ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

নতুন স্নায়ুযুদ্ধে হারছে চীন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/09/2018


Thumbnail

সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের কথা উল্লেখ করে চীনের নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক বৈধতার জন্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অপরিহার্য। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সামান্য লাভের আশায় চীন কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্বাভাবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে। এসময় সরকারের কূটনৈতিক মহল মিখাইল গর্বাচেভের ওপর অসংখ্য দোষ দিয়েছিল। অথচ এই সংস্কারবাদী নেতাই সোভিয়েত ইউনিয়নকে এক সঙ্গে রাখার বিষয় নিয়ে অতটা নিষ্ঠুর ছিলেন না। তাছাড়া দেখা যায়, নিন্মগামী অর্থনীতি সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের একমাত্র কারণ ছিল না। এবাদেও তারা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যয়বহুল এবং অপ্রতুল অস্ত্র প্রতিযোগিতায় আকৃষ্ট হয়ে এর মধ্যে মনোনিবেশ করে, সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের মধ্যে পড়ে এবং সরকারি অর্থ ও সম্পদের কৌশলগত ও দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক অপব্যবহারের ফলে অস্তিত্ব হারায়।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সেই অন্ধকারাচ্ছন্নতা সম্পর্কে বুঝতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে চীনের নেতারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেছিলেন, যার অনেকগুলোই তাদের কাছে উপযুক্ত মনে হচ্ছে।

চীনের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিসি) নিশ্চিতভাবেই আত্মস্থ করতে পেরেছিল, রাজনৈতিক বৈধতার জন্য শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অপরিহার্য। একারণে তারা গত কয়েক বছর ধরে জিডিপি বৃদ্ধির ওপর নজর দিয়েছিল এবং এটাই ছিল তাদের একমাত্র ফোকাস পয়েন্ট। এর ফলে চীনের অর্থনীতিতে অলৌকিক উন্নতি সাধন হয়েছে। দেখা যায়, ১৯৯১ সালে চীনের মাথাপিছু আয় ছিল ৩৩৩ ডলার, গতবছর সেটা ৭,৩২৯ ডলারে উন্নীত হয়েছে। চীনে সিপিসি ক্ষমতায় আসার এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে চীন। আর এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো চীনও কি একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে যাচ্ছে।

প্রথম দেখায় মনে হবে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো ধরনের অস্ত্র প্রতিযোগিতা অংশ নিচ্ছে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা খাতের বার্ষিক বাজেট ৭০০ বিলিয়ন ডলার, যেখানে চীনের বাজেট ১৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের এক-চতুর্থাংশ মাত্র। কিন্তু ভাল ভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, চীনের প্রকৃত সামরিক ব্যয় তাদের বাজেটের তুলনায় অনেক বেশি। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, চীন গত বছর তার সামরিক খাতে ২২8 বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে, যার মধ্যে ১৫১ বিলিয়ন ডলারই কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বিষয়টি এমন নয় যে, চীন তার প্রতিটি অস্ত্রের জন্য কত ব্যয় করল। বরং চীনের সামরিক ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে। আর এই যুদ্ধে জয়লাভের জন্য এখনো চীন পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করতে পারেনি। আর যে পরিমাণ অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করেছে তাও পুনপুন উৎপাদনে সক্ষম নয়।

যদি চীন একটি ক্রমবর্ধমান স্থায়ী অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করতে পারে এবং তা ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তবে এই স্নায়ুযুদ্ধ দেশটিকে জয়ের পথে নিয়ে যাবে। কিন্তু চীন এখনো ক্রমবর্ধমান স্থায়ী অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠতে পারেনি, অর্থনীতিকে ধরে রাখা তো দূরের কথা। একারণে এই যুদ্ধে চীনের হার নিশ্চিত।

সম্প্রতি চীন পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য ৬২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই প্রকল্পটি পাকিস্তানকে তার দুর্ভোগের ভারসাম্যহীন সঙ্কট মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। তবে একই সঙ্গে এই প্রকল্পটি চীনের সরকারের অর্থ খাতকেও হুমকির সম্মুখীন করবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো চীনও কয়েকটি বন্ধু রাষ্ট্রের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ খরচ করছে, যা কেবল সীমিত সুবিধা ভোগের আশায় করা হচ্ছে। এছাড়া চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্থির অস্ত্র প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়ছে। আর এটা চীনের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের মতোই হুমকি স্বরূপ। চীন-যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ মাত্র শুরু হয়েছে, আর এরই মধ্যে চীনের নেতারা দাবি করছে, দেশটি তার পথ হারাতে শুরু করেছে।

লেখক: চীনের ক্লারেমন্ট ম্যাককেনা কলেজ এর অধ্যাপক এবং ‘চায়না ক্রোনি ক্যাপিট্যালিজম’ বইয়ের লেখক।


বাংলা ইনসাইডার/বিপি/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭