ইনসাইড আর্টিকেল

ফিরে দেখাঃ বিএনপি-জামাতের অক্টোবর তাণ্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 01/10/2018


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে ২০০১ সালে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। এর পরপরই যে কোনো উপায়ে নির্বাচনে জয়লাভের জন্য ষড়যন্ত্র শুরু করে বিএনপি-জামাত ও প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা তাদের দোসররা। এমন অবস্থায় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই প্রহসনের নির্বাচনে সীমাহীন ভোট কারচুপির মাধ্যমে জয়লাভ করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামাত জোট সরকার। পরাজিত হয় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট বাড়লেও সংসদে আসন সংখ্যা কমে যায়। আর বিএনপি-জামাত জোটের ভোট কমলেও অস্বাভাবিকভাবে তারা জয়লাভ করে ২২০টি আসনে।

বিএনপি-জামাত জোট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য টাকার বিনিময়ে ভোট ক্রয়, ভোটকেন্দ্র দখল, হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রকৃত ভোটারকে ভোটদানে বিরত রাখার মতো ন্যাক্কারজনক সব কর্মকাণ্ড করে। কিন্তু যেভাবেই হোক, নির্বাচনে ফলাফলকে নিজেদের স্বপক্ষে আনতে সক্ষম হয় তারা। আমরা সবাই জানি, কোনো দল নির্বাচনে বিজয়ী হলে তাদের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হয় আনন্দ-উৎসব করা, নির্বাচনে জয়লাভকারী দলটি সাধারণত সহনশীল হয়। কিন্তু ২০০১ সালে নির্বাচনে জিতে বিএনপি করলো ঠিক তার উল্টোটা। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা শুরু হতেই শুরু হলো বিএনপি-জামাত জোট সন্ত্রাসীদের তাণ্ডব। সরকার গঠনের আভাস পেয়েই বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করলো। শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই নয়, দেশের সাধারণ নিরীহ জনগণও তাদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পেল না। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনে তারা সকল সীমা অতিক্রম করলো। নারী নির্যাতনেও বর্বরতার সকল সীমা অতিক্রম করে বিএনপি।

২০০১ সালের ১ অক্টোবরের সাধারণ নির্বাচনের পর আগলঝরা, ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলা, গোপালগঞ্জসহ দেশের অনেক স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ প্রতিপক্ষের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালানো হয়। এই নির্যাতন-জুলুমের মহোৎসব চলে ১ অক্টোবর থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। আর এ সকল অত্যাচার-নির্যাতনের বিষয়ে নির্দেশনা আসে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক জিয়ার অফিস হাওয়া ভবন থেকে। স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় নির্যাতন চলতে থাকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাধারণ জনগণ ও সংখ্যালঘুদের ওপর।

বিএনপি-জামাতের নির্যাতনের তীব্রতা কেমন ছিল তা ভাবলে যে কোনো সংবেদনশীল মানুষই শিউরে উঠবে। বাবা-ভাই আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়ায় রাজশাহীর মহিমাকে নিপীড়ন করেছিল বিএনপির সন্ত্রাসীরা। এই লজ্জা-অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে সে। উল্লাপাড়ার পূর্ণিমার ওপর নিপীড়ন সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ঢাকার ফাহিমা, পঙ্গু শেফালি রানী, শিশু তৃষা কেউই রেহাই পায়নি বিএনপি সন্ত্রাসীদের বর্বর তাণ্ডব থেকে।

২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর বিএনপি-জামাত জোটের যে সন্ত্রাসের রাজনীতির সূচণা করেছিল তা পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে চলতে থাকে। এই সময়কালে বিএনপি-জামায়াত জোটসাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া ও সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করে। এই সময়টাতেই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য ১৮ বারের বেশি চেষ্টা চালানো হয়। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করার মতো ঘটনাও ঘটেছিল বিএনপি-জামাতের সেই দুঃশাসনের কালেই।

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিএনপি-জামাত জোটের সেই শাসনামল একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে আছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর সীমাহীন নিপীড়ন-নির্যাতন, নারী ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে ফেলার সেই কালকে সময়ের ব্যবধানে হয়তো অনেকেই ভুলে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, এমনকি আমাদের নিজেদের স্বার্থেও ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের পরের দিনগুলো আমাদের পেছন ফিরে দেখতে হবে। বারবার মনে করতে হবে, বিএনপি-জামাত জোটের দুঃশাসনের স্মৃতিগুলো।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ   



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭