবকিছুই চলত প্রেসিডেন্টের দেখানো পথে।

৩৭ বছরের শাসনামলে জিম্বাবুয়েতে শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন মুগাবে। দেশটির শিক্ষার হার ৮৯ শতাংশে উন্নীত করেছিলেন তিনি, আফ্রিকার মধ্যে যা সর্বোচ্চ। কিন্তু এই বিশাল শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তিনি করতে পারেননি।

একজন দরিদ্র কাঠমিস্ত্রীর পুত্র মুগাবে প্রায়ই বলতেন, তিনি গরিবের জন্য লড়াই করছেন। কিন্তু তাঁরই অনুসারীরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভিটেমাটি, কৃষিজমি কেড়ে নিত।

অস্বাভাবিক কথা ও আচরণের জন্য বিখ্যাত মুগাবে উদ্ভট পোশাক-আশাকের কারণেও সংবাদের শিরোনাম হতেন। জাকজমকপুর্ণভাবে জন্মদিন পালন করতেন তিনি।

ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৮০ সালে জিম্বাবুয়েকে স্বাধীন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন মুগাবে। সেই বিপ্লবী নেতাই স্ত্রীর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে খলনায়কে পরিণত হয়ে নেতৃত্ব হারান।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭