ইনসাইড আর্টিকেল

৩৫০ বছরের রহস্যময় ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 21/09/2018


Thumbnail

কুষ্টিয়ার ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস নিয়ে রয়েছে নানামত ও রহস্যময় ইতিহাস। কেউ বলেন মোঘল আমলে নির্মাণ করা হয়েছিল এটি, আবার লোকমুখে প্রচলিত, অলৌকিক উপায়ে মাটি ফুঁড়ে তৈরি হয়েছিল এই ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ। বই-পুস্তক এবং ইতিহাসের পাতাতেও এই মসজিদ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু পাওয়া যায় না। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের কাছেও এ সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই।  

কুষ্টিয়া শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া জেলার মধ্যবর্তী স্থানে ঝাউদিয়া গ্রামে অবস্থিত ইতিহাসের সাক্ষী অনিন্দ্য সুন্দর ঝাউদিয়া মসজিদ।

স্থানীয় অনেকেই বলেন, ‘বহু বছর আগে মসজিদটি অলৌকিকভাবে মাটি ফুঁড়ে উপরে উঠে আসে। সেই থেকে এই মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষজন।’

   

আবার অন্য একটি পক্ষ দাবি করেন, ‘ইরাক থেকে প্রায় ১১শ’ বছর আগে শাহ সুফি আদারি মিয়া ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া ও বাগেরহাট অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসেন। ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়ার মধ্যবর্তী ঝাউদিয়া গ্রামে তিনি বসতি স্থাপন করেন। তিনিই এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। আদারি মিয়ার মৃত্যুর পর মসজিদ সংলগ্ন এলাকাতেই তাঁকে কবর দেওয়া হয়। 

ঝাউদিয়া মসজিদের প্রবেশ মুখে লেখা আছে ‘এটির বড় পরিচয় মানুষের তৈরি এবং এটা প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে’। কিন্তু ওই সময় কে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিল সে বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরাও এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না।  

ইতিহাসবিদদের মতে মসজিদের নির্মাণ কাল বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতো হচ্ছে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। কারণ মোগল আমলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে এই মসজিদের নির্মাণশৈলীতে অনেক সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়। মোঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ নির্মিত। মোঘল আমলের অধিকাংশ স্থাপনার মতো এ মসজিদেও লাল জাফরি ইট ব্যবহৃত হয়েছে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকাল হিসাব করলে এ মসজিদের বয়স আনুমানিক ৩৫০ বছর।  

ঝাউদিয়া শাহী মসজিদে সুদৃশ্য ৫টি গম্বুজ রয়েছে। চারকোণায় আছে চারটি নান্দনিক মিনার এবং ভেতরে প্রবেশ দরজাতেও দু’টি মিনার রয়েছে। এটি অপূর্ব শৈল্পিক কারুকার্য সংবলিত একটি স্থাপনা যা সহজেই মুগ্ধ করে সকলকে।   

মসজিদের বাহিরের সৌন্দর্য রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে কিছুটা ম্লান হলেও ভিতরে চোখ ধাঁধানো নকশার তেমন কোন ক্ষতি হয় নাই। ভেতরাংশে সূক্ষ্ম কারুকাজ পারস্যের মুরাকামি নকশা (murakami design) দ্বারা প্রভাবিত। সূক্ষ্ম এই নকশা দারুণ নান্দনিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে মসজিদের ভিতরে। মসজিদের মিহরাব, দেওয়াল এবং গম্বুজের ভেতরের অংশে জ্যামিতিক নকশার সাথে ফুল ও লতাপাতার চমৎকার নকশা আঁকা আছে।

মসজিদটি আয়তাকার ও ভেতরে ৩ সারিতে একসঙ্গে প্রায় ১০০জনের নামাজ আদায় করতে পারে। আরও বেশি মানুষের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটির বাহিরে উপরের দিকে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। যার ফলে মসজিদের সৌন্দর্যের অনেকটাই ঢাকা পরে গেছে।  

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ১৯৬৯ সালে মসজিদটিকে নথিভুক্ত করেন। বর্তমানে এ মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সম্পত্তি। ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি দর্শনে প্রতিদিনই শত শত ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন ঘটে ঝাউদিয়া গ্রামে।

কুষ্টিয়া চৌড়হাস মোড় থেকে বাস অথবা সিএনজিতে করে ঝাউদিয়া বাজার যেতে হবে। ঝাউদিয়া বাজারের কালিতলা মোড় থেকে ঝাউদিয়া-মাছপাড়া রোডে ভ্যান বা অটোতে ১০ মিনিটেই পৌঁছে যেতে পারবেন ঝাউদিয়া শাহী মসজিদ প্রাঙ্গণে।


বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭