ইনসাইড পলিটিক্স

তারেকের বদলে জমির উদ্দিন সরকার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 28/09/2018


Thumbnail

দেশি- বিদেশি চাপ এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য আন্দোলনের ব্যাপারে তারেক জিয়ার উপস্থিতি নিয়ে নানা আপত্তির মুখে অবশেষে তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির নেতৃত্ব ছাড়তে রাজি হয়েছেন বলে জানা গেছে।

গতকাল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, `ঐক্যের বৃহত্তর স্বার্থে তারেক জিয়া সাময়িকভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব ছাড়তে রাজি আছেন। তিনি জামাতকে এই যে ঐক্য হচ্ছে সে ব্যাপারে স্পষ্ট করতে বলেন।`   

তবে এই জাতীয় ঐক্যে যে বিএনপি যাবে, তা ২০ দলের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। ২০ দল বিলুপ্ত হওয়ারও সম্ভাবনা নেই এমনটা নিশ্চিত করেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, জামাতের ব্যাপারে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্টসহ আন্তর্জাতিক মহলের আপত্তি। তার চেয়েও বেশি আপত্তি হলো তারেক জিয়ার নেতৃত্বের ব্যাপারে। বিশেষ করে যে জাতীয় ঐক্যে হচ্ছে সে ঐক্যের অন্যতম অঙ্গিকার হলো সুশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ গঠন, যদি তারা ক্ষমতায় আসে।  বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী মামলায় দন্ডিত হয়ে বিদেশে পালিয়ে আছেন। তার দেশে আসার সম্ভাবনা নেই। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহল বিএনপির স্পষ্ট মনোভাব জানতে চেয়েছিল। এ নিয়ে তারেকের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের দফায় দফায় আলাপ হয়। একসময়ে তারেক জিয়া সম্মত হন। তিনি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়বেন। দলের সবকিছু দেখভাল করবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি দলের নেতৃত্বে থাকবেন না। দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্য থেকে একজনকে নেতৃত্ব দেয়া হবে। তবে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নেতৃত্ব দিতে আগ্রহী নন। এমন একজনকে তারেক নেতৃত্ব (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) দিতে চান যিনি তার আজ্ঞাবহ হবেন, তার সমস্ত কথা শুনবেন।

আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরি ইতিমধ্যেই লন্ডনে পৌছেছেন, তার সঙ্গে আলাপ করেই তারেক চুরান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন এমন খবর বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে নিশ্চিত করেছেন। তবে সংশ্লিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে, তারেক জিয়ার সবচেয়ে পছন্দের ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। কারণ ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার তারেক জিয়ার কথার বাইরে যাবেন না। এমন প্রমাণ তিনি আগেও দিয়েছেন। বিশেষ করে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি থেকে সরানোর পর যে রাজনৈতিক টানাপোড়ন হয়, সে সময় ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে জমির উদ্দিন সরকার ছিলেন। বিএনপি মনে করে, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে রাষ্ট্রপতি করা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। তার বদলে জমির উদ্দিন সরকারের মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রপতি হতেন, তাহলে বিএনপির এমন ওয়ান ইলেভেনের মতো দু:সময়ের মুখোমুখি হতে হতো না। সেই বিবেচনা থেকেই জমির উদ্দিন সরকারকে তারা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে সামনে রাখতে চায়।

যেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হোক না কেন নির্বাচনের মনোনয়ন ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদিতে চুরান্ত সিদ্ধান্ত নেপথ্যে তারেক জিয়ার মতেই হবে। তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়বে যাতে ঐক্য প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপির গ্রহনযোগ্যতা তৈরী হয়। ভারত বিএনপির কাছে যে তিনটি শর্ত দিয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো তারেক জিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। তাহলেই অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনে যেন বিএনপি অংশগ্রহন করতে পারে, সে ব্যাপারে তারা সরকারকে অনুরোধ করবে। সরকারের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবে। অবশেষে বিএনপি সকল কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্তে যাচ্ছে।

তারেকের পদত্যাগের ব্যাপারে গতকালের বৈঠকে যে আলোচনা হয়েছে। আগামী ২৯ তারিখের পরে যে কোন দিন এ ব্যাপারে বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসতে পারে।

উল্লেখ্য, খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারী গ্রেপ্তার হয়। তখন তারেক জিয়াকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আমির খসরু মাহামুদ চৌধুরি, আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং হুমায়ূন কবির ভারতে গিয়েছিলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সব জায়গা থেকেই একটাই প্রস্তাব আসছে,আদালত কর্তৃক দণ্ডিত দুর্নীতিবাজ দলের প্রধান থাকতে পারে না। সেই দলের প্রতি সহানুভুতি দেখানো কিংবা তাদের পক্ষে বক্তব্য রাখা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য একটি কঠিন বিষয়। কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে কোন রাষ্ট্রই দুর্নীতিকে সমর্থন করে না। দুর্নীতি ছাড়া তারেকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডেরও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭