ইনসাইড আর্টিকেল

দুই দেশের দুই নেতা: অনৈতিকতায়ই মিল তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 20/09/2018


Thumbnail

সমকামিতাসহ যেকোনো বিতর্কিত যৌন সম্পর্ক প্রসঙ্গে পোপ ফ্রান্সিস একবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘এ বিষয়টি বিচার করার আমি কে?’ রাজনৈতিক নেতাদের অতীতকালের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমাদেরও কি একই রকম অ-বিচারিক পন্থা অবলম্বন করা উচিৎ?

প্রশ্নটি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য দুই দেশের ক্ষেত্রেই প্রাসঙ্গিক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই তার দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি হতে পেরেছেন। অন্যজন সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁরও দেশের ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌঁছানোর উচ্চাভিলাষ রয়েছে। দুই দেশের এই দুজন নেতাই কট্টর জাতীয়তাবাদী। আরও একটি ক্ষেত্রে তাদের মিল রয়েছে। যৌন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে তাঁরা দুজনই অক্ষম।  

ট্রাম্পের বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্কের বিষয়ে সকলেই জানেন। নিজের যৌন সঙ্গীদের মুখ বন্ধ রাখতে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও তা প্রকাশ পেয়ে যায়।

জনসনের বিষয়টি কিছুটা ভিন্ন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, অবৈধ সম্পর্কের কারণে  তাঁর স্ত্রী তাকে মারধোরও করেছিলেন। প্রশ্ন হলো, অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকার বিষয়টি কি জানসনের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে? যদিও তাঁর প্রচারণার মূল বিষয়বন্তু ছিল, যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের করে আনা। 

যৌন জীবনের উপর ভিত্তি করে একজন রাজনৈতিক নেতাকে বিচার করা কি ঠিক?  আমার উত্তর হলো, ‘না’।

যৌন হয়রানি বা নির্যাতনের মতো বিষয়গুলো অবশ্যই একজন নেতা সম্পর্কে আমাদের মূল্যায়নকে প্রভাবিত করে। কিন্তু ট্রাম্পকে যেভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, জনসনের ক্ষেত্রে সেটা হচ্ছে না। বস্তুত আমরা নৈতিকতার বাহক হিসেবে কাজ করার জন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নির্বাচিত করি না। যদিও এ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। একজন অবিশ্বস্ত স্বামীও দক্ষ নেতা হতে পারেন। আবার একজন বিশ্বস্ত স্বামীও নেতা হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থতার পরিচয় দিতে পারেন।

ব্যক্তিগত জীবন বাদেও ট্রাম্প এবং জনসন দুজনের নেতৃত্বেই বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। জনসন গত জুলাইয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে পদত্যাগ করেছিলেন তিনি। ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রত্যাহার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে নমনীয় নীতির সমালোচনা করেছিলেন তিনি। ব্রেক্সিট ইস্যুতে শক্ত নীতির পক্ষে থাকলেও তাঁর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল হতাশাজনক। 

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও সস্তা কৌতুক করতে পছন্দ করেন জনসন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে থাকাকালীন তিনি যুক্তরাজ্যের জন্য বেশ কিছু লজ্জাজনক ঘটনার কারণ হয়েছিলেন। একের পর এক অসমীচিন কাজ করে গেছেন তিনি।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছাড়লেও নিজের আচরণ বদলাতে পারেননি জনসন। গত মাসে এক বক্তব্যে ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, নিকাব পড়া মুসলিম নারীদের সঙ্গে ব্যাংক ডাকাত এবং চিঠির বাক্সের সাদৃশ্য রয়েছে।  

থেরেসা মে’ ব্রেক্সিট দর-কষাকষি ব্রিটিশ সংবিধানকে সুইসাইড ভেস্ট দিয়ে ঘিরে ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।   গত বছর ম্যানচেস্টারের একটি কনসার্টে সুইসাইড ভেস্ট ব্যবহার করে আত্মঘাতী বোমা হামলায় শিশুসহ ২২ জন নিহত হয়েছিল। এ কারণে জনসনের মন্তব্য ব্রিটিশদের কাছে তিক্তই মনে হয়েছে।

ব্রিটিশ রাজনৈতিক নেতাদের জন্য এ ধরনের বর্ণবিদ্বেষী এবং উদ্দীপক মন্তব্য করা সমীচিন নয়, ট্রাম্প যেমনটা করে থাকেন। এই দুই নেতার অসততা দিনকে দিন আরও গভীর হচ্ছে। ট্রাম্প আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছেন। তাঁর প্রচারণার মূল কথা ছিল, আমেরিকাকে আবারও মহান হতে হবে। কিন্তু তাঁর শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্র কতটা মহত্বের পরিচয় দিয়েছে, এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন সবাই। তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই মহান ছিল, নতুন করে এর মহান হওয়ার কিছু নেই। অমানবিক পন্থা গ্রহণ করে মহান হওয়ার চেষ্টা চালানোর নীতিও হাস্যকরই বটে। ট্রাম্পের প্রচারণার বাণীটাকে প্রতারণা হিসেবে অভিহিত করছেন অনেকেই। ঠিক একইভাবে জনসনের ব্রেক্সিট প্রচারাভিযানেও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া হয়েছিলো। তিনি মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার ভয় দেখিয়েছিলেন। 

একটি সুস্থ গণতন্ত্র ধারণার সততা এবং সত্য মতের বিনিময়ের ওপর নির্ভর করে। ট্রাম্প এবং জনসনের নিঃসন্দেহে এ ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তাঁরা শুধু তাদের স্ত্রীদের প্রতিই অবিশ্বস্ত ছিলেন না, বরং তাঁরা জনগণের প্রতিও যথেষ্ট অবিশ্বশ্ত আচরণ করেছেন।

লেখক: সাবেক ইইউ কমিশনার

বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭