নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: 03/10/2018
আমাদের প্রধানমন্ত্রী উদার, স্পষ্টবাদী এবং সাহসী। যা বিশ্বাস করেন তা রাখ ঢাক না রেখেই বলে ফেলেন। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে, তাই যেকোনো গণমাধ্যম কর্মীর জন্য তথ্য আহরণের এক উর্বর শস্যক্ষেতের মতোই। কিন্তু ইদানীং প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন দেখলেই আমি উৎকণ্ঠিত হই, লজ্জায় কুঁকড়ে থাকি। প্রতি সংবাদ সম্মেলনে আশঙ্কায় থাকি যে, আজ এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকতার কোনো লজ্জা দেখবো। চাটুকারিতা, তৈলমর্দন আর নির্লজ্জ মোসাহেবির প্রতিযোগিতায় কোন অগ্রজ সহকর্মীকে বিজয়ী ঘোষণা করবো।
আজ সংবাদ সম্মেলনের সূচনাটি ভালোই হয়েছিল তৌফিক ইমরোজ খালেদীর প্রশ্ন দুইটি ছিল সাম্প্রতিক সময়ের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে ঠিক-ঠাক মতোই এগোচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে জাতিসংঘে পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রশ্ন করা, তাঁকে সম্মান জানানো-এসব সাংবাদিকতার রীতি বিরুদ্ধ নয় এবং এটাই শিষ্টাচার সম্মত।
মনে হচ্ছিল, আজ বোধহয় আর লজ্জায় পরব না। সেই আশায় যেই বুক বেধেছি, অমনি ছোঁ মেরে মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন শাইখ সিরাজ। যেমন করে কদিন আগে তিনি, স্বাধীনতা পদক ছিনতাই করেছিলেন ঠিক তেমন ভাবেই মাইক্রোফোন তাঁর দখলে নিলেন। নিয়েই শাইখ সিরাজ শুরু করলেন, অপ্রাসাঙ্গিক আলাপ। চ্যানেল আইয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর গল্প করলেন। এই ধৃষ্টতা তিনি কোথায় পান জানি না। দেশের প্রধান নির্বাহীকে একটি চ্যানেলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর খবর জানানোর স্থান কি এই সংবাদ সম্মেলন? সবচেয়ে বড় কথা তিনি সাংবাদিকই নন। কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান করা এবং তদবির করে পুরস্কার জেতাই তাঁর একমাত্র কাজ। ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতায় এলে, তিনি ছিলেন তারেক জিয়ার বন্দনায় মুখর। শাইখ সিরাজ যে, সংবাদ সম্মেলনের পেশাদারিত্ব আর তথ্য সংগ্রহের উৎসবের সুর নষ্ট করলেন, সেই সুর আর ফিরে এলো না। এরপর সংবাদ সম্মেলন চলে গেলো মালিক-সম্পাদকের দখলে। ৭১ টিভির ‘ব্যবস্থাপনা পরিচালক’ মোজ্জাম্মেল বাবু সংবাদ সম্মেলনের শেষ সম্ভ্রমটাও উপড়ে ফেললেন। প্রধানমন্ত্রীকে ‘নেত্রী’ বলে সম্মোধন করলেন। মোজাম্মেল বাবু প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হয়ে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। বললেন, এবার জাতিসংঘে নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প আর শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের কোনো কাজ ছিল না। কি তেল। একদম অপরিশোধিত, যাকে বলা যায় ‘র’। এরপর মাইক্রোফোন নিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সাবেক এমডি এখন একটি ‘দৈনিকের সম্পাদক’। তিনি তো প্রশ্ন করলেন না, যেন আওয়ামী লীগের কর্মী সভায় বক্তব্য রাখলেন।
প্রতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রাণবন্ত সংবাদ সম্মেলন নষ্ট করেন কিছু চাটুকার মালিক- সম্পাদক। এরা কেন আসেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি বিনীত অনুরোধ।
১. এই প্রয়োজনীয় সংবাদ সম্মেলনে অপ্রয়োজনীয় চাটুকার, মালিক-সম্পাদকদের ডাকবেন না প্লিজ। প্রয়োজনে এদের জন্য আলাদা বৈঠকের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।
২. সংবাদ সম্মেলনে দেখলাম একপাশ ভরা আওয়ামী লীগের নেতা এবং পাতি নেতা। এই নেতাদের সংবাদ সম্মেলনে কাজ কি? তাঁরা দেখলাম কথায় কথায় হাত তালিও দেয়। এটা কি দলীয় সমাবেশ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এদের বাদ দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করলে, এরকম সংবাদ সম্মেলনের ভাবগাম্ভীর্য বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হলো এর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। আমি জানি না, বিশ্বে এখন এরকম কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান আছেন, যিনি এভাবে সংবাদ সম্মেলনে সব প্রশ্নকে গ্রহণ করেন। তাই কিছু চাটুকারের হাতে এই সৌন্দর্যকে আমরা কেন নষ্ট হতে দেব? কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই চাটুকারদের রুখবে কে?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭