ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

৯/১১: মিডিয়ার জন্য যা শিক্ষণীয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 11/09/2018


Thumbnail

পৃথিবীতে স্মরণকালের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলাটি ঘটেছিল আজকের দিনে, ১১ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে। চারটি বিমান ছিনতাই করে চালানো ওই হামলায় অন্তত ৯০টি দেশের তিন হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। আহত হয়েছিল আরও অন্তত ১০ হাজার মানুষ। ওই হামলায় ধসে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অহংকার ও আভিজাত্যের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, যা টুইন টাওয়ার নামেও পরিচিত। হামলা চালানো হয়েছিল মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর পেন্টাগনের পশ্চিম অংশেও।

৯/১১ হামলায় নিউইয়র্কেই নিহত হয়েছিলেন ২ হাজার ৭৫০ জন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সদরদপ্তর পেন্টাগনে প্রাণ হারান ১৮৪ জন। ছিনতাই করা একটি বিমান পেনসিলভানিয়ায় বিধ্বস্ত হয়, যেখানে নিহত হন আরও ৪০ জন। এছাড়া উদ্ধার কাজ চালানোর সময় মারা যান চার শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও অগ্নিনির্বাপণকর্মী। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সন্ত্রাসী হামলায় এত বিপুল সংখ্যক মানুষ নিহত হলেও তাদের কোনো ছবি বা ভিডিও পাওয়া যায়নি। কোন মৃতদেহের বা আহতদের কারও ছবি প্রকাশ করেনি মার্কিন মিডিয়া। এমনকি হামলার পর আহত বা নিহতদের উদ্ধার কাজেরও কোনো ছবি কিংবা ভিডিও প্রচার করেনি মার্কিন মিডিয়া।

শুধু ৯/১১ এর ঘটনাই নয়, ২০১৫ এর নভেম্বরে ফ্রান্সের প্যারিসে সিরিজ হামলায় নিহত হন অন্তত ১৩০ জন। ২০১৬’তে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় নিস শহরের একটি উৎসবে জড়ো হওয়া জনতার ওপর ট্রাক হামলার ঘটনায় শিশুসহ প্রাণ হারায় অন্তত ৮৪ জন। এগুলোর কোনটিরই  রক্তমাখা লাশের ছবি পাওয়া যায়নি। এছাড়াও উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে যত সন্ত্রাসী হামলা বা বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে কোনটিরই লাশ বা রক্তের বীভৎস কোনো ছবি প্রচার করেনি গণমাধ্যমগুলো। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, নিহতদের বিকৃত রক্তমাখা ছবি প্রচার করাটা অমানবিক। কিন্তু এই মিডিয়াগুলোই আবার মধ্যপ্রাচ্য বা নিজ ভূখণ্ডের বাইরের কোনো দেশে সন্ত্রাসী হামলা বা দুর্ঘটনার বীভৎস ছবি প্রকাশ করছে।

বিশ্লেষকরা বলেন, পশ্চিমা মিডিয়াগুলো দেশের স্বার্থ ও ভাবমূর্তির বিষয়টিকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। এ কারণে নিজ দেশের মধ্যে সংগঠিত কোনো হামলা বা দুর্ঘটনায় আক্রান্তদের ছবি প্রকাশ করে না তারা। অথচ আমাদের দেশের গণমাধ্যমগুলোর চিত্র একেবারেই ভিন্ন। রক্তমাখা লাশের স্তূপের ছবি বা ভিডিও প্রচার করাটাকে কৃতিত্ব হিসেবে গণ্য করা হয় এখানে। এ ধরনের ছবি নিহত বা আহতদের পরিবারগুলোর ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে, এ বিষয়টিকে বিবেচনাই করা হয় না। দেশের ভাবমূর্তির বিষয়টিও গুরুত্ব পায় না কারও কাছে। ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সম্প্রচারের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে মিডিয়াগুলো। গণমাধ্যম কর্মীদের এমন আচরণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং উদ্ধারকর্মীদের কাজেও বিঘ্ন ঘটায়। হলি আর্টিজন হামলা বা রানা প্লাজার দুর্ঘটনা এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ।

নিজ দেশের স্বার্থহানী বা ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এমন সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকে উন্নত বিশ্বের মিডিয়াগুলো। তাদেরকেই আমরা মুক্ত গণমাধ্যমের প্রতীক হিসেবে গণ্য করি। কিন্তু আমরা কতটুকু অনুসরণ করি তাদের? স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের বুলি আওড়ায় অনেকেই, কিন্তু দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ করে ক’জন?


বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭