ইনসাইড থট

ভালো নির্বাচনের প্রথম কাজ সবার অংশগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/10/2018


Thumbnail

নির্বাচন যেন এক ধরনের যুদ্ধ। তা সে পদে নির্বাচনই হোক। তো দেশে এখন সেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ যে নির্বাচন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হয়, পাঁচ বছরের জন্য সেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

বেশি দিন বাকি নেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের। আর নির্বাচন কমিশন বলেছে, ডিসেম্বরেই নির্বাচন হবে। সাংবিধানিকভাবে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। তবে সব হিসেব মিলিয়ে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই যে নির্বাচন হচ্ছে তা এখন স্পষ্ট।

সব দলই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কেউ কেউ ‘নির্বাচনী ট্রেনযাত্রা’র মাধ্যমে প্রচারণার কাজও আরম্ভ করে দিয়েছে। নান ধরনের জোট গঠন, প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে এই শেষ সময়ে এসে নতুন করে শর্ত আরোপ করছে।

নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের আয়োজন করবে, স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলো বিধি মেনে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে—তারপর যেই দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে তারা সরকার গঠন করবে, পাঁচ বছরের জন্য দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট পাবে, এটাই গণতান্ত্রিক নিয়ম। আমাদের সংবিধানেও এমনটাই বলা আছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা বা না-করা কোনো রাজনৈতিক দলের নিজস্ব ব্যাপার। এজন্য নির্বাচন কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেমে থাকার কথা নয়। কেউ যদি ভাত খেতে না চায়, বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে, তাকে জোর করে ভাত খাওয়ানো যায় না। কারণ শর্ত মানার বাধ্যবাধকতা কারুর নেই। যে যার খিদের গরজেই ভাত খায়। কেউ যদি তা না করে তাহলে বুঝতে হবে, তার ভাতের খিদে নেই। কিংবা অন্য কোনো মতলব আছে।

আর দল বিশেষের নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকা না-থাকাটারও তেমন কোনো আলাদা মূল্য নেই। কারণ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলেরই নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন কালীন সরকারের ওপর আস্থা আছে। কেউ যদি অনাস্থা দেখায়, সেটা এখন আর ধোপে টিকবে বলে মনে হয় না। তাছাড়া নির্বাচন কমিশনের কারো কারো ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি থাকতেই পারে। থাকাটা অস্বাভাবিকও নয়। কেননা কোনো মানুষই সমালোচনার ঊর্ধ্বে নন। দলের লোক হয়েও কেউ দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আবার ‘দল নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিও আকস্মিক বিশেষ কোনো দলের জন্য জান কোরবানে প্রস্তুত হতে পারেন।

মূল কথা হলো, ব্যক্তির নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা পদ ও দায়িত্বের প্রতি সত্য ও দৃঢ় থাকার অঙ্গীকার। যদি মেরুদণ্ড সোজা করে কেউ চলতে চান, তাকে নোয়ানো সহজ কাজ নয়। আর কারো মেরুদণ্ড সোজা না ক্ষমতাসীনদের প্রতি নোয়ানো, তা চেহারা দেখে, অতীতের ছিটেফোঁটা ভূমিকা দেখে হলপ করে বলে দেওয়া যায় না। এর জন্য পরীক্ষা প্রয়োজন। কর্মের মধ্যদিয়েই তা প্রমাণিত হবে।
আর বিতর্কিত করতে চাইলে যে কাউকেই বিতর্কিত করা যায়। কারো নামে একটা অভিযোগ তুলে কিংবা কোনো একটা কলঙ্ক রটিয়ে দিয়ে বলা যায় যে, লোকটি বিতর্কিত। এটা কোনো যৌক্তিক আচরণ হতে পারে না। বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়, নির্বাচন কমিশনকে অবশ্যই সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন ও সহযোগিতা করা উচিত। কমিশনকে তাদের আরাধ্য কাজ যথাযথভাবে করার সুযোগ সবাই মিলে করে দিতে হবে।

সকলেরই মনে রাখা দরকার যে, নির্বাচন কমিশন যেনতেন প্রতিষ্ঠান নয়। এ দেশের রাষ্ট্র কাঠামোয় তার ভূমিকা আক্ষরিক ভাবেই বিশিষ্ট। নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটি কেবল গুরুত্বপূর্ণই নয়, অনেক সংবেদনশীলও বটে। নির্বাচন কমিশন সবসময় বিরোধীদের টার্গেট। হারলে তো কথাই নেই। লোকসমক্ষে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের কারসাজিতে হারতে হলো। পরাজয়ের লজ্জা থেকে রেহাই পাওয়ার এমন সহজ রাস্তা আর কোথায়? যেন জেতা গেম জোচ্চুরি করে হারাল রেফারি।

পৃথিবীর খুব কম দেশেই এটা দেখা যায়। আসলে সমস্যা মানসিকতায়। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের আইনি ক্ষমতা ভারতের নির্বাচন কমিশনের চেয়ে বেশি হলেও তাদের মতো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ প্রাতিষ্ঠানিক সে সক্ষমতা অমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন সহ কোন প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করা যায়নি।

আর নির্বাচনে আমরা কেবল জিততেই চাই। কিন্তু নির্বাচনে জয়-পরাজয় থাকবেই। আর কেউ যদি শেষ পর্যন্ত কোনো কারণে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না- করে তাহলে তাকে নির্বাচনে যেতে বাধ্য করা যাবে না। তাই নির্বাচন প্রথমত সকলকে অংশ নিয়ে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বনিন্দ্বিতাপূর্ণ করা না গেলে কোনোদিনই অবাধ নির্বাচন আশা করা ঠিক হবে না।


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭