ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

৯/১১: কী ঘটেছিল সেদিন?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/09/2018


Thumbnail

হাইস্কুলের শিক্ষক জন টেস্কো। কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় এক বন্ধুর ফোন পেলেন। বন্ধু যা বললেন তা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না জন। এরপর টিভিটা অন করতেই যা দেখলেন, তাতে হতভম্ব হয়ে গেলেন। বুঝতে পারছিলেন না, সেগুলো সত্যিই ঘটছে নাকি হলিউডের কোনো সিনেমার দৃশ্য। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর বেশিরভাগ মার্কিনির দিনটা শুরু হয়েছিল এভাবেই।

১৭ বছর আগের এইদিনেই আত্মঘাতী বিমান হামলায় ধ্বংস হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যা টুইন টাওয়ার নামেও পরিচিত। হামলা চালানো হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশেও। সন্ত্রাসীরা চারটি বিমান ছিনতাই করে ওই হামলা চালিয়েছিল। এতে অন্তত ৯০টি দেশের তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। ওই ঘটনায় আহত হয়েছিলেন অন্তত ১০ হাজার। এছাড়াও বহু মানুষ আছেন যারা এখনও ট্রমা কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন চার বিমানের ২৬৫ যাত্রী, বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র ও আশপাশের ২ হাজার ৬শ’ ৬ জন ও পেন্টাগনের ১৮৪ জন। উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে প্রাণ হারান চার শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও অগ্নিনির্বাপককর্মী।

১৯ জনের একটি সন্ত্রাসী দল চারটি বিমান ছিনতাই করে ওই সিরিজ হামলা চালিয়েছিল। সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে লোগান বিমানবন্দর থেকে লস অ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ১১। বিমানটিতে ১১ জন ক্রু ও ৭৬ জন সাধারণ যাত্রী ছিলেন। পাঁচ ছিনতাইকারী বোয়িং ৭৬৭ বিমানটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এরপরই মূল রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সেটি। প্রায় বিশ হাজার গ্যালন জেট ফুয়েল থাকা বিমানটি কিছুক্ষণ পরেই নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নর্থ টাওয়ারের ৮০ তলায় আঘাত হানে। এতে ১১০ তলা ভবনটি মুহূর্তের মধ্যেই ধসে পড়ে। তখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না মার্কিনিরা। অনেকে আবার এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। কিন্তু ১৮ মিনিটের ব্যবধানে তাদের ধারণা পাল্টে যায়। সকাল ৯টা ৩ মিনিটে বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের সাউথ টাওয়ারের ৬০ তলায় হামলা চালায় আরেকটি বিমান। বিস্ফোরণে ভবনটির বিভিন্ন অংশ আশপাশের স্থাপনার উপর ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বিতীয় বিমান হামলার জন্য ছিনতাই করা হয়েছিলো ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ১৭৫ ফ্লাইটের আরেকটি বোয়িং ৭৬৭ বিমান।  লস অ্যাঞ্জেলসগামী বিমানটি সকাল ৮টা ১৫’তে যাত্রা শুরু করেছিল। বিমানটিতে ৯ জন ক্রু ও ৫১ জন সাধারণ যাত্রী ছিল।  পাঁচজন ছিনতাইকারী বিমানটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ওই হামলা চালায়। 

তৃতীয় আরেকটি বিমান মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনে আক্রমণ করে। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪৩ মিনিটে ওই হামলা চালানো হয়। আমেরিকান এয়ারলাইন্স ৭৭ ফ্লাইটের বিমানটি ওয়াশিংটন ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সকাল ৮টা ২০ মিনিটে লস অ্যাঞ্জেলসের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। বোয়িং ৭৫৭ মডেলের বিমানটিতে ৬ জন ক্রুসহ মোট ৫৩ জন যাত্রী ছিলেন। পাঁচজন সন্ত্রাসী সেটি ছিনতাই করে।

নিউজার্সির ন্যুয়ার্ক লিবার্টি বিমানবন্দর থেকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট ৯৩ সানফ্রান্সিসকোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। উড্ডয়নের ৪০ মিনিটের মধ্যেই বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় চার সন্ত্রাসী। বিমানটিতে ৭ ক্রু ও ৩৩ জন সাধারণ যাত্রী ছিলেন। বিমানটি দেরিতে যাত্রা করায় টুইন টাওয়ারে হামলার বিষয়টি যাত্রীরা আগেই জেনে গিয়েছিলেন। ছিনতাইকারীরা বিমানটি নিয়ন্ত্রণে নিলে তারা বুঝতে পারেন আরেকটি হামলার চালানো হচ্ছে। সেসময় কয়েকজন যাত্রী অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র নিয়ে ককপিটে ছিনতাইকারীদের ওপর হামলা করেন। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৩ মিনিটে পেনসিলভানিয়ার একটি মাঠে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

ধারণা করা হয়, সন্ত্রাসীরা বিমানটি নিয়ে হোয়াইট হাউস, মেরিল্যান্ডে প্রেসিডেন্টের অবকাশ যাপন কেন্দ্র ‘ক্যাম্প ডেভিড’ কিংবা দেশটির পশ্চিম উপকূলে থাকা কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে যাচ্ছিলেন।

৯/১১ এর ভয়ানক ওই হামলার ঘটনায় শুধু মার্কিনিরাই নন, স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। বদলে যায় বিশ্ব রাজনীতির চিত্রপট। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধের অংশ হিসেবে আফগানিস্তান, ইরাকসহ বেশ কয়েকটি দেশে আক্রমণ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির নতুন প্রজন্মের ওপর নাইন ইলেভেনের প্রভাব না পড়লেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশগুলোর শিশুরা ঠিকই বয়ে বেড়াচ্ছে এর ক্ষত।

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭