ইনসাইড থট

আমাদের সুশীল, প্রেমপত্র ও ভূপেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 30/09/2018


Thumbnail

বেশ কয়েকদিন ধরেই অস্থিরতা কাজ করছে ভিতরে ভিতরে। আমাদের মনের পিছনের বাগানে কে যেন শঙ্কার ডঙ্কা বাজাচ্ছে, বলছে সাবধান। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর সুশীল বা বুদ্ধিজীবীর কর্মকাণ্ড এই শঙ্কার আগুনে ঘি ঢেলেছে বার বার, এখনো তার ব্যতিক্রম নয়। সুশীল বা বুদ্ধিজীবীর একটা অংশের কর্মকাণ্ড আসলেই আমাদের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিচ্ছে ইদানীং। এই শ্রেণির কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা বলার আগে তাঁরা কীভাবে সুশীল বা বুদ্ধিজীবী হলেন তা পিছনে ফিরে দেখে নিতে পারি আমরা।        

আমরা অনেকেই জানি যে, ১৫/২০ বছর আগেও আমাদের দেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তেমন একটা ছিল না। তখনো শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যের এই রমরমা ভাব আসেনি। তাই সবাইকেই সরকারি বা সরকারির ভর্তুকি দেওয়া স্কুল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা নিতে হতো। এটা সবার জানা যে, দেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষ করের টাকার ভর্তুকি দিয়ে চলে পাবলিক স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। সেই শিক্ষালয় থেকে শিক্ষা নিয়ে যারা বড় হয়েছেন, এখন বুদ্ধিজীবী তাঁরা কিন্তু এ যুগের ছেলে-মেয়েদের মতো শতভাগ বাপের গ্যাঁটের টাকা দিয়ে পড়েননি। শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি গরিবের দেওয়া পরোক্ষ করের টাকার ভর্তুকি দেওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরা ‘রাখাল বালক’ অধ্যাপক ডক্টর আতিউর রহমানের মতোই পরোক্ষ ভাবে ‘বাজারে গামছা পেতে টাকা সাহায্য নিয়ে’ লেখাপড়া করেছেন, পরে সুশীল বা বুদ্ধিজীবীর হয়ে গেছেন। কিন্তু অধিকাংশই ‘রাখাল বালক’এর মতো দেশের তথা দেশের মানুষের কাছে তাঁদের ঋণ স্বীকার করেন না, বরং দাম্ভিকতা দেখান, পারলে ঘেন্না করেন তাঁদের অথবা তাঁদের শোষণ করে পুঁজি গঠন করেন।                                 

এই শ্রেণীর সুশীল বা বুদ্ধিজীবীরা টাকা, ক্ষমতা বা খ্যাতির প্রতি এতই দুর্বল যে, নিজের ‘মায়ের  সম্মান বিক্রি করে’ বিদেশ যান। সেখানে থাকা তাঁদের মতো নষ্টদের কাছ থেকে ভিক্ষা করে টাকা আনেন, নিজে খান, নানা বাহানায় চুরি করেন। যাঁরা এই টাকা দেন তাঁদের অধিকাংশই জানেন এটা, তবে অপেক্ষায় থাকেন এসব নষ্টদের তাঁদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারবেন যখন, তখন সুদে মূলে উসুল করে নেবেন সব। এই ধরুন মানবাধিকার সংগঠনগুলো উন্নত দেশগুলোতে গিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশে কোনো মানবাধিকার নেই। কিছু সাহায্য করলে তাঁরা এটা নিয়ে কাজ করতে পারেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সহায়ক হবেন। যে দেশ তাঁর নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হিমশিম খায় সেই দেশে মানবাধিকার নিয়ে হাস্যকর যুক্তির আড়ালে অনৈতিক টাকা আয়ের ধান্দা করেন তাঁরা। মানবাধিকারের নামে তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের দণ্ড মওকুফের দাবি করে কিংবা খুন, হত্যা, সন্ত্রাসে লিপ্তদের বিরুদ্ধে নেওয়া সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে। দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না বলে ইলেকশন মনিটরিংয়ের জন্য বিদেশ থেকে টাকা আনেন। কেন বিদেশিরা এসব খাতে টাকা দেন তা উনারা জানেন, কাদের টাকা তাঁদের হাত ঘুরে আমাদের এই শ্রেণীর সুশীল বা বুদ্ধিজীবীদের হাতে আসে তাও তাঁরা জানেন, কিন্তু তাঁরা বিবেককে বন্ধক দিয়েছেন। এরাই তাঁরা, যারা বিদেশের মাটিতে নিজেদের যৌন ক্ষুধা মিটানোর জন্য বিয়ে করে স্বার্থ হাসিল করেন, সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু বড় সুযোগ পেয়ে স্ত্রী সন্তানকে বিদেশের মাটিতেই ফেলে আসেন বাহানা করে। খোঁজও নেন না সেই স্ত্রী সন্তান কেমন আছে, কী করে চলে তাঁদের জীবন । আবার দেশে এসে তাঁরাই এনজিও খোলেন যার অন্যতম প্রধান কাজ পারিবারিক শান্তি নিশ্চিত করা। হায়রে সুশীল-বুদ্ধিজীবী, হায়রে উনাদের মূল্যবোধ, নৈতিকতা। তাঁদের কাছে পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধের কোনো দাম নেই। টাকা, ক্ষমতা বা খ্যাতি তাঁদের কাছে সব কিছু। স্বল্প আলোর সমীকরণে তাঁরা সকাল আর সন্ধ্যাকে একাকার করে দেখিয়ে মানুষকে করেন বিভ্রান্ত।        

বাংলাদেশের উন্নয়নের বর্তমান মডেলকে প্রশংসা করে না এমন দেশ গোটা বিশ্বে এখন আর নেই বললেই চলে। আমাদের জনম শত্রু বলে খ্যাত খোদ পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবীগণ তাঁদের বর্তমান সরকারের কাছে দাবি তুলেছেন যে, তাঁদেরকে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ বানিয়ে দিলেই তাঁরা খুশি, এর বেশি তাঁদের চাহিদা নেই। এমন ভিডিও সবাই দেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কয়েকজন তথাকথিত সুশীল বা বুদ্ধিজীবীদের কী একটাও এমন বক্তব্য বা ভিডিও ক্লিপ কেউ দেখাতে পারবেন যে তাঁরা দেশের একটা বিশেষ খাতের উন্নয়নের প্রশংসা করেছে? আমাদের দেশের কী সব খারাপ! কিছুই কী নেই ভালো! তাঁরা এটা দেখবেন না কারণ তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের তথাকথিত স্বপক্ষের শক্তি কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীদের / মানবতাবিরোধীদের টাকায় জীবিকা নির্বাহ করেন, লবিস্ট হয়ে আয় করা টাকায়। এত দেশ প্রেম, এত চেতনা নিয়ে তাঁদের ঘুমের সমস্যা হয় কি না, তা নিয়ে কেউ না কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন।                          

একটি পোর্টালে তিন মহারথীর ব্যর্থ পরিকল্পনার কথা সবিস্তারে উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, ‘অক্টোবরের মধ্যে দেশে আন্দোলনের নামে একটি অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। যাতে করে, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব না হয়। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন না হলেও সংসদ ভেঙে যাবে। সৃষ্টি হবে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা। এই শূন্যতায় অনির্বাচিত সরকারকে দিয়ে সরকার গঠন করা হবে। রাস্তার আন্দোলনের জন্যই ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় নিতে আগ্রহী ছিলেন। আর আন্দোলনে ‘বারুদ’ যোগানের জন্য দেশের শীর্ষস্থানীয় দু’টি পত্রিকাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আশা করা হয়েছিল, বিচারপতি সিনহার বই ভারতসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিস্ফোরণমূলক পরিস্থিতি তৈরি করবে। সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ সময়েই ‘প্রভাবশালী’ প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে। বাইরে রাজনৈতিক আন্দোলন আর ভেতরে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলই ছিল নীল নকশার আসল উদ্দেশ্য।’ এসব দেখলে মানসিক চাপ আর বেড়ে যায়, অস্থির লাগে, হাল্কা হতে ইচ্ছে করে।     

আর একটা খবরে দেখলাম, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের আরলাই সৈকতে একটি চিঠি ভরা গুগলি শামুক ধরা বোতল পাওয়া গেছে। বোতলের মুখ খুলে দেখা গেছে যে, এক প্রেমিক নাবিক তাঁর প্রেমিকার উদ্দেশ্যে চীনা ম্যান্ডারিন ভাষায় একটা চিঠি লিখে বোতলে ভরে পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে। সেখানে লেখা আছে যে, `আমার হৃদয়ের গভীর থেকে আমার ভালোবাসাকে খুব অনুভব করছি। বাগদানের পরেই আমি সমুদ্রে চলে এসেছি। কিন্তু তার জন্য আমার খুবই খারাপ লাগছে। এই বোতলটি সেই ভালোবাসার একপ্রকার প্রকাশ।` আহারে কত প্রত্যাশা, কত ব্যাকুলতায় ভরা এই চিঠি। দেখে মনে পড়লো ভূপেন হাজারিকার সেই বিখ্যাত গানের কথা। আমার সুযোগ থাকলে আমিও বঙ্গবন্ধুকে তাঁর এককালের স্নেহভাজনদের বর্তমান আচরণ নিয়ে ভূপেন হাজারিকার গানের প্যারডি করাতাম যে গান টি সেটি হচ্ছে:  

শরৎ বাবু খলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে

তোমার গফুর মহেশ এখন কোথায় কেমন আছে

তুমি জান না-

হারিয়ে গেছে কোথায় কখন তোমার আমিনা

শরৎ বাবু এ চিঠি পাবে কি না জানি না, আমি

এ চিঠি পাবে কি না জানি না ............।

 

লেখক: উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট

তথ্যঋণ: বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, সজীব ওয়াজেদ জয়, বিবিসি, অন্যান্য   

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭